‘দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:০৭ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২১ রবিবার | আপডেট: ০৬:০৯ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২১ রবিবার
জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা বলেছেন, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসাসহ জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশকে একটি উন্নত কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন।
আজ ছিল রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার ৯ম দিন।
গত ১৮ জানুয়ারি বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন রাষ্ট্রপতি সংসদে ভাষণ দেন। গত ১৯ জানুয়ারি চিফ হুইপ নুর- ই- আলম চৌধুরী রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে সরকারি দলের সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এ প্রস্তাব সমর্থন করেন।
আজ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা উত্তর টেবিলে উপস্থাপন ও ৭১ বিধিতে নোটিশের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এর পর রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা শুরু হয়।
আজ আলোচনায় অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রবাসি কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী এমরান আহমেদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে, এম খালিদ, সরকারি দলের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মো. আবু জাহির, বেগম খোদেজা নাসরিন আক্তার, বাসন্তী চাকমা, বেগম লুৎফুন্নেসা খানম, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, শামীমা আক্তার খানম, হাবিবা রহমান খান, বেগম জাকিয়া পারভিন খানম, বেগম ফেরদৌসি ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, জাতীয় পার্টির মাসুদ উদ্দীন চৌধুরী, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এবং বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ, দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশে বৈশ্বিক মহামারি করোনা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। করোনাকালীন নানা প্রণোদনা এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাসহ ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে। এসব ব্যবস্থা নেয়াসহ জনগণের খাদ্যের নিশ্চয়তাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এ সময়ও ১ কোটি ২৫ লাখ পরিবারের বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তাসহ বিভিন্ন ভাতা পৌঁছে দিয়েছেন। এসব মানবিক ও কল্যাণমূলক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার দেশকে ধাপে ধাপে একটি উন্নত মানবিক কল্যাণ রাষ্ট্রে উন্নীত করছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেখানে করোনা মহামারির সংকটে আর্থ- সামাজিকভাবে পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফলভাবে এ মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার ১ লাখ ২১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়ে করোনা সংকটের মধ্যেও সাধারণ মানুষের জীবন মান এবং আর্থ- সামাজিক ব্যবস্থা সচল রেখেছেন। যার ফলে বিশ্বে প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে বাংলাদেশ তৃতীয় এবং উপমহাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এ সময়ে পৃথিবীর সব দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। পৃথিবীর মাত্র ২০টি দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি পজিটিভ। আর তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা তৃতীয়।
তিনি বলেন, যেই দেশে মানুষের ঘনত্ব সর্বোচ্চ, কৃষি জমির পরিমাণও সর্বনিম্ন। যে দেশে ঝড়, বন্যা, জলবায়ু পরিবর্তন নিত্যসঙ্গী করোনা মহামারির মধ্যে পৃথিবীতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এ অবস্থান বিশাল অর্জন। প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে গায়ানা এবং সাউথ সুদান। এ দু’টি দেশের লোকসংখ্যা কম এবং অর্থনীতির আকারও ছোট। সেদিক বিবেচনায় আনলে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এক নম্বরে রয়েছে।
আশপাশের দেশের সাথে তুলনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি মাইনাস ১০, পাকিস্তানে মাইনাস দশমিক ৩৮, শ্রীলংকা মাইনাস ৪ দশমিক ৫৫, ভুটানে প্লাস দশমিক ৫৭, নেপাল দশমিক ০২, আফগানিস্তান মাইনাস ৫। অর্থাৎ আশপাশের সকল দেশে মাইনাস এবং কোন কোন দেশ প্রায় একই জায়গায় রয়েছে। বাংলাদেশ সেখানে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, আমেরিকার বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গের মতে করোনা মহামারি মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এ উপমহাদেশে তৃতীয় এবং পুরো পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ২০তম।
মন্ত্রী বলেন, তারপর বিএনপি এবং তার মিত্ররা এ সাফল্য স্বীকার করতে না চাইলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, একসময় কৃষি নির্ভর দেশ হিসেবে আমরা ধনী ছিলাম। যখন পৃথিবীর অর্থ ব্যবস্থা শিল্প নির্ভর হয়ে গেল। আমাদের থেকে যখন কাঁচামাল নিয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলো চড়া দামে শিল্প পণ্য আবার আমাদের কাছে বিক্রি করা শুরু করল তখন আমরা দরিদ্র হয়ে গেলাম। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ দৃশ্যপট আবার উল্টে দিতে চাই। আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ আবার উন্নত দেশে রূপান্তরিত হব, আমরা ধনী দেশে রূপান্তরিত হব।
তিনি বলেন, আমরা শুধু বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে ধনী হব তা নয়। আমরা আত্মিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করব। যে প্রজন্ম শুধু বাংলাদেশকে উন্নয়ন করবে তা নয় সেই প্রজন্ম পৃথিবীকে পথ দেখাবে।
মন্ত্রী বলেন, এই করোনা মহামারির মধ্যে অনেকে বড় বড় কথা বলেন। অনেকে নয়াপল্টনে অফিসে বসে সংবাদ সম্মেলন করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো কোন রাজনৈতিক দল এই করোনার সংকটের মধ্যে মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। জনগণের পাশে দাঁড়ানোর কারণে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। কয়েকজন সংসদ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রায় ১ হাজারের কাছাকাছি নেতা-কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া অনেক সংসদ সদস্যসহ মন্ত্রিসভার এক তৃতীংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা সুস্থ্য হয়ে আবার কাজে নেমে পড়েছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণকে সংকটের সময়ও আশান্বিত করেছেন। দেশ পরিচালনায় আশান্বিত করেছেন, শুধু তাই না সেই আলোয় দেশকে উদ্ভাসিত করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে গ্রামের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতির ফলে এখন আর গ্রামে আর কুড়ে ঘর খুঁজে পাওয়া যায় না। কবিতায় কুড়ে ঘর আছে। বাস্তবে সেগুলো এখন আধাপাকা ঘরে রূপান্তরিত হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত একটি দেশ ছিল। ২০২১ সাল আসার আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তিরত হবে। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্যান্য সংসদ সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনগণের সংবিধানে উল্লেখিত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এ পাঁচটি মৌলিক অধিকারও নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে মুজিববর্ষে দেশের প্রায় ৯ লাখ গৃহহীনকে গৃহ প্রদান করা হচ্ছে। এরমধ্যে ৭০ হাজার গৃহহীন পরিবারকে ইতোমধ্যে গৃহ দেয়া হয়েছে। তারা বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন বাস্তব। এর সুফল দেশের জনগণ ভোগ করছে। দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিনত হচ্ছে।
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে তারা বলেন, এ মহামারিতে যখন গোটা বিশ্ব পর্যদুস্ত তখন প্রধামন্ত্রীর বলিষ্ট ও দক্ষ নেতৃত্ব এবং সময়োপযোগি পদক্ষেপের ফলে দেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
সংসদ সদস্যরা বলেন, এসব পদক্ষেপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় প্রশংসিত হয়েছে। এ জন্য বিশ্বে ৮ জন সফল নারী নেতৃত্বের তালিকায় প্রধানমন্ত্রীর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া আমেরিকার সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্ডের সমীক্ষায় বিশ্বের ১৮৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ করোনাকালের সাফল্যের দিক থেকে ২০তম স্থান অর্জন করে।- বাসস
এসি