ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র মজুমদারের মৃত্যুবার্ষিকী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২৮ এএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার | আপডেট: ১০:৪৭ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সোমবার

উপমহাদেশের বিশিষ্ট বাঙালি ইতিহাসবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র মজুমদার। যিনি ‘আর সি মজুমদার’ হিসাবে সমধিক পরিচিত। চার দশক আগে লোকান্তরিত হন তিনি।

ব্রিটিশ-ভারতের যুগে ১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত এই ইতিহাসবিদ প্রাচীন ভারত এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের উপর অনেক কাজ করেছেন। তাঁর লেখা ‘Early History of Bengal’ ১৯২৪ সালে এবং ‘Ancient India’ নামে আরেকটি বই ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়।

ফরিদপুর জেলার খদ্দরপাড়ার ছেলে আর সি মজুমদার ১৯০৯ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও ১৯১১ সালে স্নাতোকত্তর লাভ করেন। এরপরে তিনি অধ্যাপক হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর অধীনে ইতিহাসে গবেষণা শুরু করেন। ১৯১২ সালে ‘অন্ধ-কুষাণকাল’ অভিসন্দর্ভের জন্য প্রেমচাদ রায়চাদ বৃত্তি পান। ১৯২৮ সালে লন্ডনের British Museum, লেইডেনের kern Institute প্যারিসের Bibliotheque Nationale এ পড়াশুনা করেন। ১৯১৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯১৯ সালে ‘Corporate life in ancient India’ শীর্ষক তাঁর PHD গবেষণা প্রকাশ করে কলকাতা বিশ্ববিবিদ্যালয়। 

১৯২১ সালে তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।

১৯২৬ সালে ঢাকার জনগণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আমন্ত্রণে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকায় আসেন। সেই আসাটা ছিল ঢাকায় কবির দ্বিতীয় ও শেষ বারের মত আসা। সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণের ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার। তিনি তখন জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট।

ঢাকা সফরে রবীন্দ্রনাথ কাদের আতিথেয়তায় থাকবেন-এ নিয়ে ঢাকার জনগণ ও ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদারের মধ্যে মতান্তর দেখা দেয়। দলাদলি ও বিতর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তা রবীন্দ্রনাথের কাছেও অগোচর থাকেনি। গোটা পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথ খানিকটা বিব্রত হয়ে ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ১৬ মাঘ রমেশচন্দ্র মজুমদারকে নিম্নোক্ত চিঠি লেখেন।

কল্যাণীয়েষু,
ঢাকার জনসাধারণের পক্ষ থেকে আজ আমাকে নিমন্ত্রণ করার জন্য দূত এসেছিলেন। তাঁদের বিশেষ অনুরোধে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই যাত্রা করতে প্রস্তুতি হয়েছি। ৬ই তারিখে রাত্রে রওনা হয়ে গোয়ালন্দ থেকে তাঁদেরই জলযানে ভেসে পড়ব। ১০ই তারিখ পর্যন্ত তাদের আতিথ্য ভোগ করে ওই কর্তব্য অন্তে তোমার আশ্রয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিমন্ত্রণ পালন করব। নইলে আমাকে দীর্ঘকাল ঢাকায় থাকতে হয়। আমার সময় নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃস্থিত ঢাকার লোকের নিমন্ত্রণ কোনো মতেই উপেক্ষা করা উচিত বোধ করি নে। তাই দুই নিমন্ত্রণ ক্ষেত্রে আমার সময়কে বিভক্ত করে দিলুম। যে কয়দিন তোমাদের দেব স্থির করেছিলুম, সে কয়দিন সম্পূর্ণই রইল।
ইতি ১৬ই মাঘ ১৩৩২—
শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শেষ পর্যন্ত অধ্যাপক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মৃদু আপত্তি সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছানুযায়ী আতিথেয়তার ব্যবস্থা হয়। ঢাকার জনগণের বিভিন্ন সংবর্ধনা শেষে রবীন্দ্রনাথ ১০ ফেব্রুয়ারি ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদারের বাড়িতে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের আতিথ্য গ্রহণ করেন।

১৯৮০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ৯২ বছর বয়সে কলকাতায় তাঁর দেহাবসান হয়।
শ্রদ্ধা।
এসএ/