ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে বাংলাদেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:১০ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার | আপডেট: ০৪:১৩ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার

এ যেন দশ বছর আগের বাংলাদেশ। যেখানে প্রতিপক্ষের ছুঁড়ে দেয়া বড় কোন লক্ষ্য তাড়া করতে নামলেই খেই হারিয়ে ফেলতো টাইগাররা। তারই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে ঢাকা টেস্টে। সফরকারীদের প্রথম ইনিংসে করা ৪০৯ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চরম বিপর্যয়ে পড়েছে স্বাগতিকরা।

মাত্র ৭১ রান তুলতে একে একে বিদায় নিয়েছেন সৌম্য সরকার, নাজুমল হোসাইন শান্ত, অধিনায়ক  মোমিনুল হক ও তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় দিন শেষ হতে এখনো বাকি আধা ঘণ্টা। এ সময়ে টাইগারদের ব্যাটিং কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। 

প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই বাংলাদেশকে প্রথম খাদের কিনারে নিয়ে যান সৌম্য। গ্যাব্রিলের বলে বোনারের হাতে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানের ফেরেন সাকিব আল হাসানের জায়গায় স্থান পাওয়া এই বামহাতি ওপেনার। 

তার বিদায়ের পর একই পথে হাটেন শান্ত। চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ার পর ঢাকা টেস্টেও একই অবস্থা তার। ব্যক্তিগত ৪ রানে তিনিও গ্যাব্রিলের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। মাত্র ১১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা বাংলাদেশকে কিছুটা টেনে তোলার চেষ্টা করেন দুই অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল ও মোমিনুল হক। 

কিন্তু দলীয় ৬৯ রানের মাথায় কর্নওয়ালের স্পিনের শিকার হন মোমিনুল। ফলে আশা জাগিয়েও হতাশ করেন তিনি। ৪ বাউন্ডারিতে করেন ২১ রান। এরপর টাইগার ভক্তদের হতাশায় ডোবান চট্টগ্রাম টেস্টে পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়া তামিম। 

ঢাকা টেস্টে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে ভালই লড়াই করছিলেন বামহাতি এই ওপেনার। কিন্তু অর্ধশতক ছোঁয়ার আগে জসিপের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। একটি ছক্কা ও ৬টি বাউন্ডারিতে ৪৪ রান করেন এ স্ট্রাইকার। 

এদিকে ক্রিজে থাকা মোহাম্মদ মিঠুনের বিদায় ঘণ্টাও বেজেছিল। কিন্তু রিভিউ নিয়ে এ যাত্রায় বেঁচে ফিরেছেন তিনি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত টাইগারদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৮১ রান। ক্রিজে অপর ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। 

এর আগে প্রথম দিনের ২২৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নামা ক্যারিবিয়রা জসুয়া ডি সিলভা ও এনক্রুমাহ বোনারের দৃঢ়চেতা ব্যাটিংয়ে ভর ৪০৯ রানের বড় পুজি পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যদিও দুজনই শতকের কাছাকাছি গিয়ে সাজঘরে ফেরেন। তবে দলের জন্য যা করার দরকার ছিল তা তারা করে দিয়ে যান। 

গতকালের ৫ উইকেটে ২২৩ রান নিয়ে আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নেমে বেশ সতর্ক থেকেই ব্যাট চালাচ্ছেন সফরকারীরা। একের পর এক ব্রেক থ্রোতেও ভাঙা যাচ্ছেনা ক্যারিবিয়দের দেয়াল। যদিও দলীয় ২৬৬ রানের মাথায় মেহেদী হাসান মিরাজের বলে শান্তর হাতে ধরাশায়ী হয়ে বিদায় নিয়েছেন বোনার (৯০)। মাঠ ছাড়ার আগে ৭ বাউন্ডারিতে ৯০ রান করেন ক্যারিবিয় এই ব্যাটসম্যান। 

তবে তার বিদায়ের পরও চালকের আসনে থাকে সফরকারীরা। সিলভার ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৪০৯ রানে পৌঁছায় তারা।  দলীয় ৩৮৪ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৯২ রানে তাইজুলের শিকার হন তিনি। ফলে তাকে সঙ্গ দেয়া আলজেরি জসিপও দলের বড় সংগ্রহে ভূমিকা রাখেন। তবে সিলভার বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি জসিপ। জায়েদের বলে লিটনের হাতে ধরাশায়ী হোন তিনি। মাঠ ছাড়ার আগে ৫ ছক্কা ও ৮ বাউন্ডারিতে ৮২ রান রান করে ক্যারিবিয় এই ব্যাটসম্যান। শেষ ২৫ রানে ক্যারিবিয়রা হারায় ৪ উইকেট। 

এর আগে বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের প্রথম সেশনে বলতে গেলে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। ৮৪ রানে ওয়েস্ট ইন্ডজের মাত্র ১টি উইকেট তুলে নিতে পারে টাইগাররা। তবে দ্বিতীয় সেশনে ঘুরে দাঁড়ায় মমিনুল হকের দল। ৬২ রানের বিনিময়েই ফিরিয়ে দেয় সফরকারীদের ৩ ব্যাটসম্যানকে।

ওপেনিং জুটিতে ক্রেইগ ব্রাথওয়েট এবং জন ক্যাম্পবেল ৬৬ রান যোগ করেন। এরপর বাংলাদেশের হয়ে প্রথম আঘাত হানেন তাইজুল ইসলাম। এই বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনারের লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন ক্যাম্পবেল। ৬৮ বলের মোকাবেলায় ৫ চার এবং ১টি মাত্র ছয়ের সাহায্যে ৩৬ রান করেন ক্যারিবীয় বাঁহাতি হার্ডহিটার।

এরপর লাঞ্চ থেকে ফিরে শাইনি মুসেলের উইকেট তুলে নেন চট্টগ্রাম টেস্টে একাদশের বাইরে থাকা রাহী। কিছুক্ষণ পর সৌম্যের বলে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিফটি হাতছাড়া করেন সফরকারী অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েট। দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে চট্টগ্রাম টেস্টের নায়ক কাইল মায়ার্সকেও নিজের শিকারে পরিণত করেন রাহী। 

আর শেষ সেশনে এসে জার্মেইন ব্লাকউডকে তুলে নিয়ে ভালো কিছুরই ইঙ্গিত দেন তাইজুল। এর আগে ব্লাকউডের (২৮) সঙ্গে ৬২ রানের অনবদ্য জুটি গড়েন বোনার। তবে শেষ পর্যন্ত প্রথম দিন আর কোনও বিপর্যয় হতে দেননি প্রথম টেস্ট জয়ের অন্যতম নায়ক এনক্রুমাহ বোনার ও জসুয়া ডা সিলভা। 

এআই//