বিয়ে বাড়িতে হাবিপ্রবির বাস, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
হাবিপ্রবি সংবাদদাতা
প্রকাশিত : ০৯:০৮ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার
হাবিপ্রবির বাস
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) এক কর্মচারীর চাচাতো ভাইয়ের বিয়েতে বরযাত্রীর বহরে নেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের পরিবহণে ব্যবহৃত একটি বাস। শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিয়ে বাড়িতে ওই বাস ব্যবহারের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীক্ষা শাখার অফিস সহায়ক মো. আতাউর রহমানের চাচাতো ভাইয়ের বিয়ের বরযাত্রীর বহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস ব্যবহার করা হয়। দিনাজপুর জেলার ৮নং শংকরপুর ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত ঐ বিয়েতে বর যাত্রীর বহর হিসেবে দু'টি বাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ নম্বর টাটা মিনি বাসটিও ছিলো।
বর যাত্রীর বহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ব্যবহারের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন বাসটির ড্রাইভার মো. রাজু এবং গেটম্যান মো. সালাউদ্দিন। তারা আরও জানান, ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে নিরীক্ষা শাখার অফিস সহায়ক মো. আতাউর রহমান ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনও স্টাফ ছিলেন না।
বরযাত্রীর বহরে হাবিপ্রবির বাস ব্যবহারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইংরেজি বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. রাসেল কবির জানান, বরযাত্রীর বহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। পরে কাছে গিয়ে দেখি ঘটনা সত্য। যখন আমার বন্ধুরা পরস্পরের সাথে বলাবলি করছিলো- আমাদের বাস এভাবে ভাড়া দেয়া হয় কিনা- তা নিয়ে, তখন আমি কোনও উত্তর দিতে পারিনি।
এ শিক্ষার্থী আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বাসে যারা ছিলো তারা কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ নয়। গ্রামের সাধারণ মানুষজন। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস যদি এরকম ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমাদের আর কিছু বলার থাকে না।
১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ইমরান হোসাইন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের প্রয়োজনে বাস বরাদ্দ নিতে গেলে এতো তালবাহানা করা হয়, সেখানে কি করে একজন কর্মচারী শিক্ষার্থীদের পরিবহণে ব্যবহৃত বাস নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বাস চালক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস এভাবে ব্যবহার করা অত্যন্ত অন্যায়। অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফদের পিকনিক বা বিয়ের অনুষ্ঠানের নামে বাস বরাদ্দ নিয়ে ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে উপর থেকে নির্দেশ দিলে আমাদের মতো সাধারণ চালকদের আর কিছু করার থাকে না।
এ বিষয়ে নিরীক্ষা শাখার ওই অফিস সহায়ক আতাউর রহমান জানান, আমি পরিবহন শাখার পরিচালককে জানিয়েই বাসটি ব্যবহার করেছি। তিনি অনুমতি না দিলে বাস নিতাম না।
ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস কেন ব্যবহার করলেন জানতে চাইলে আতাউর রহনান জানান, আমি যদি অন্য বাস নিই, তাহলে সেই বাস চালকের মাদক সেবনের অভ্যাস থাকতে পারে। ফলে দূর্ঘটনা ঘটবার আশঙ্কাও থাকে। এজন্য পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস রিকুইজিশন (বরাদ্দ) নিয়েছি।
এ বিষয়ে পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মফিজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে হলে তিনি ঐ কর্মকর্তাকে বাস ব্যবহারের অনুমতির দেবার ব্যাপারটি স্বীকার করে বলেন, সে (আতাউর রহমান) তার ছোট ভাইয়ের বিয়ের কথা বলে বাস রিকুইজিশন নিয়েছিলো। এর বাইরে আমি কিছু জানতাম না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস এভাবে কেউ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে পারে কিনা জানতে চাইলে মফিজুল ইসলাম জানান, এসব ব্যাপার নিয়ে আমরা খুব বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি দায়িত্ববান না হোন, তাহলে এসব আমার একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। অনেক সময় অনেকেই নানা অনুষ্ঠানের নামে আমার কাছে বাস রিকুইজিশন নিতে আসে। এজন্য নানা ধরণের চাপ প্রয়োগও করে থাকে। তখন এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমাকে বাস বরাদ্দ দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস অনেক আগে থেকেই মিসইউজ (অপব্যবহার) হয়ে আসছে। তবে এরপর থেকে আমরা আরও সতর্ক হবো।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন ভিসি অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনভুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে বাস রিকুইজিশন নিতে পারে। তবে কোনওক্রমেই তা মিসইউজ (অপব্যবহার) করা যাবে না। এখানে যদি অপব্যবহার হয়ে থাকে এটা দুঃখজনক। আমি সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিবো।
এনএস/