ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

রাখাইনে থাকা ছয় লাখ রোহিঙ্গার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ কেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৪২ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার

মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তর করার পর রাখাইন প্রদেশে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে পালিয়ে যান ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।

জাতিসংঘের বক্তব্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনও ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে, যাদের মধ্যে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা বিভিন্ন ক্যাম্পে আটক রয়েছেন।

৩১শে জানুয়ারি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির নির্বাহী ক্ষমতা গ্রহণ করার পর রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান দুচারিচ সোমবার সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, "রাখাইন রাজ্যে এখনো ছয় লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার রয়েছে বন্দী শিবিরে, যেখানে তাদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত।"

"তাই আমাদের আশঙ্কা, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী তাদের পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে।"

মঙ্গলবার জরুরি বৈঠকের পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করে।

রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানের পর সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ওই অভিযানের সময় গণহত্যা, গণধর্ষণ, ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ঘটেছে বলে অভিযোগ আনেন জাতিসংঘের তদন্তকারীরা।

সেনাপ্রধান মিন অং লাইংসহ চারজন সামরিক নেতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং লাইং এখন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান এবং দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি।

সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, রাখাইনে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা আবারো ঘটতে পারে। তবে মিয়ানমারের মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, ২০১৭ সালে সেনাবাহিনী যে 'ভুল' করেছিল, তার পুনরাবৃত্তি করবে না।

মিয়ানমারের মানবাধিকার আইনজীবী এবং রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে গঠিত কফি আনান কমিশনের সদস্য ইয়ো লোয়ে বলেন, "মিয়ানমারে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে পুরো মিয়ানমারের মানুষ শঙ্কিত। পুরো বিশ্বের নজর এখন মিয়ানমারের দিকে। কাজেই আমার মনে হয় না ২০১৭ সালে তারা যেই 'ভুল'টা করেছিল, সেটি এবারও করবে।"

তবে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করলেও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের যেই নীতি ছিল, তার খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন না লোয়ে। তিনি বলেন, "সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যে খুব বেশি পরিবর্তন হয়েছে, তা নয়। কাজেই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সরকারের মনোভাব খুব বেশি পরিবর্তন হবে না বলে আমা্র ধারণা।"

সোমবার সামরিক বাহিনীর ক্যু-এর পর মিয়ানমারে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ কিছু কিছু এলাকায় টেলিফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ চালু করে দিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকেই বলছেন রাখাইনে তাদের আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা।

কুতুপালং ক্যাম্পে থাকা মোহাম্মদ বারেক জানান, "হোয়াটসঅ্যাপ আর ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ওখানকার (রাখাইন) বন্ধুদের সাথে আমাদের যোগাযোগ হত। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।"

তবে উখিয়ার আরেকটি ক্যাম্পে থাকা আমিন মোহাম্মদ জানান রাখাইনে তার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের সাথে তিনি যোগাযোগ করতে পেরেছেন। ঐ আত্মীয়ের বরাত দিয়ে তিনি জানান, রাখাইন অঞ্চলে জীবনযাত্রায় দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন নজরে না এলেও এক ধরনের চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এক নজরে মিয়ানমার

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ মিয়ানমার যার জনসংখ্যা ৫ কোটি ৪০ লাখ। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড এবং লাওসের সাথে সীমান্ত রয়েছে মিয়ানমারের। ১৯৬২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সামরিক সরকার শাসন করেছে দেশটি। যার কারণে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে দেশটি।

গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে বছরের পর বছর ধরে প্রচারণা চালিয়ে এসেছেন অং সান সু চি। ২০১০ সালে ধীরে ধীরে ক্ষমতা ছাড়তে শুরু করলেও সামরিক বাহিনীর হাতে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

২০১৫ সালে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে অং সান সু চির ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু দুই বছর পর রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর সামরিক বাহিনীর নির্মম অভিযানের পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যায় এবং এ বিষয়টি সু চি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরায়।

তবে নিজের দেশে জনপ্রিয়ই ছিলেন সু চি এবং ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনেও তার দল বিপুল জয় পায়। কিন্তু এর পর আবারো দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে সামরিক বাহিনী। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসি