চাকুরী ফিরে পেতে নৌবাহিনীর নাবিক পরিবারের আকুতি
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪:২৬ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার
চাকুরী ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন জোরপূর্বক অবসরে পাঠানো বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নাবিক (সিকেটু) শেখ আবুল হাসানের পরিবার। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে চাকুরী ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী ও নৌবাহিনী প্রধানের দয়া ভিক্ষা চান আবুল হাসান। এসময় আবুল হাসানের মা জাহানারা বেগম, স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে সিকেটু শেখ আবুল হাসান বলেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি দেশ সেবার ব্রত নিয়ে সিকেটু (নাবিক) পদবীতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগদান করি। খুলনা নৌবাহিনী ঘাঁটি তিতুমীরে চার মাস ২০ দিনের বুট ক্যাম্প প্রশিক্ষণ শেষে চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের অধীনে বানৌটা খাদেম জাহাজে যোগদান করি। দীর্ঘ দেড় বছর খাদেম জাহাজে দায়িত্ব পালন করি। এরমধ্যে আমার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। জাহাজের ডিও লে. মাসুদুর রহমান জাহিদ স্যারের কাছে ছুটি চাই। জাহিদ স্যার আমাকে ছুটি না দিয়ে বেশি কথা বলেন। আমি মাকে দেখতে বাড়িতে চলে আসি। মাকে দেখে ৮৩ ঘণ্টার মধ্যে আবারও জাহাজে যোগদান করি।
তিনি আরও বলেন, যোগদানের পরে ডিও লে. মাসুদুর রহমান জাহিদ স্যার বাড়িতে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে আমাকে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলেন। লিখিতভাবে স্যারের কাছে বিষয়টি জানাই। তারপরে ২০০১ সালের জুন মাসে জাহাজের সিও স্যারসহ সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে তিনটি গুরুত্বর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আমি ওই শাস্তি মাথা পেতে নিয়ে চাকুরী করি। পরে ২০০১ সালের জুলাই মাসে কাপ্তাই বিএনএস শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটিতে আমাকে বদলি করে দেয়। কিন্তু ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বিএনপি ক্ষমতায় আসে।
এরপর থেকে ডিও লে. মাসুদুর রহমান জাহিদ সাহেব বিভিন্নভাবে আমাকে শাসাতে শুরু করে। বাংলাদেশ নেভিতে তুই কিভাবে চাকুরী করিস তা আমি দেখব- এমন কথাও বলেন জাহিদ স্যার। এক পর্যায়ে তার বড় ভাই বিএনপি সরকারের আশির্বাদপুষ্ট কমোডোর আবুল কালাম আজাদ স্যারের মাধ্যমে আমাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়ে দেয়। অবসরে পাঠানোর সময় আমাকে কোনও প্রকার সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি। কেন আমাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে তাও বলা হয়নি।
আবুল হাসান বলেন, বাধ্যতামূলক অবসরে দেওয়ার পরে আমি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দপ্তরে অসহায়ের মতো ঘুরেছি, অনুনয় বিনয় করেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। স্যারদের মন গলেনি। এর মাঝে ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর তারিখে ঢাকার খিলক্ষেতস্থ বানৌজা শেখ মুজিব ঘাটিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার ও নাবিকদের পুনঃমিলনি অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত করা হয়। তখনও আমি নৌপ্রধান মহোদয়কে আমার প্রতি অবিচারের বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু আমার কথায় কোনও কাজ হয়নি।
চাকুরী হারিয়ে স্ত্রী, সন্তান ও মাকে নিয়ে দারুন দূর অবস্থার মধ্যে আছি। একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও আমি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে এবং মানুষের বাড়ি কামলা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার সন্তানরা কাঁদে ভাতের অভাবে। বাবা নৌবাহিনীতে চাকুরী করতেন জানার পরেও আমার এ অবস্থা কেন তা জানতে চায় সন্তানরা। আমি তাদেরকে কি উত্তর দিব। এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
কোনও ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করে চাকুরী ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও নৌবাহিনী প্রধানের দয়া চান অসহায় শেখ আবুল হাসান।
আবুল হাসানের বৃদ্ধ মা জাহানারা বেগম বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পরে ছেলেকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। ছেলের চাকুরী হারিয়ে আমরা খুব বিপাকে রয়েছি। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে আমাদের। আমার ছেলে যদি কোনও ভুল করে থাকে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিয়ে চাকুরী ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। চাকুরী ফিরে পেলে আমার সন্তান ও তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে স্বচ্ছলভাবে বাঁচতে পারবে।
এনএস/