ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

চিরনিদ্রায় শায়িত সাংবাদিক মুজাক্কির

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:১৬ এএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সোমবার

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় চর ফকিরায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। 

মুজাক্কিরের মৃত্যুর খবরে শনিবার রাত থেকে রোববার দিনভর তার বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের আহাজারি চলে। এ সময় মুজাক্কিরের মা-বাবা, ভাই-বোনদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। সকাল থেকে আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠি ও এলাকাবাসী মুজাক্কিরের বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানায়। এ সময় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি জানান সবাই। 

সন্ধ্যার কিছু পরে ঢাকা থেকে স্বজনরা সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের বাড়িতে তার মরদেহ নিয়ে পৌঁছান। এ সময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রাত সাড়ে ৮টায় চর ফকিরা ইউনিয়নের আজগর আলী দাখিল মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠানের নেতৃবৃন্দ এবং মুজাক্কিরের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব অংশগ্রহণ করেন। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

চরফকিরা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নোয়াব আলী মাস্টারের ছেলে বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির (২৫) সাত ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। তিনি ২০২০ সালে নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে দর্শন বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স পাস করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে পড়াশোনা করছিলেন। সমাজ বদলের স্বপ্ন নিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় যুক্ত হন মুজাক্কির। দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার ও অনলাইন পোর্টাল বার্তা বাজারের প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠি ও এলাকাবাসী সবার মুখে মুখে তার সুনাম।

সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের এমন মৃত্যুকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও নেক্কারজনক ঘটনা উল্লেখ করে এ ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। 

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের একটা উঠতি বয়সের ছেলে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত ছিল, তাকে এ বয়সে এভাবে হত্যা করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ ধরনের কাজ যে বা যারাই করুক তাদেরকে যেন আইনের আওতায় আনা হয়।’

জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, ‘এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দিলে তা গ্রহণ করা হবে এবং হত্যাকারীদেরকে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় এর আগে দায়ের করা দুটি মামলার তদন্ত এবং আসামিদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।’

গত শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চারপরাশির হাট পূর্ব বাজারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারী ও উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন মুজাক্কির। এ সময় তার বুক, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির স্পিলিন্টার লাগে। 

আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে মারা যান তিনি। 
এআই/এসএ/