কালজয়ী গানের গীতিকার ফজল-এ-খোদা
মোহাম্মদ মাসুদ খান
প্রকাশিত : ১১:২৪ এএম, ৯ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৩:২৫ পিএম, ৯ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার
গীতিকবি ফজল-এ-খোদা
আজ ৯ মার্চ ২০২১, গীতিকবি ও শিশু সংগঠক ফজল-এ-খোদা’র ৮০তম জন্মবার্ষিকী। বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক এই গুণী মানুষটির জন্ম ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ, পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে। শিশু কিশোর সংগঠন শাপলা শালুকের আসরের প্রতিষ্ঠাতা ফজল-এ-খোদা ‘মিতা ভাই’ নামেও পরিচিত।
ফজল-এ-খোদা’র কর্মজীবন শুরু হয় বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসাবে ১৯৬৩ সাল থেকে। ১৯৬৪ সালে টেলিভিশনে তিনি তালিকাভুক্ত হন। তাঁর লেখা বহুগান শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। তারমধ্যে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি মুক্তিযুদ্ধে সাত কোটি মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে। ১৯৭১-এ অসহযোগ অন্দোলন চলাকালে তাঁর লেখা গণ সংগীত ‘সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম চলবে, দিন রাত অবিরাম’ গানটি তৎকালীন টেলিভিশন প্রচার করে।
ফজল-এ-খোদা’র কালজয়ী অনেকগুলো গান এখনও মানুষকে আন্দোলিত করে। ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’, ‘কলসি কাঁধে ঘাটে যায় কোন রূপসী’, বাসন্তী রং শাড়ী পড়ে কোন রমণী চলে যায়’, আমি প্রদীপের মতো রাত জেগে জেগে’, ‘প্রেমের এক নাম জীবন’, ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো, পথের ধুলোয় লুটোবে’ ইত্যাদি অজস্র গানের রচয়িতা ফজল-এ-খোদার গানগুলো প্রয়াত বশীর আহমেদ, আবদুল জাব্বার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, রথিন্দ্রনাথ রায়ের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের কণ্ঠে দর্শক শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছে।
আজাদ রহমান, আবদুল আহাদ, ধীর আলী, সুবল দাস, কমল দাশ গুপ্ত, আবেদ হোসেন খান, অজিত রায়, দেবু ভট্টাচার্য, সত্য সাহা প্রমুখের মতো সঙ্গীতজ্ঞ ফজল-এ-খোদা’র গানগুলোতে সুর করেছেন।
মূলত ছড়া দিয়ে তার লেখালেখি শুরু। তার ছড়াগ্রন্থের সংখ্যা ১০টি আর কবিতা গ্রন্থ ৫টি। এছাড়াও গান, নাটক, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে তার সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা ৩৩টি। এ ছাড়াও সত্তর দশকে শিশু কিশোরদের মাসিক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’ ফজল-এ-খোদা’র নিপুণ সম্পদনায় প্রকাশিত হতো।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হলে ফজল-এ-খোদা তাঁর দুঃখ এবং ক্ষোভ গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেন, যা সেই সময়ের কল্পনাতীত ঘটনা। বশীর আহমদের সুরারোপে মোহাম্মদ আবদুল জাব্বারের গাওয়া ফজল-এ-খোদা’র সেই গানটি ছিলো ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো/ পথের ধুলোয় লুটোবে/ সাত রঙে রাঙা স্বপ্ন-বিহংগ / সহসা পাখনা লুটোবে/ এমন তো কথা ছিলো না’। গানটি ১৯৭৬ সালে রেকর্ড ও বেতারে প্রচারিত হয়।
ফজল-এ-খোদা’র লেখা এবং মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের সুরারোপ করা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি ২০০৬ সালে বিবিসি’র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের সেরা ২০টি গানের তালিকায় ১২তম (দ্বাদশ) স্থান পায়।
১৯৬০ দশক থেকে শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ বছর ফজল-এ-খোদা অসংখ্য দেশাত্মবোধক, আধুনিক, লোক সংগীত, ইসলামী গান লিখেছেন।
৮০ ছাড়ানো গুণী এই মানুষটি আজ ডায়াবেটিক এবং কিডনি রোগ ছাড়াও জটিল ডাইমেন্সিয়া রোগে আক্রান্ত। ভুলে গেছেন তাঁর অতীত স্মৃতিসমূহ। মোহাম্মদপুর বাবর রোডের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন ফজল-এ-খোদা।
টেলিভিশন এবং সংবাদ মাধ্যমগুলো’র অনেকেই তাঁর বর্তমান অবস্থার খবর জানেন না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টির প্রতি যথাযথ দৃষ্টি দিবেন, যাতে তিনি সুচিকিৎসা পান এবং নতুন প্রজন্ম তাঁর সৃষ্টিকে জানতে পারেন।
৭ মার্চ ঘোষণা করা হয়েছে ২০২১ সালের স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তদের নাম, যাঁদের অধিকংশই পেয়েছেন মরণোত্তর পদক যা তাঁরা জীবিত থাকা কালীন পাননি। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সর্বকালের সেরা ২০টি গানের তালিকায় স্থান পাওয়া ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানের গীতিকার ফজল-এ-খোদা আজও কোনও পদক পাননি। হয়তো পাবেন মরণোত্তর কোনও স্বাধীনতা বা একুশে পদক, যা বেঁচে থাকা অবস্থায় কাম্য নয়।
বাবা মুহাম্মদ খোদা বক্স এবং মা মোসাম্মাৎ জয়নবুন্নেছা’র ঘরে জন্ম নেয়া তাদের ১ম সন্তান ফজল-এ-খোদা আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন ও দীর্ঘকাল বেঁচে থাকবেন জন্মদিনে এই প্রত্যাশা।
-লেখক ও সংগঠক
এনএস/