স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গিতে হোক বিয়ের সিদ্ধান্ত
আব্দুল করিম
প্রকাশিত : ০১:৪৩ পিএম, ৮ মার্চ ২০২১ সোমবার | আপডেট: ০২:৩০ পিএম, ৮ মার্চ ২০২১ সোমবার

বিয়ে জীবনের একটি স্বাভাবিক ঘটনা। একটা সমঝোতা, পারস্পরিক বোঝাপড়া। একটা দেনাপাওনার চুক্তি। বিয়ে মানে এমন একটি দায়িত্ব যেখানে দৈহিক, মানসিক, বংশধারা এবং আত্মিক-এ চারটি মৌলিক চাহিদাকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে সমন্বিত করা হয়। হাজারো প্রশ্নের জবাব।
প্রেম-বিয়ে-পরিবার বইয়ের আলোকে বিয়ের সাথে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হলো:
• অনেকে বলেন বিয়ে হচ্ছে ভাগ্যের ব্যাপার। আসলে বিয়ের ক্ষেত্রে ভাগ্যের ওপরে নির্ভর করতে নেই। কর্মের ওপরে নির্ভর করতে হয়। বিয়ে নির্ভর করে প্রস্তুতি আর প্রচেষ্টার ওপর। একটা ভালো চাকরি বা ভালো রেজাল্টের জন্যে যেমন একজন চেষ্টা করেন, পরিশ্রম করেন; তেমনি বিয়ের জন্যেও চেষ্টা করতে হবে। তবে অসুবিধাটা হয় যখন বিয়ের ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা থাকে না, থাকে শুধু কল্পনা। তারপর কল্পনার সাথে গরমিল হলে ভাগ্যকে দোষারোপ। তাই বিয়ের ব্যাপারে অবশ্যই পরিকল্পনা করতে হবে যে, আমি কেমন জীবনসঙ্গী চাই। সেইসাথে নিজের যোগ্যতাকেও বিকশিত করতে হবে বা নিজের যা যোগ্যতা সে অনুসারে পাত্র পাত্রী দেখতে হবে।
• সিনেমা, নাটক স্বামী বা স্ত্রী কেমন হবে তার যে কাল্পনিক চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিয়ের ক্ষেত্রে সুন্দর মুখ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। যোগ্য মানুষ দেখতে হবে। যাকে বিয়ে করবেন সে ছেলে হোক বা মেয়ে তার গুণ কতটুকু আছে এটা গুরুত্বপূর্ণ।
• বিয়েতে দেনমোহর বা কাবিন আর্থ-সামাজিক অবস্থান অনুসারে এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে হওয়া উচিত। অর্থাৎ দেনমোহরটা যেন জুলুম না হয়ে যায়। এটা সবসময় ঠিক হতে হবে সামর্থ্য অনুসারে। দেনমোহরের পাশাপাশি আরেকটি যে বিষয় চলে আসে সেটি হচ্ছে যৌতুক। শ্বশুরবাড়ি থেকে যৌতুক নেয়া একধরনের কাপুরুষতা।
• বিয়ে সারাজীবনের একটি ব্যাপার। কিছু সময়ের দেখা, কথা বলার ব্যাপার নয়। ম্যারেজ মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত সিভি দেখেই বিয়ে করে ফেলা ঠিক নয়। বরং সেই সিভিগুলোর ব্যাপারে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে, যাচাই করে তারপর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এজন্যেই বিয়ে সমসামাজিক, সমসাংস্কৃতিক, সমআর্থিক পরিমণ্ডলে হওয়া উচিত। তাহলে পাত্র বা পাত্রী সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।
• বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ের দুজনের দুজনকে পছন্দ থাকতে পারে কিন্তু ছেলে হোক বা মেয়ে-মা-বাবার দোয়া নিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। আর সত্য গোপন করে কখনো কাউকে বিয়ে করা ঠিক না। ছেলে বা মেয়ে মাদকাসক্ত, ভার্চুয়াল ভাইরাসে আক্রান্ত বা মানসিক সমস্যা আছে এমন তথ্য গোপন করে বিয়ে দেয়া অপরাধ।
• বিয়ের ব্যাপারে তরুণ-তরুণীরা নিজে না দেখে কখনো বিয়ে করবেন না। ছেলে হোন অথবা মেয়ে-মা-বাবা যতই দেখুক, আপনি নিজে না দেখে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ সংসার যার সাথে করবেন অবশ্যই তার সাথে আগে দেখা সাক্ষাত করে নিতে হবে।
• ছেলেপক্ষ-মেয়েপক্ষ মিলে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে একটাই। মেহেদীকা রাত, হলুদকা সন্ধ্যা, জামাই ভাত, বৌ-ভাত, এই ভাত, সেই ভাত-এগুলো স্রেফ অপচয়। আর মানুষ যাতে প্রচুর অপচয় করতে পারে, সেজন্যে ম্যারেজ ম্যানেজমেন্ট ফার্ম গড়ে উঠেছে। তারা অশ্লীল ফুটানিকে আরো উসকে দিচ্ছে। লোক-দেখানো কাজের ফলে অন্তর কখনো পরিতৃপ্ত হয় না বরং ভেতরে অশান্তি বাড়ে। যে বিয়েতে খরচ যত বেশি, সে বিয়েতে সুখের পরিমাণ তত কম।
• বিয়ের আগে বাগদান-এটাও এক ধরনের অবিদ্যা। এনগেজমেন্ট টেনশন বাড়ায়। কারণ ছেলেমেয়েকে বলা হচ্ছে, তোমাদের বিয়ে হবে। আবার এদিকে একটা সীমারেখা দিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, এতদূর মেলামেশা করা যাবে। এই এনগেজমেন্টের কোনো ধর্মীয় বা আইনগত ভিত্তি নেই। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্টজনেরা বলেছেন যে, কাবিন হওয়ার পর আমাদের সমাজের রীতি অনুসারে মেয়েকে ছেলের বাড়িতে উঠিয়ে নেয়া।
• বিয়ের অনুষ্ঠানে লোকদেখানো সামাজিক উপহার আদানপ্রদান বর্জন করুন। দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত, গিফট দেবো না, নেবোও না। বিয়ের দাওয়াতে আনন্দিতচিত্তে যাব, তৃপ্তি নিয়ে খাব, প্রাণভরে দোয়া করে আসব।
আরকে//