ঢাকা, শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৭ ১৪৩১

পুকুরে দেওয়া বিষ কিংবা মাছের মড়ক থেকে রক্ষার উপায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৫৩ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার | আপডেট: ০৬:৫৪ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার

বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনে বিশেষ করে স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় হলেও দেশে মাছ চাষের ক্ষেত্রে বড় দুটি সমস্যা হলো মড়ক ও পুকুরে বিষ ঢেলে মাছ মেরে ফেলার মতো প্রতিহিংসা মূলক কাজ।

এখন গবেষকরা বলছেন কিছু পদক্ষেপ নিলেই এসব অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা থেকে মুক্তির সুযোগ রয়েছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক বলছেন মড়ক প্রতিরোধে দেশে প্রথমবারের মতো মাছের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছেন তারা, যেটি বিশেষ করে পাঙ্গাস মাছকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষায় সফল হয়েছে গবেষনাকালে।

এ ভ্যাকসিনটি ব্যাপক ভাবে বাজারে আনা সম্ভব হলে রুই কাতলা জাতীয় মাছের ক্ষেত্রেও কাজে লাগবে বলে আশা করছেন তারা।

বাংলাদেশের ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা মৎস্য চাষিদের সংগঠন বাংলাদেশ ফিস ফার্মারস এসোসিয়েশনের মতে দেশের বছরে কমপক্ষে ২০ থেকে ৫০টি পুকুরে বিষ দেয়ার ঘটনা প্রকাশ পায় আর প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে মড়কেও মারা যায় বহু চাষির মাছ।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন যে তারা একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছেন যা মাছকে মড়ক থেকে বাঁচাতে ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে।

"বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশেই মাছের কোন ভ্যাকসিন নেই। আমরা এটি উদ্ভাবন করেছি। পাঙ্গাস মাছের ক্ষেত্রে প্রায়োগিক সাফল্যও পেয়েছি। এটি মাছকে মড়ক থেকে বাঁচাতে পারবে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন 'বায়োফ্লিম' নামের ভ্যাকসিনটি এরোমোনাস হাইড্রোফিলার মতো ব্যাকটেরিয়া জনিত সমস্যা থেকে মাছকে সুরক্ষা দেবে, বিশেষ করে পাঙ্গাস মাছের ক্ষেত্রে এটি বেশি কার্যকরী বলে প্রমাণিত।

গবেষণা দলটির আরেকজন সদস্য একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিস বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্সের ডঃ শামীমা নাসরীন বলছেন ভ্যাকসিনটি বড় আকারে উৎপাদন করা গেলে বাংলাদেশের মৎস্য খাত দারুণভাবে উপকৃত হবে বলে মনে করছেন তারা।

তিনি বলেন স্বাদু পানিতে চাষ করা হয় এমন মাছগুলোর ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন কার্যকরী হবে।

কিন্তু বিষ থেকে কিভাবে বাঁচানো যাবে পুকুরের মাছ

গত বছর অগাস্টে ঢাকার কাছে আশুলিয়ায় প্রায় ৬৬ বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে বিষ দিয়ে একশ টনের মতো মাছ মেরে ফেলার খবর নিয়ে বেশ শোরগোল হয়েছিলো। পুকুরটিতে অসংখ্য ছোট বড় মাছ মরে ভেসে আছে এমন ছবিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলো বহু মানুষ।

বাইশ বছর ধরে রংপুরে মাছ চাষ করে আসা রাজ গোস্বামী বলছেন পুকুরকে ঘিরে প্রযুক্তিগত ও সাইকোলজিক্যাল কিছু পদক্ষেপ নিলে বিষ দেয়ার মতো অপরাধমূলক তৎপরতা থেকে মাছ রক্ষার সুযোগ বাড়বে।

তার মতে পুকুরকে ঘিরে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এগুলো হলো:

১. সিসিটিভি ক্যামেরা সংযোজন

২. পুকুরে বা খামার এলাকায় ছোট টং ঘর তৈরি করে রাতের বেলায় আলো রাখা

৩. আশেপাশের লোকজনের সাথে সু সম্পর্ক রাখা

৪. টং ঘরে মাঝে মধ্যে অবস্থান করা

৫. সুযোগ থাকলে সার্বক্ষণিক পাহারার আয়োজন করা

৬. স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করে পুকুরকে জিআই তার দিয়ে ঘিরে রাখা

৭. ছোটো পুকুর হলে জাল দিয়ে ঘিরে রাখা

৮. মাঝ মধ্যেই হুট করে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা

বাংলাদেশ ফিস ফার্মারস এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার তপন বলছেন যেসব এলাকায় পুকুর বা খামার বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সেখানে বিষ দেয়ার মতো ঘটনা বেশি ঘটে।

"মূলত সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা কারণে এগুলো ঘটে। বছরে ২০-৫০টি ঘটনা প্রকাশ পায়। এর বাইরেও অনেক ঘটনা ঘটে তবে নজরে আসেনা। এখন আমরা চাষিদের সচেতন করার চেষ্টা করছি যাতে একযোগে প্রতিবাদ করা যায়," বলছিলেন তিনি।

অন্যদিকে মাছের মড়কের বিষয়ে তিনি বলেন মাছের ব্যবস্থাপনা সঠিক হলে রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। "বাংলাদেশে এখন ভ্যাকসিন নেই। মাঝে চেষ্টা হয়েছিলো বিদেশ থেকে আনার কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় হ্যাচারিগুলো তা গ্রহণ করেনি," বলছিলেন সালাউদ্দিন সরকার।

খুলনার মৎস্য চাষি তরিকুল ইসলাম বলছেন মাছকে মড়ক থেকে রক্ষার জন্য লবণ ও চুনের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।

"পানির ব্যবস্থাপনা ঠিক মতো করতে পারলে মড়কের ঝুঁকি কমে। তবে মাছের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো নিম্নমানের খাবার ও উপকরণ। দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ীর ক্ষেত্রে ভাইরাস আর চোরের উপদ্রবে চাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন," বলছিলেন তিনি।

তরিকুল ইসলাম বলেন, এখন প্রশাসন থেকে সহায়তা পাওয়া যায় দ্রুত কিন্তু তারপরেও চুরির কারণে দক্ষিণের চাষিদের অনেক ক্ষতিই মেনে নিতে হয়। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসি