ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:০৪ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ রবিবার

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। প্রতি ১০ হাজার মোটরসাইকেলের মধ্যে বাংলাদেশে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে ২৮.৪টি। বাংলাদেশের পর কম্বোডিয়ায় ১১.৯, লাওসে ১১.৫, থাইল্যান্ডে ১১.২, ভারতে ৯, মিয়ানমারে ৮.৬, মালয়েশিয়ায় ৪.৪, ভিয়েতনামে ৪.১, ইন্দোনেশিয়ায় ২.৫ এবং ভুটানে ২.১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্যে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এআরআই ‘আ রিভিউ অব মোটরসাইকেল সেফটি সিচুয়েশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বরাত দিয়ে এআরআইয়ের গবেষকরা জানান, এ তালিকায় সবচেয়ে নিচে আছে ভুটান। 

গবেষণাপত্রের ভাষ্যমতে, দেশের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ৭৪ শতাংশই মফস্বলে ঘটে। এর বড় কারণ হলো সেখানে ট্রাফিক তদারকি কম। এছাড়া মহাসড়কে বেশি যাতায়াত করেন বলেও দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। মফস্বলের ৭৪ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার ৬৯ শতাংশই মহাসড়কে ঘটে। মফস্বলের বিপরীতে নগর-মহানগরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পরিমাণ ৩১ শতাংশ।

বয়স বিবেচনায় ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি মারা গেছেন। তবে ২১ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মৃত্যুর হারও উদ্বেগজনক। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার মোট মৃত্যুর ৫৬ শতাংশই ওই বয়সের এবং ৯৬ শতাংশই পুরুষ বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ হেলমেট না পরার কারণে এবং ১২ শতাংশ ত্রুটিযুক্ত হেলমেট পরার কারণে মারা গেছেন। শতকরা ৪৩ শতাংশ মোটরসাইকেলচালক হেলমেট ব্যবহার করেন না। এর কারণ হিসেবে চালকরা বলেছেন, হেলমেট পরার কারণে তারা বেশ গরম অনুভব করেন। ২৫ শতাংশ চালক হেলমেট পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না এবং ১১ শতাংশ চালক কাছাকাছি দূরত্বে যাতায়াতের সময় হেলমেট পরেন না। ৫ শতাংশ চালক বলেছেন, তাদের কোনো হেলমেট নেই।

অতিরিক্ত গতির কারণে ৫১ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়। অমনোযোগী অবস্থায় চালাতে গিয়ে ৪০ শতাংশ এবং মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪৯ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৭ সালের পর দেশের রাস্তায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। করোনা মহামারীর সময়ও যখন বছরের বেশির ভাগ সময় লকডাউন ছিল, তখনো মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। পরিসংখ্যান মতে, গত বছর মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩ হাজার ৬৪টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাই ১ হাজার ৮টি। গত বছর সড়কে মোট ৩ হাজার ৫৫৮টি প্রাণ ঝরেছে। মোটরসাইকেল একাই ১ হাজার ৯৭টি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

সপ্তাহের কী বার এবং দিনের কোন সময় বেশি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে, এ ব্যাপারেও এআরআইয়ের গবেষকরা সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছেন। এর মধ্যে শনিবার সবচেয়ে বেশি এবং রোববার সবচেয়ে কম মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। পরিসংখানে দেখা গেছে, শনিবার ১৬ শতাংশ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার ১৫ শতাংশ, সোম ও বুধবার ১৪ শতাংশ, মঙ্গলবার ১৩ শতাংশ এবং রোববার ১২ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। 

সময় বিবেচনায় সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। এক্ষেত্রে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে (সকাল ১০-১১টা) এবং বাড়ি ফেরার পথে (বিকাল ৪-৫টা) বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এএইচ/