ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

অসংক্রামক রোগে বাড়ছে মৃত্যু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৫ এএম, ১১ মার্চ ২০২১ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:৩৮ পিএম, ১১ মার্চ ২০২১ বৃহস্পতিবার

স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনার বছরে (২০২০) দেশে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু সাড়ে ২২ ভাগ বেড়েছে। ব্রেইন ক্যান্সারে মৃত্যু বেড়েছে ৪৮ ভাগ, ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৮৮ শতাংশ। কিডনি রোগে মৃত্যুহার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আত্মহত্যাও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএস জরিপে দেখা যায়, করোনাকালে হৃদরোগ, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ, ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্র ও কিডনিসহ অসংক্রামক রোগে মানুষের মৃত্যু বেড়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে ২০১৯ সালে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৫৯ জন। ২০২০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৪০৮ জন। ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার ৫০২ জন, ২০২০ সালে এটি বেড়ে হয়েছে ৮৫ হাজার ৩৬০ জনের। ব্লাড ক্যান্সারে মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ হাজার ৬২০ থেকে এক বছরের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে ২১ হাজার ৪৭১ জনে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে যে প্রাক্কলন তুলে ধরা হয় তাতে দেখা যায়, অসংক্রামক রোগে বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এ তালিকায় রয়েছে হৃদরোগ, ক্যান্সার, কিডনি রোগ, ডায়বেটিস, শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ আরও কিছু রোগ। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়া এবং কায়িক পরিশ্রম কম করায় হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে।

ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত এক বছরে করোনায় মারা গেছেন ৮ হাজার ২৪৮ জন। আত্মহত্যায় মারা গেছে ১১ হাজার ২৫৯ জন। সে হিসেবে করোনার চেয়ে হার্ট অ্যাটাক বা ক্যান্সারে মৃত্যু অনেক বেশি লক্ষ্য করা গেছে। কিডনি রোগে ২০১৯ সালে ১০ হাজার ৬০০ মানুষ মারা গেলেও ২০২০ সালে মারা গেছে ২৮ হাজার মানুষ। লিভার ক্যান্সারে মৃত্যু ২১ হাজার ৩০০ থেকে বেড়ে ২৯ হাজার ৮৫০ হয়েছে।


 
করোনার সময়ে আত্মহত্যাও বেড়েছে। ২০১৯ সালে দেশে ৯ হাজার ৩১০ জন আত্মহত্যা করেছিল। করোনার বছরে আত্মহত্যা করেছে ১১ হাজার ২৫৯ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে দেশে ডায়বেটিকসে মারা গেছেন ২২ হাজার ৩০ জন। ২০২০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৫ হাজার। ২০২০ সালে নাক-কান-গলার অসুখে মারা গেছে ২ হাজার ৮৮০ জন, যা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। তবে চিকনগুনিয়া, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার অর্ধেকের বেশি কমেছে। 

জন্ডিসে মৃত্যুর হার দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৯ সালে জন্ডিসে ৫ হাজার ৫০৭ জন মারা গেলেও ২০২০ সালে মারা গেছে ১০ হাজার ৯৯৭ জন। প্রতিবেদন অনুযায়ী করোনার বছরে মাদক গ্রহণের ফলে মৃত্যুর হারও বেড়েছে। চর্মরোগে মৃত্যু ১৩১ থেকে বেড়ে ১৫৭১ হয়েছে। নারীদের জরায়ুর ক্যান্সারে মৃত্যু দ্বিগুণ বেড়ে ৪ হাজার ৩২০ হয়েছে। 

বিবিএসের হিসাবে দেশে ২০২০ সালে ৭৫ রকমের রোগ ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছে ৮ লাখ ৫৪ হাজার ২৫৩ জন। অর্থাৎ গড়ে দুই হাজার ৩৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের বছরের চেয়েও ২০২০ সালে মৃত্যু বেড়েছে তিন শতাংশ। তবে এইচআইভি বা এইডসে আক্রান্ত হয়ে গত দুই বছরে দেশে একজনেরও মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিএস।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী ২০২০ সালে করোনায় মারা গেছে ৮ হাজার ২৪৮ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন মৃত্যুহার ২২ দশমিক ৬০। আর দেশে বিভিন্ন রোগে মৃত্যু হচ্ছে ২ হাজার ৩৪০ জনের।

বুধবার (১১ মার্চ) আগারগাঁস্থ বিবিএস ভবনে ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক্স’ শিরোনামে পরিচালিত জরিপের তথ্য তুলে ধরেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। এ সময় বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, সারা বছরব্যাপী দেশের ২ হাজার নমুনা এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জরিপটি করা হয়েছে। জন্ম-মৃত্যুসহ আর্থসামাজিক অবস্থা জানতে প্রতিবছর এ জরিপটি করা হয়। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে এর ফলাফলগুলো কাজে লাগবে বলে তিনি মনে করেন। অপুষ্টি, ডেঙ্গু, পোলিও, ডিপথেরিয়া, জলাতঙ্কসহ নানা কারণে মানুষের মৃত্যু কমে আসলেও হার্ট অ্যাটাকসহ বিভিন্ন কারণে মৃত্যুহার বেড়েছে।

এএইচ/এসএ/