ওজনদারের ওজন টের পেল টাইগাররা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:১৩ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার
ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট নেয়া কর্নওয়াল
চট্টগ্রাম টেস্টে নিজেকে খুব একটা মেলে ধরতে না পারলেও ঢাকা টেস্টে সফল হয়েছেন ১৪০ কেজির দৈত্যাকার ক্যারিবীয় স্পিনার রাহকিম কর্নওয়াল। যার ওজন খুব ভালভাবেই টের পেল টাইগাররা। যিনি ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে একাই ফিরিয়েছেন মোমিনুল-মুশফিক-লিটনসহ টাইগারদের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে।
তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে লিটন দাস ও মেহেদী মিরাজের শতাধিক রানের জুটিতে ভর বাংলাদেশ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করছে, ঠিক তখনই ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হন কর্নওয়াল। যাতে ২৮১/৬ থেকে মুহূর্তেই ২৮৩/৯ হয়ে যায় বাংলাদেশের স্কোর। যাতে শেষ পর্যন্ত ১১৩ রানে পিছিয়ে থেকেই ২৯৬ রানে গুটিয়ে যায় মোমিনুল বাহিনী।
এর আগে দিনের সেরা ১২৬ রানে জুটি গড়ার পথে অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন দুইজনেই। এর মধ্যে লিটন দাস ৭১ রানে এবং মেহেদী মিরাজ ৫৭ রান করে আউট হন। একাই পাঁচটি উইকেট শিকার করেছেন ক্যারিবীয় দৈত্যাকার স্পিনার রাহকীম কর্নওয়াল। যা পঞ্চম টেস্ট খেলতে নামা দানবীয় স্পিনার ক্যারিয়ারে প্রথম পাঁচ উইকেট।
আজ শনিবার দিনের প্রথম সেশন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই মুশফিকের অপ্রত্যাশিত শটে বাংলাদেশ হারায় ৬ষ্ঠ উইকেট। তারপর লিটনের সাথে মাঠে যোগ দেন মিরাজ। প্রথম সেশনের বাকি সময়টা তারা ভালোই ভালোই শেষ করেছিলেন। দ্বিতীয় সেশনটিও তারা দুইজনে দখল করে নেন। বাংলাদেশ একসময়ে ফলোঅনের শঙ্কায় ছিল। তা থেকে দলকে বাঁচিয়ে দলকে এগিয়ে নেন এই দুই তরুণ।
এরই মাঝে টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম অর্ধশতক তুলে নেন লিটন। সাদা পোশাকে এখনও তিন অঙ্ক স্পর্শ করা হয়নি তার। দলকে বিপদের মুখ থেকে উদ্ধার করে শতক হাঁকানোর বড় সুযোগটাই ছিল তার সামনে। তবে কর্নওয়ালের চতুর্থ শিকার হওয়ার আগে লিটন খেলেন ১৩৩ বলে ৭১ রানের ইনিংস। তার এ ইনিংসে ছিল ৭টি চার। এর আগের ইনিংসেও (চট্টগ্রামে) অর্ধশতক হাঁকান লিটন।
অপরপ্রান্তে মিরাজও চা বিরতির ঠিক আগে পূর্ণ করেন টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটিও গড়ে ফেলেন তারা। আগের ম্যাচে শতক হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন মিরাজ। তবে লিটনের পর নাঈম হাসানও (০) কর্নওয়ালের শিকার হলে যেন খেই হারিয়ে ফেলেন মিরাজ। পরের ওভারেই শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের তৃতীয় শিকার হন শর্ট মিডউইকেটে দাঁড়ানো প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে। তার আগে ১৪০ বল মোকাবেলা করা মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ৫৭টি রান। যাতে ছিল ৬টি চারের মার।
আর মিরাজের আউটের মধ্যদিয়েই শেষ হয় বাংলাদেশের সব আশা ভরসা। ২৮৩ রানেই নবম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। আর অলআউট হয়ে যায় ২৯৬ রানেই। যাতে ১১৩ রানের লিড পায় সফরকারীরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে রাহকীম কর্নওয়াল ৫টি, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ৩টি ও আলজারি জোসেফ ২টি উইকেট শিকার করেন।
এর আগে বাংলাদেশ দিন শুরু করেছিল ৪ উইকেটে ১০৫ রান নিয়ে। ব্যাটে নেমেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহিম। মিঠুন ধৈর্যশীল ব্যাটিং করলেও স্কোরবোর্ডে বেশি রান যোগ করতে পারেননি। ভালো খেলতে থাকা মুশফিক রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে-বলে রসায়ন জমাতে না পেরে আউট হয়ে ফেরেন ৫৪ রান করে। তাদের বিদায়ের পরেই হাল ধরেন লিটন ও মিরাজ। যোগ করেন ১২৬ রান।
২০১৯ সালের আগস্টে টেস্ট অভিষেক হয় টাইগারদের দুঃস্বপ্ন হওয়া কর্নওয়ালের। রোস্টন চেজের চোটের কারণেই কিংস্টনে ভারতের বিপক্ষে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। অভিষেকের সময় ক্রিকেটীয় দক্ষতার চেয়ে সবার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল তার বিশালকায় শরীর। সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার এই ক্রিকেটারের ওজন ১৪০ কেজির বেশি। টেস্ট ক্রিকেটের দেড়শ বছরের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে ওজনদার খেলোয়াড়।
তাই বলে ক্রিকেটীয় দক্ষতায় মোটেও পিছিয়ে নন কর্নওয়াল। স্পিন খেলায় ভারতের সবচেয়ে দক্ষ ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পুজারা ছিলেন তার প্রথম টেস্ট শিকার। অবশ্য অভিষেকের তিন বছর আগেই একটি প্রস্তুতি ম্যাচে কোহলি, পুজারা ও রাহানেকে আউট করে নজর কেড়েছিলেন রাকিম।
টিমমেটরা আদর করে তাকে ডাকেন 'জিম্বো' বলে। অনেকেই তাকে 'বিগ ম্যান' কিংবা 'মাউন্টেন' নামেও ডেকে থাকেন। দীর্ঘদেহী এ ক্রিকেটার ব্যাট হাতেও কিন্তু বেশ কার্যকর। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আছে তার সেঞ্চুরিও। আর বিশাল শরীর নিয়ে স্লিপে দুর্দান্ত ফিল্ডিংও করেন তিনি। রীতিমতো অলরাউন্ডর প্যাকেজ এই কর্নওয়াল।
তিন টেস্টের ক্যারিয়ারে ২০১৯ সালের নভেম্বরে লক্ষ্ণৌতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেট নিয়ে সেরা বোলিং করেন কর্নওয়াল। ওই টেস্টে ১০ উইকেটের মাইফফলকও স্পর্শ করেন তিনি। গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যানচেস্টারে অবশ্য সেদিন কোনও উইকেটের দেখা পাননি।
তবে বাংলাদেশে স্পিনসহায়ক উইকেটে তিনি যে ঝড় তুলতে সক্ষম, তা ইতিমধ্যে টের পেয়েছে তামিম-মোমিনুলরা।
এআই/এনএস/