মহাকাশ ভ্রমণে ইলন মাস্কের মহাপরিকল্পনা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৫১ পিএম, ৬ মার্চ ২০২১ শনিবার
মাইক্রোসফ্ট সংস্থার কর্ণধার বিল গেটসকে টপকে সম্প্রতি ‘ব্লুমবার্গ বিলিওনেয়ার ইনডেক্স’-এর বিচারে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় দু’নম্বরে জায়গা করে নিয়েছেন টেসলা কর্ণধার ইলন মাস্ক। এই বিলিয়োনিয়ার মহাকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে মহাপরিকল্পনা নিয়েছেন। প্রতিবার ৪-৫ জন করে অভিযাত্রীকে না নিয়ে অন্তত ১শ’ জনকে একসঙ্গে নিয়ে পাড়ি দিতে পারবে এমন মহাকাশযান তৈরি করতে যাচ্ছেন তিনি।
টেসলা ছাড়াও একাধিক সংস্থার মালিক তিনি। ‘স্পেসএক্স’ হল তাঁর তৃতীয় কোম্পানি। ২০০২ সালে এই কোম্পানি গড়ে তোলেন তিনি। এর ৬ বছরের মধ্যেই নাসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠাতে শুরু করে তাঁর সংস্থা।
টেসলা ছাড়াও একাধিক সংস্থার মালিক তিনি। ‘স্পেসএক্স’ হল তাঁর তৃতীয় কোম্পানি। ২০০২ সালে এই কোম্পানি গড়ে তোলেন তিনি। তার ৬ বছরের মধ্যেই নাসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠাতে শুরু করে তাঁর সংস্থা।
সাধারণ মানুষকে মহাকাশ ভ্রমণের সুবর্ণ সুযোগও এনে দিয়েছে স্পেসএক্স। এ বছরই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে এই মিশন চালু করার কথা ঘোষণা করল সংস্থাটি। ওই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইনস্পিরেশন ৪’। যা চলতি বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে চালু হওয়ার কথা।
মহাকাশে যাঁরা ভ্রমণ করতে চান, স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুল-এ করে তেমন ৪ জন নভোচারীকে নিয়ে যাওয়া হবে। আগামী ১৫ মাসে মোট ৭ বার এভাবেই ওই সংস্থা মহাকাশে ভ্রমণ করিয়ে আনবেন ইচ্ছুকদের।
এর বাইরে ইলন মাস্ক এমন একটি যান তৈরির চেষ্টায় আছেন যা তার মতে মহাকাশ অভিযানের ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে। এর নাম স্টারশিপ। প্রতিবার মাত্র ৪-৫ জন করে মহাকাশ অভিযাত্রীকে না নিয়ে অন্তত ১০০ জনকে একসঙ্গে নিয়ে পাড়ি দিতে পারবে এমন মহাকাশযান। ঠিক যেন যাত্রিবাহী বিমান!
এই ১০০ জনকেই নিয়ে উড়ে যাবে মঙ্গলগ্রহে। আর এর থেকেও আশ্চর্যের বিষয় হল ওই যান পুনর্ব্যবহারযোগ্য হবে। অর্থাৎ লালগ্রহ থেকে ফিরে এসে ফের ১০০ জন যাত্রী নিয়ে রওনা দিতে পারবে লালগ্রহে।
ইলনের এই স্বপ্নের মহাকাশযান স্টারশিপের দুটো অংশ। রকেট অংশটি হল সুপার হেভি এবং মূলত স্পেসক্র্যাফ্ট অংশটির নামই স্টারশিপ। দুটো মিলিয়ে দৈর্ঘ্য ৩৯৪ ফুট। অর্থাৎ ৩৬-৩৭ তলা বাড়ির সমান। শুধু স্টারশিপের দৈর্ঘ্যে ১৬০ ফুট।
এর মাঝামাঝি অংশে থাকবে জ্বালানি ট্যাঙ্ক। যাতে তরল মিথেন এবং তরল অক্সিজেন থাকবে। দুটোকে একসঙ্গে বলা হয় মিথাক্সল। মিথেন হল মূল জ্বালানি। যা যানটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। মিথেনকে জ্বলতে সাহায্য করবে তরল অক্সিজেন।
এবার রকেট অংশে আসা যাক। ৩ হাজার ৪০০ টন মিথাক্সল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন সুপার হেভির দৈর্ঘ্য ২৩০ ফুট। এর ইঞ্জিন ১০০ থেকে ১৫০ টন পর্যন্ত ভার বহন করতে পারবে।
মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার পর সুপারহেভি থেকে স্টারশিপ আলাদা হয়ে যাবে। কিন্তু অন্যান্য মহাকাশযানের মতো এই রকেট মহাকাশে উদ্বাস্তুর মতো ঘুরে বেড়াবে না। এটি ফের লঞ্চ প্যাডে ফিরে আসবে দ্বিতীয়বার মহাকাশ ভ্রমণ যাত্রীদের নেওয়ার জন্য।
স্টারশিপের মধ্যে ৪০টি আলাদা কেবিন করার পরিকল্পনা রয়েছে ইলনের। প্রতিটি কেবিনে ৪ থেকে ৫ জন করে থাকতে পারবেন। তবে প্রাথমিকভাবে ৩ জন করেই কেবিনে রাখার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। ফলে নূন্যতম ১০০ যাত্রী নিয়ে পাড়ি দেবে যানটি।
একইভাবে মহাকাশ ভ্রমণ সম্পূর্ণ হওয়ার পর স্টারশিপ ফিরে আসবে তার লঞ্চ প্যাডে। স্টারশিপের পরবর্তী অভিযানের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে।
ইতিমধ্যে ইলনের এই স্টারশিপ গড়ে তোলার প্রকল্পকে সাড়ে ১৩ কোটি ডলার অনুদান দেয় নাসা। স্টারশিপকে চাঁদে নামানোর পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
২০২৩ সাল নাগাদ প্রথমে চাঁদের কক্ষপথে এবং পরে মঙ্গলের কক্ষপথে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার কথা স্টারশিপের। চাঁদের কক্ষপথে ৭ দিন প্রদক্ষিণ করার পর ফিরে আসবে। এর জন্য দু-তিন বছর আগে থেকেই টিকিট বুকিং শুরু হবে।
ইলনের জন্ম ১৯৭১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। বাবা ছিলেন একজন বড় মাপের ইঞ্জিনিয়র। মা ছিলেন একজন জনপ্রিয় কানাডিয়ান মডেল। আজ যে খ্যাতি, যে প্রতিপত্তি ইলনের, তার ভিত পোঁতা ছিল তার শৈশবেই।
ছোট থেকেই ইলন নিত্যনতুন জিনিস আবিষ্কারের কথা ভাবতেন। নানা কিছু দিয়ে পরীক্ষাও করতেন সব সময়। তার কল্পনার মাত্রা ছিল বাঁধনছাড়া। সব সময় এতটাই কল্পনাতে বুঁদ হয়ে থাকতেন যে কারও ডাকে সাড়াও দিতেন না। সেই বাঁধনছাড়া কল্পনার জন্যই মানব সভ্যতার ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন হতে চলেছে তার হাতেই।
এএইচ/এসএ/