ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

খেলায় ফিরল বাংলাদেশ, চাপে সফরকারীরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:২৬ পিএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ রবিবার | আপডেট: ০৪:৩৭ পিএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ রবিবার

চট্টগ্রাম টেস্টে সফরকারীদের দুই অভিষিক্ত এনক্রুমাহ বোনার ও কাইল মায়ারস যে ভীতির সৃষ্টি করেছিল তার কিছুটা হ্রাস টেনে ধরেছে এবার টাইগাররা। দীর্ঘ ২৩০ রানের জুটি ভেঙেছেন তাইজুল ইসলাম। তারপরই ক্যারিবিয়ান শিবিরে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম আঘাত হেনেছেন নাঈম হাসান। 

প্রায় পৌনে পাঁচ দিন ও ১৪ সেশন শেষে চট্টগ্রাম টেস্ট এখন গিয়ে ঠেকেছে শেষ দেড় ঘণ্টায়। শেষদিনের তৃতীয় সেশনে এখন পর্যন্ত  ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩১১ রান। আজকের দুই সেশনে ৫৭ ওভার ব্যাটিং করে ১৫৬ রান যোগ করেছেন মায়ারস ও বোনার। সবমিলিয়ে তাদের জুটির রান দাঁড়িয়েছে ২৩০। যা ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে চতুর্থ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি।

এখন দিনের বাকি দেড় ঘণ্টায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য প্রয়োজন আর ৮৩ রান। সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে ফিরেছেন বোনার। তবে অভিষেকে সেঞ্চুরি তুলে নেয়া মায়ারস খেলছেন ১৪০ রানে। এ দুজনের জুটিতেই মূলত জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর সত্যিই তা হলে, টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়বে তারা।

তবে এই মুহূর্তে খেলায় ফিরেছে বাংলাদেশ। উইকেট শিকারের আশায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। তবে সফরকারীদের দেয়াল সময়ের সাথে যেন শক্ত হচ্ছে। ফলে ম্যাচের ফল নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না। 

এমন নয় যে, আজকের দিনে টাইগার বোলারদের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দিনের প্রথম সেশনে একাধিক সুযোগ তৈরি করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। কিন্তু কখনও রিভিউ না নেয়ার ভুল, আবার কখনও ক্যাচ ছেড়ে ক্যারিবীয়দের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। যার সুবাদে এখন সুবিধাজনক অবস্থানে সফরকারীরা।

চতুর্থদিন করা ৩ উইকেটে ১১০ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আজ দুই প্রান্ত থেকে মেহেদি মিরাজ ও তাইজুলকে দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। প্রথম সেশনে মেলেনি সাফল্য, সুযোগ পেয়ে মায়ারস ও বোনার অবিচ্ছিন্ন জুটিতে যোগ করেছেন ১৩৮ রান।

মেহেদি মিরাজের বলে স্লিপে দাঁড়িয়ে হাফ সেঞ্চুরিয়ান মায়ারসের ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সে বলে পাওয়া সিঙ্গেল থেকে ফিফটি পূরণ হয় মায়ারসের। এছাড়া ইনিংসের ৫০তম ওভারে তাইজুলের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদেও পড়েছিলেন মায়ারস। আম্পায়ার আউট দেননি, রিভিউও নেয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু সেই বলটি আঘাত হানত লেগস্ট্যাম্পে। ফলে সুযোগ পান মায়ারস।

সেশন শেষ হওয়ার ওভারে রিভিউ না নেয়ার ভুল করেনি বাংলাদেশ। এবারও বোলার ছিলেন তাইজুল, ব্যাটসম্যান মায়ারস এবং আম্পায়ারের সিদ্ধান্তও ছিল নটআউট। টাইগাররা রিভিউ নিলে দেখা যায়, সেই বলের উইকেটস ছিল আম্পায়ারস। অর্থাৎ আম্পায়ার আউট দিলে সাজঘরে ফিরতে হতো মায়ারসকে। কিন্তু আম্পায়ার আউট না দেয়ায় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছেন বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান।

শুধু মায়ারস একা নন। বাংলাদেশের রিভিউ ভুলে বেঁচেছেন বোনারও। ইনিংসের ৫৬তম ওভারে নাঈম হাসানের দুর্দান্ত টার্নিং ডেলিভারি গিয়ে আঘাত হানে বোনারের পায়ে। বল লেগস্ট্যাম্প দিয়ে বের হয়ে যাবে ভেবে আউট দেননি আম্পায়ার, বাংলাদেশও নেয়নি রিভিউ। রিপ্লেতে দেখা যায়, সে বলটিও লেগস্ট্যাম্পে লাগত। ফলে মায়ারসের মতো বেঁচে যান বোনারও।

দিনের প্রথম ঘণ্টার পর দ্বিতীয় ঘণ্টার খেলার শুরুতে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আনা হয় মোস্তাফিজুর রহমানকে। তার ওভারেই ইনিংসের প্রথম ছক্কাটি হাঁকান মায়ারস। সেই ওভার থেকে ক্যারিবীয়রা পায় ১১ রান। সেই স্পেলে তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি মোস্তাফিজ।

অন্যদিকে স্পিনেও আর তেমন কোনো পরীক্ষা নিতে পারেননি মিরাজ-নাঈম-তাইজুলরা। হাড়ে হাড়ে অনুভূত হয়েছে সাকিব আল হাসানের অভাব। অবশ্য একই সঙ্গে ভাগ্যবানও ছিলেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসের ৮২তম ওভারে তাইজুলের বলে বোনারকে লেগ বিফোরে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান বোনার।

এর পরের ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জাদুকরী তিন অঙ্কের দেখা পান মায়ারস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৪তম ও বিশ্বের ১০৭তম খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। শতক হাঁকিয়েও তেমন কোনো ঝুঁকি নেননি মায়ারস, দেননি কোনো সুযোগ। যার ফলে বারবার হতাশায় ডুবতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে।

চট্টগ্রাম টেস্ট জয়ে শেষ দিনে টাইগারদের প্রয়োজন আরও ৫ উইকেট। স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের জয়ের জন্য শেষ দিনের প্রথম সেশনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশির ভেজা সকালের উইকেটের সুবিধা পুরোপুরি নিতে পারলে কাঙ্ক্ষিত জয় পাবে টাইগাররা। 

এআই//