ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

কোয়াড সম্মেলন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অংশ হয়ে উঠবে: মরিসন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৮ এএম, ৯ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত ফোরাম কোয়াড্রিলেটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ বা কোয়াডের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ মাসেই। ভার্চুয়াল ফরমেটে সম্মেলনটি আয়োজনের উদ্যেগ নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আশা করছেন কোয়াড সম্মেলন ধীরে ধীরে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অংশ হয়ে উঠবে।

সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মরিসন জানিয়েছেন, কোয়াডের সম্মেলন নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিদি সুগার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কোয়াড বৈঠকে অংশগ্রহনের জন্য আমন্ত্রন পেয়েছেন কিনা এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে মরিসন বলেন, ‘কোয়াড নেতাদের প্রথম সমাবেশের অপেক্ষায় রয়েছি আমি। ’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রে জানা গিয়েছে আগামি ১২ মার্চ ভার্চুয়াল সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন মন্তব্য করা হয় নি। 

এদিকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কোয়াডভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের তৃতীয় বৈঠকটিও যুক্তরাষ্ট্রের নের্তৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এ অঞ্চলজুড়ে চীনের নানা কর্মকান্ড নিয়ে অব্যাহত উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে আঞ্চলিক অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নীতিমালানির্ভর বিশ্ব গড়তে কোয়াডের পূর্বে দেয়া প্রতিশ্রুতির পুনর্ব্যক্ত করা হয়। 
 
মূলত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব রুখতে ২০০৭ সালে কোয়াড গঠন করা হয়। তবে দীর্ঘদিন গ্রুপটি প্রায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিলো। পরবর্তীতে চারটি দেশের উর্ধ্বগত কর্মকর্তাদের বৈঠকের মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালে কোয়াড পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ফোরামটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থ জড়িত রয়েছে এমন বিষয়গুলো নিয়ে আরো নিবিঢ়ভাবে কাজ করার ইচ্ছাই প্রতিফলিত হয়। সেসঙ্গে গ্রুপটির সঙ্গে ভারতের স্বাচ্ছন্দ বোধ করার বিষয়টিও এতে বোঝা যায়। 

সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মরিসন আরো জানান, প্রথম ভার্চুয়াল সম্মেলনের মাধ্যমে কোয়াড নেতারা প্রথমবারের মতো একত্রিত হচ্ছে। এরপর তারা সামনাসামনিও বৈঠক করবে। তিনি আরো বলেন, ‘ ফোরামটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি অংশ হয়ে উঠবে। কিন্তু তবে এরসঙ্গে বড় সচিবালয় এবং আমলাতান্ত্রিকতার কোন বিষয় থাকবে না। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা আনয়নে এটি হবে চারটি দেশ এবং এই দেশগুলোর চার নেতার সম্মিলিতভাবে কাজ করার মাধ্যম।’

তিনি আরো বলেন, ‘ আমাদের আসিয়ান বন্ধুদের জন্যও কোয়াড ইতিবাচক হবে। এছাড়াও গোটা দক্ষিণপশ্চিম প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলকে নিজেদের সার্বভৌমত্ব নিয়ে নিশ্চিত করবে এবং নিজস্ব ভবিষ্যত বিষয়ে নিশ্চিত করবে। ’

মরিসন জানান, গত তিন ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনার সময়ই কোয়াড সম্মেলনের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বিভিন্ন বন্দোবস্তের মধ্যে কোয়াড কেন্দ্রীয় অবস্থানে রয়েছে। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ইতোমধ্যে পরিস্কার করে জানিয়েছেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও শান্তি আনয়নে’ বহুপাক্ষিক সংগঠনগুলো পুনঃবিন্যাসের ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘আমরা এ ধরনের মনোভাবকে স্বাগত জানাই এবং উৎসাহ দিচ্ছি।’ 

নিরপত্তার দিক থেকে চীনকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে আসছে যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বমঞ্চেও দেশটি প্রধান প্রতিদ্বদ্বী। এ অবস্থায় নিজেদের আরো শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে কোয়াড সম্মেলন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রই প্রথমে অগ্রসর হয়েছে।  
 
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়ই কোয়াড গঠন ও সম্প্রসারণের সামগ্রিক কাজ শেষ করা হয়। ফলে চীনের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কোয়াডকে ব্যবহার করতে বাইডেন প্রশাসন যথাসম্ভব সতর্ক ভূমিকা নিবে বলেই ধারনা করা হচ্ছে।  

চীনের কর্মকর্তারা কোয়াডকে ‘মিনি ন্যাটো’ হিসেবে দেখছে। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কোয়াডের সব কার্যক্রমের লক্ষ্য তৃতীয় পক্ষকে ঘায়েল করা। যদিও কোয়াড সংশ্লিষ্টরা এ অভিযোগ প্রত্যাখান করেছে।

এসি