ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বগুড়া পৌরসভা নির্বাচন

সিসি ক্যামেরা এখন মূর্তিমান আতঙ্ক!

বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:২০ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সোমবার

সিসি ক্যামেরা এখন মূর্তিমান আতঙ্কের রুপ নিয়েছে বগুড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের নির্বাচনী এলাকায়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা সমর্থকই শুধু নয়, পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের নির্বাচনী এলাকার সাধারণ ভোটারগণের মাঝেও বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক। আর এই ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির অভিযোগ উঠেছে কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ৪নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়ক এবং বাজারের মোড়ে মোড়ে সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। আর এসব ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল মতিনের চকসূত্রাপুর এলাকাস্থ নিজ বাড়ি থেকেই। কোনও কাউন্সিলর প্রার্থী যখন তার কর্মীদের নিয়ে ওইসব এলাকা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করেন, তখনই তাদের উপর আসে হুমকি, আর শেষ করে ফেলার হুঙ্কার!

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই হুমকি-ধমকি বেড়েই চলছে। এখন সাধারণ ভোটাররাও যে কোনও প্রার্থী বা প্রার্থীর কর্মীদের সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। রাস্তাঘাটে দেখা হলে নিজের জীবন যেন খোয়া না যায়, এজন্য প্রার্থীদের থেকে এড়িয়ে চলছেন সাধরণ ভোটাররা।

৪নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী (ব্লাক বোর্ড প্রতীক) আবু জাফর মো. মাহমুদুন্নবী (রাসেল) বলেন, বিভিন্ন সময়ে লিখিতভাবে কয়েক দফা নির্বাচন কমিশনে আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ দিয়েছি, ফলাফল জিরো। বরং আগের চেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে উটপাখি প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল মতিন। এখন তিনি প্রায় ২০টির মতো সিসি ক্যামেরা বিভিন্ন স্থানে লাগিয়ে আমার এবং আমার কর্মী সমর্থকদের গতিবিধি নজর রাখছেন।

ওই ওয়ার্ডের আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী তাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের মাঠে নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রশাসনের। কিন্তু এখানে সিসি ক্যামারার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ আব্দুল মতিনের।

সিসি ক্যামেরা আতঙ্ক! কথাটি শুনে হয়তো মনে হবে নিরাপত্তার কারণ না হয়ে, কেন আতঙ্কের কারণ সিসি ক্যামেরা? 

এই প্রশ্ন আসতেই বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে- ৪নং ওয়ার্ডের নির্বাচনি এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে চকসূত্রাপুর- টিএমএসএস এর পাশে, জাহিদ মেটাল ও রেডি কমপ্লেক্স এলাকায়, নূরানী মোড়, ভান্ডারি মসজিদ, চকসূত্রাপুর মাদ্রাসা এবং আব্দুল মতিনের বাড়ির সামনে।

নাম প্রকাশ করার না শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, চকসূত্রাপুরস্থ তার বাড়ি থেকে এসব সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল মতিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে জেলা নির্বাচন অফিসার মাহবুবুল আলম শাহ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আব্দুল মতিনের সিসি ক্যামেরা কেন আতঙ্ক?
গত বছর ১৭ জুলাই দেশজুড়ে আলোচিত নাম ছিল তুফান সরকার। ভালো কলেজে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে বগুড়ায় এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে এবং তার মাকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনার নায়ক ছিলেন শ্রমিক লীগ বগুড়া শহর শাখার আহ্বায়ক তুফান সরকার। অভিযুক্ত সেই তুফান সরকারের বড় ভাই আব্দুল মতিন ওরফে মতিন সরকার। তাদের সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এছাড়াও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মতিন সরকারের বিরুদ্ধে সদর থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০০১ সালের একটি অস্ত্র মামলায় তাঁর ২৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এছাড়া ২০০৬ সালে তিনটি, ২০০৩ সালে একটি এবং ২০০১ সালেও দুটি মামলা হয়। এ পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে চারবার, র‌্যাব দুবার এবং যৌথ বাহিনী একবার গ্রেপ্তার করেছে।

১৯৯৮ সালের ১৮ জুন নূরানী মোড়ে খুন হন গোলাম রসুল। ওই হত্যাকাণ্ডে মতিনের নাম আসে। ২০০১ সালে চকসূত্রাপুরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন মতিনের ঘনিষ্ঠ মুন্সি উজ্জ্বল। মাটি ঢালি বাণিজ্য মেলার মাঠে ২০১১ সালে খুন হন যুবলীগের নেতা শফিক চৌধুরী। এ ঘটনায়ও আসে মতিনের নাম। ২০১২ সালের ২ ডিসেম্বর যুবদলের নেতা ইমরান হত্যার প্রধান আসামি ছিলেন মতিন। ২০১২ সালের ২৪ আগস্ট যুবলীগের নেতা মতিনকে চামড়া গুদাম লেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ফেনসিডিল, বিয়ার, হেরোইন, বিদেশি চাকু, জুয়া খেলার সরঞ্জাম, ১০ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। কিন্তু পরদিন র‌্যাবের তৎকালীন অধিনায়কের অপসারণ দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে যুবলীগ।

আর তুফানকে ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে যান। একই বছরের ২০ জুলাই একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তুফান ও তাঁর তিন ভাই ঝুমুর, ওমর ও সোহাগ গ্রেপ্তার হন।

সর্বশেষ গত মাসে বগুড়ায় ব্যবসায়ীসহ ৩ ব্যক্তিকে অপহরণ এবং পিকআপ ভ্যান চুরিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সোহাগ সরকার (৩৬) ও শাহীনুর রহমান (২৮) নামে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 
এতকিছুর পরও এখন চলছে সিসি ক্যামেরা আর হুমকি-ধমকি। তাই জনমনে আতঙ্ক কমাতে প্রশাসনকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য সাধারণ ভোটারদের।

উল্লেখ্য, দেশের সর্ববৃহৎ আয়তনের প্রাচীন বগুড়া পৌরসভার নির্বাচন আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি (পঞ্চম ধাপে) ইভিএম এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫০ জন এবং ২১টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩০ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

এনএস/