ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

২১ বার আগুনে পুড়লো সুন্দরবন

আবুল হাসান, মোংলা

প্রকাশিত : ০৫:২৬ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:২৮ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার

সুন্দরবনে সর্বশেষ আগুন লাগে সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকায়। এর আগে ২০১৭ সালের ২৬ মে আগুন লেগেছিল একই এলাকায়। এ নিয়ে গত ১৮ বছরে ২১ বার আগুন লেগে পুড়ে গেছে সুন্দরবনের অন্তত প্রায় ১০০ একর বনভূমি। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ-তো আছেই। সবকিছু মিলে যেন সুন্দরবনের পিছু ছাড়ছে না বিপদ! 

তবে সুন্দরবনে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলেছে। বার বার লাগা এসব আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হয় তার সঠিক কারণ জানা না গেলেও প্রতিবারই ধারণা করা হতো- বনজীবীদের অসাবধাণতায়, বিড়ি-সিগারেটের ফেলা দেওয়া অংশ থেকে আগুন লেগেছে। 

কিন্তু এবারের ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে উড়িয়ে দিতে চাচ্ছেন না অনেকেই। সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবারের ঘটনা নাশকতাও হতে পারে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যেসব এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সেসব এলাকার কিছু অসাধু জেলেরা মাছ ধরার জন্য তাদের সুবিধার্থে জায়গা খালি করতে আগুন লাগায়।’

আর এজন্য বনবিভাগের চরম উদাসীনতাকে দায়ী করেন তিনি। বনবিভাগ কঠোর নজরদারী করলে এ ঘটনা বাববার ঘটতো না বলেও দাবি করেন তিনি। 

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় কার্যালয়ের (বাগেরহাট) মো. হারিস জানান, ‘সুন্দরবনে ২০০২ সালে কটকা এলাকায় একবার, একই বছরে নাংলী ও মান্দারবাড়িয়া এলাকায় দুইবার, ২০০৫ সালে পচাকোরালিয়া, ঘুটাবাড়িয়ার সুতার খালে দুইবার, ২০০৬ সালে তেরাবেকায়, আমুরবুনিয়া, খুরাবাড়িয়া, পচাকরালিয়া ও ধানসাগর এলাকায় পাঁচবার, ২০০৭ সালে পচাকোরালিয়া, নাংলী ও ডুমুরিয়া এলাকায় তিনবার, ২০১০ সালে গুলশাখালী একবার, ২০১১ সালে নাংলীতে দুইবার, ২০১৪ সালে গুলশাখালীতে একবার, ২০১৬ সালে নাংলী, পচাকোরালিয়া ও তুলাতুলিতে চারবার, ২০১৭ সালে মাদ্রাসাছিলায় একবার এবং সর্বশেষ ২০২০ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকায় সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) চার শতক বনভূমি পুড়ে যায়।’ এসব অগ্নিকাণ্ডে কোটি কোটি টাকার বনসম্পদ ভস্মীভূত হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

এদিকে নানা সময়ে এসব আগুনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন এমন দুজন বন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কমিটি বনের অভ্যন্তরে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধকল্পে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী দু’ধরনের সুপারিশমালা পেশ করেছিল। সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- বন সংলগ্ন লোকালয়ের লোকজনের মাঝে অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি, অগ্নিকাণ্ডের পর তা নিয়ন্ত্রণ বা নেভাতে বন বিভাগের লোকবল বৃদ্ধি, বন বিভাগের নিজস্ব অগ্নি নির্বাপক ইউনিট গঠন, বন সংলগ্ন ভরাট হয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদী ও খাল খননের মাধ্যমে গভীরতা সৃষ্টি প্রভৃতি।’

ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, ‘সুপারিশের অধিকাংশই দীর্ঘদিনে বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে বনাঞ্চলে বারবার আগুনের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া আগুন লাগার পর তা নেভাতেও বনকর্মীদের চরম ভোগান্তি আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারী) বলেন, ‘চাঁদপাই রেঞ্জে অধিকাংশ আগুনের ঘটনা ঘটেছে নাংলী, ধানসাগর, ভোলা ও পচাঁকোরালিয়ার নদী-সংলগ্ন এলাকায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ সোমবার আগুনের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে এই কমিটি কি কারণে বনের অভ্যন্তরে আগুন লেগেছে তার কারণ চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেবেন। তারপর বিস্তারিত বলা যাবে।’

এআই/এনএস/