ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

টংক শহীদ দিবস ও শহীদ হাজংমাতার মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি 

সুজন হাজং

প্রকাশিত : ০৫:০৮ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২১ রবিবার

হাজং ভাষায় রাসিমনি বলেছিলেন, "ময় একরা তিমাদ, ময় একরা তিমাদ হয়ে আরেকরা তিমাদলা মান বাঁচাব, মুরিব লাগিলে মুরিব"। অর্থাৎ আমি একজন নারী, একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করব, মরতে হয় মরবো।

দেশভাগের আগে রাসিমনি ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার সময় একথা বলেছিলেন। তখন ছিল টংক আন্দোলন। টংক মানে ধান কড়ারি খাজনা। জমিতে ফসল হোক বা না হোক জমিদারকে নির্ধারিত খাজনা দিতেই হতো। এটি একটি শোষণমূলক প্রথা ছিল। এই অন্যায় প্রথার বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন রাশিমনি হাজং। এই প্রথার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে টংক আন্দোলন। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাসিমনি হাজং।

১৯৪৬ সালে ৩১ জানুয়ারি তৎকালীন ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার বাহিনীর সৈনিকেরা জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন কুমুদিনী হাজংকে। সেদিন রাসিমনি তাদের পথ রুদ্ধ করে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। টংক আন্দোলনের প্রথম শহীদ রাসিমনি। নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক রাসিমনি একজন নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় জীবন দিয়েছিলেন বহেরাতুলীর মাটিতে। যার জন্য মহিয়সী নারী রাসিমনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সেই কিংবদন্তি নারীর নাম কুমুদিনী হাজং। কুমুদিনী হাজং এখনো জীবিত আছেন। রাসিমনি স্মৃতিসৌধের আধা কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে একটি উঁচু পাহাড়ের টিলায় কুমুদিনী হাজংয়ের বাড়ি।

হাজংরা রাসিমনিকে তাদের জনগোষ্ঠীর মাতা হিসেবে মনে করেন। টংক আন্দোলনে তাঁর অসীম সাহসিকতা এবং বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্বের জন্য হাজংরা তাঁকে একজন বীরাঙ্গনার মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। রাসিমনিকে শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে মনে করেন। হাজংদের জাতীয় জীবনে রাসিমনি একজন মহিয়সী নারী।

আজ ৩১ জানুয়ারী হাজংমাতা রাসিমনির ৭৫তম মৃত্যুবার্ষিকী এবং টংক শহীদ দিবস। আদিবাসী কৃষকমুক্তির আন্দোলনের রূপদানকারী হাজংদের কাছে এই দিনটি ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ। টংক প্রথা বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী কৃষকমাতা শহীদ রাসিমনি হাজং ও সহযোদ্ধা সুরেন্দ্র হাজংয়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। 

লেখক: সুজন হাজং, সদস্য, বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

আরকে//