শিক্ষার্থীদের সাথে কেমন ব্যবহার করবেন
তমাল আবদুল কাইয়ুম
প্রকাশিত : ০৮:২০ পিএম, ৮ মার্চ ২০২১ সোমবার
একজন শিক্ষক জাতি নির্মাণের অন্যতম কারিগর। তিনি তার আদর্শ, চেতনা ও মূল্যবোধ শিক্ষার্থীদের মাঝে সঞ্চার করে একটি শুদ্ধাচারী জাতি তৈরি করতে পারেন। তাই নিজেকে যোগ্য শিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলতে কিছু বিষয় জেনে রাখা জরুরি। নিম্নে বিষয়গুলি তুলে ধরা হলো-
১. শিক্ষাকতায় আপনি কেন এলেন তা নিজের কাছে স্পষ্ট রাখুন। চাকরি, টাইম-পাস করা অথবা পার্টটাইম জব হিসেবে নয়, শিক্ষকতাকে একটি মহান কাজ বা মিশন হিসেবে গ্রহণ করুন। তাহলেই আপনি শিক্ষকতায় ভালো করবেন।
২. 'অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা' নয়, 'আলোকিত মানুষ গড়ার জন্যে শিক্ষা'–এ নীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড়ান।
৩. ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীদের সাথে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করুন।
৪. এক শিক্ষার্থীকে কখনোই অন্য শিক্ষার্থীর সাথে তুলনা করবেন না। প্রত্যেক শিক্ষার্থীই অনন্য। তাদের এ অনন্যতাকে গুরুত্ব দিন। সর্বতোভাবে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করুন।
৫. বড় হওয়ার স্বপ্ন ও লক্ষ্য শিক্ষার্থীর মনে এঁকে দিন। এ লক্ষ্য অর্জনে তার ঘাটতিগুলোকে সহজভাবে নিন। তার যে কিছু অনন্য মেধা, গুণ ও যোগ্যতা আছে তা খুঁজে পেতে তাকে সাহায্য করুন।
৬. সম্বোধনে 'তুই' নয়, 'তুমি' বলুন। 'আপনি' বলা আরো ভালো।
৭. শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্কের সীমা বজায় রেখে বন্ধুসুলভ আচরণ করুন। তবে রসিকতা করে নিজের ব্যক্তিত্বকে ক্ষুণ্ন করবেন না।
৮. বিপরীত লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের সাথে কথায়, বডি ল্যাঙ্গুয়েজে শালীন ও মার্জিত আচরণ করুন। শোভন সীমা বজায় রাখুন।
৯. প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রান্তে জড়াবেন না। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদেরকে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিতে প্রলুব্ধও করবেন না। অন্যায় করা আর অন্যায়ে ইন্ধন দেয়া–দুটোই অপরাধ।
১০. ক্লাস নেয়ার আগে হোমওয়ার্ক করুন, প্রস্তুতি নিন। যে বিষয়ে পড়াচ্ছেন তার আপডেটেড কারিকুলাম সম্পর্কে অবহিত থাকুন। প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করুন।
১১. প্রতিটি ক্লাস নেয়ার আগে পাঁচ মিনিট চোখ বন্ধ করে মনের পর্দায় দেখুন ক্লাসের দৃশ্য–আপনার পড়ানো সবাই বুঝতে পারছে, আপনার সান্নিধ্য তাদেরকে আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত করছে, আপনার কথাগুলো তারা মনোযোগ দিয়ে শুনছে, উদ্বুদ্ধ হচ্ছে, আপনাকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করছে। দেখবেন, বাস্তবেও তা-ই হচ্ছে।
১২. ক্লাসে কম পড়িয়ে নিজের কোচিং বা ব্যাচে পড়তে প্রলুব্ধ করা বা বাধ্য করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার কাছে না পড়লে নম্বর কম দেবেন না; এমনকি এ ধরনের হুমকিও দেবেন না।
১৩. শিক্ষার্থীদের নীতিকথা বলার আগে নিজে তা অনুসরণ করুন। তাহলেই কথার শুভপ্রভাব তাদের ওপর পড়বে।
১৪. কোনো শিক্ষককে নিয়ে কটু মন্তব্য করবেন না। প্রশংসা করতে না পারলে মৌন থাকুন।
১৫. কোন শিক্ষকের চেয়ে কোন শিক্ষক ভালো পড়ান, কে বেশি জনপ্রিয়–এ জাতীয় প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীদেরকে বিভ্রান্তিতে ফেলবেন না।
১৬. কোনো শিক্ষার্থী পড়া বুঝতে না পারলে তাকে গালমন্দ করবেন না। তার ওপর বিরক্তও হবেন না; বরং ক্লাসের পরে সুবিধাজনক সময়ে পড়া বুঝিয়ে দিন। প্রশান্ত থাকুন, তাহলে তার মতো করে তাকে বোঝাতে পারবেন।
১৭. কোনো পড়া বোঝানোর সময় শিক্ষার্থীদের মতামত নিন–আসলেই তারা বুঝতে পারছে কিনা। এর প্রেক্ষিতে নিজের বক্তব্যকে আরো সহজ এবং গল্প ও উদাহরণসমৃদ্ধ করুন।
১৮. নিজেকে শিক্ষার্থীদের অবস্থানে নিয়ে গিয়ে ধৈর্য সহকারে বোঝানোর চেষ্টা করুন।
১৯. কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে বলুন যে, এর উত্তর আপনি পরে জেনে জানাবেন। এতে আপনার জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। ভুল উত্তর দেয়া বা কোনোরকমে গোঁজামিল দেয়া বা এরকম প্রশ্ন কেন করেছে ভেবে রাগান্বিত হওয়া থেকে বিরত থাকুন।
২০. ভালো রেজাল্টধারীদের প্রতি সুনজর দিতে গিয়ে যারা অপেক্ষাকৃত কম ভালো করছে, তাদের প্রতি অমনোযোগী হবেন না। আপনার একটু সহযোগিতা ও চেষ্টা তাদেরকেও এগিয়ে নেবে।
২১. দীর্ঘদিন কোনো শিক্ষার্থী আপনার ক্লাসে অনুপস্থিত অথবা অনিয়মিত থাকলে নিজ উদ্যোগে তার ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করুন।
২২. শিক্ষার্থীদের নাম জানুন ও মনে রাখুন। 'অ্যাই ছেলে/ অ্যাই মেয়ে' কিংবা রোল নম্বর ধরে ডাকার চেয়ে নাম ধরে ডাকলে শিক্ষার্থীরা বেশি অনুপ্রাণিত হয়।
২৩. জন্মদিনে স্কুলে কেক, ফাস্টফুড, চকলেট আনতে উদ্বুদ্ধ না করে শিক্ষার্থীদের গাছ লাগানো, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বা যে-কোনো সৎকর্মে অনুপ্রাণিত করুন।
২৪. শিক্ষার্থীদেরকে অপদার্থ, নালায়েক, মূর্খ, বোকা–এ জাতীয় নেতিবাচক কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। ইতিবাচক কথার মাধ্যমে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করুন।
২৫. বকাঝকা ও গালিগালাজের মাধ্যমে মানসিক অত্যাচার কিংবা শারীরিক শাস্তি আসলে শিক্ষক হিসেবে আপনার পরাজয়কেই প্রমাণিত করে। তাই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের মনোভাব বুঝে সংশোধনের জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।
২৬. কথা শোনে না, পড়তে চায় না, অমনোযোগী–শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে এভাবে ঢালাও অনুযোগ না করে তাদের প্রতি সমমর্মী হোন, তাদেরকে মনোযোগী করে তোলার কৌশলগুলো নিয়ে বেশি ভাবুন ও পদক্ষেপ নিন।
২৭. জনপ্রিয় শিক্ষক হওয়ার বাসনা থেকে শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যক্তিগত ফোনালাপ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকুন।
২৮. সময়মতো ক্লাসে আসুন। দেরি করে ক্লাসে এসে স্লাইডের মাধ্যমে চটজলদি পড়িয়ে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা থেকে বিরত থাকুন।
২৯. ক্লাস চলাকালে মোবাইলে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। ফোন সাইলেন্ট মোডে রাখুন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত অবস্থায় বিনোদনের জন্যে ইন্টারনেট, ফেসবুক অথবা ইউটিউবে ব্যস্ত থাকবেন না।
৩০. কোনো শিক্ষার্থী কথা বলতে এলে ধৈর্য ধরে তার কথা শুনুন। সেই মুহূর্তে সম্ভব না হলে বা শিক্ষার্থী পরে কোনো সময় দেখা করতে চাইলে এপয়েন্টমেন্ট দিন। নিজের রুমের চেয়ে টিচার্স কমনরুমে কথা বলাকে অগ্রাধিকার দিন।
৩১. শিক্ষার্থীদের কাছে নিজেকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করুন।
এসি