কেন ভালো কথা বলবেন
নাজমুন নাহার তামান্না
প্রকাশিত : ০৩:৫১ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার | আপডেট: ০৪:০০ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার
আসলে একজনের ভাষা, একজনের বচন, তার সংঘ তাকে প্রতিনিধিত্ব করে। আপনার বচন আপনার সংঘকে প্রতিনিধিত্ব করবে। আপনার বচন আপনার সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করবে। আপনার বচন আপনার পরিবারকে প্রতিনিধিত্ব করবে। আপনার বচন আপনার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে। এই জন্য সুবচনটা এতো গুরুত্বপূর্ণ। এবং প্রভু এইজন্য সুবচনকে এতো গুরুত্ব দিয়েছেন।
সনাতন ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র গ্রন্থ হচ্ছে বেদ। ঋগবেদে এই মধুর বচনকে বলা হয়েছে, তোমার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে মধুর বচন। এবং প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে, হে প্রভু আমাদের সর্বোত্তম সম্পদ দান করো, দান করো কালোজয়ী মন, আত্মিক সুষমা, অনন্ত যৌবন, আলোকজ্জল রুপ আর মধুর বচন।
সেই কতো হাজার বছর আগের কথা। মহামতি বুদ্ধ খুব পরিস্কারভাবে বলেছেন ধম্মপদে যে কাউকে কটু কথা বলবে না। তাহলে সেও কটু প্রত্যুত্তর দিতে পারে। উতপ্ত বাক্য বিনিময় তোমার জন্য কষ্টদায়ক হবে। দন্ডের প্রতিদন্ড তোমাকেও স্পর্শ করবে। ২৬০০ বছর আগে মহামতি বুদ্ধের বাণী এবং ২ হাজার বছর আগে যিশু ঈশ্বরের যে বানী বলেছেন, পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে, যে নিজের ওষ্ঠ সংযত রাখে, সে নিজের জীবনকে সংরক্ষিত করে। যে রুঢ় কথা বলে সে নিজের সর্বনাশের পথ উন্মুক্ত করে।
কোরআন শরীফে সুরা বাকারার ৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘মানুষের সাথে ভালো কথা বলো, সুন্দর কথা বলো ‘
তীর্যক এবং বিদ্রুপাত্মক কথা যেমন একজনকে বহু দিনের জন্য নিরাশ করে ফেলতে পারে, হতাশায় নিমজ্জিত করে ফেলতে পারে, তেমনি একটি ভালো কথা বদলে দিতে পারে একজন মানুষের জীবন। জীবন বদলে দিতে পারে বলেই ভালো কথার এতো গুরুত্ব।
তাইওয়ানের একজন খ্যাতিমান লেখক লিন কিন হুয়ান হাইস্কুলে পড়ার সময় খারাপ ছাত্র হিসেবে তার সুনাম ছিলো। সে সব সময় টেনেটুনে পাশ করতো। ফেল করতো না। বাজে ছাত্র হিসেবে তার স্কুলে পরিচিত ছিলো। কিন্তু তার যে শিক্ষক তিনি হাল ছাড়লেন না। তিনি প্রায়ই লিনকে তার বাসায় খাবার খেতে ডাকতেন এবং পড়াতেন। একদিন তিনি বললেন, শোনো ৫০ বছর ধরে আমি ছাত্র পড়াই। একবার তাকেই বলতে পারি কার মধ্যে বড় হওয়ার শক্তি আছে। সঙ্গে সঙ্গে কথাটা লিনের ব্রেনে ঢুকে গেলো। সে জীবনের একটা লক্ষ খুঁজে পেলো। পড়াশোনার পেছনে সে লেগে গেলো। সে ভাবল যে স্যার যখন বলছেন তাহলে নিশ্চয়ই আমার বড় কিছু করার শক্তি আছে। এবং কয়েক বছরের মধ্যেই একজন সাংবাদিক হিসেবে একটি ভালো পত্রিকায় কাজ পেয়ে গেলেন।
লিন একদিন এক চুরির ঘটনায় রিপোর্ট করছেন। রিপোর্ট শেষে একটা মন্তব্য করলেন যে চুরির জন্য এতো নিখুত পরিকল্পনা, এবং এতো সুন্দর সেটার বাস্তবায়ন যে লোক করতে পারে, সে যেকোন কাজে সফল হতে পারে।
ঘটনাচক্রে পত্রিকার ওই রিপোর্ট ওই চোরও পড়েছিল। পড়ার পরে তার ব্রেন চেঞ্জ হয়ে গেল। আমিতো তাহলে যে কোন কাজ করতে পারি। আমি কেন তাহলে চুরি করব। এবং ২০ বছর পরে ওই চোর এসে লিনের সাথে দেখা করল। এবং লিন তখন তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।
সে লিনকে বলল আপনার একটা ভালো কথা ওই যে চুরির রিপোর্টের শেষ লাইনটা আমার জীবন বদলে দিয়েছে। চুরি ছাড়াও যে আমি বড় কিছু করতে পারি বিশ্বাসটা ওইদিন আমার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এবং আমি এখন একজন মিলিওনিয়ার। একজন ধনকুবের। আমি এখন ব্যবসা করি।
সুরা ইব্রাহিমের ২৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আসলে একটি ভালো কথা এমন একটি ভালো গাছের মতো, যার শিকড় রয়েছে মাটির গভীরে আর শাখাপ্রশাখার বিস্তার দিগন্তব্যাপী।
শিক্ষকের কথা কেন বাজে ছাত্রকে প্রভাবিত করেছিল? কারণ ওই শিক্ষক শুদ্ধাচারি ছিলেন। লিনের কথা চোরকে প্রভাবিত করেছিল কেন? কারল লিন তখন বুঝেছেন ভালো কাজ করার, ভালো হওয়ার গুরুত্ব কত! তিনি খারাপ ছাত্র থেকে ভালো ছাত্র হয়েছেন। এবং তার একটি ভালো কথা একজন চোরকে ভালো মানুষ বানিয়ে দিয়েছে। এজন্য আমাদেরকে সুবচনটাকে নিজের স্বভাবের অঙ্গে পরিনত করতে হবে। এইজন্য আমাদের শুদ্ধাচারি হতে হবে।
এআই/এসএ/