স্বনির্ভরতা অর্জনে রাজস্ব আহরণই মূল লক্ষ্য: এনবিআর চেয়ারম্যান
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৩০ পিএম, ১১ মার্চ ২০২১ বৃহস্পতিবার
আসন্ন ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের প্রাক্কালে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সদস্য ও অত্র অঞ্চলের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে ১১ মার্চ সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
সভায় চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন চেম্বার পরিচালক এ. কে. এম. আক্তার হোসেন, চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালকবৃন্দ মাহফুজুল হক শাহ, মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী ও মোহাম্মদ শাহিন আলম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ’র সদস্য (ফাইন্যান্স) মোঃ কামরুল আমিন, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি মোঃ আবু মোরশেদ চৌধুরী, রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি মোঃ আবদুল ওয়াদুদ, বান্দরবান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি কিউ শ্বে হ্লা, উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা, বিএসএম গ্রুপ’র চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন’র সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন চৌধুরী (বাচ্চু), রিহ্যাব’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, কনফিডেন্স সিমেন্ট’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশন’র সভাপতি মোঃ এনায়েত উল্লাহ উদ্দিন, বিএসআরএম গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (ফাইন্যান্স এন্ড একাউন্টস) শেখর রঞ্জন কর, টেরী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ ফার্ণিচার শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান, বিজিএপিএমইএ’র পরিচালক কে.এইচ. লতিফুর রহমান (আজিম), আন্তঃজিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমেদ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম বলেন, স্বনির্ভরতা অর্জনে রাজস্ব আহরণই মূল লক্ষ্য। জাতীয় বাজেট প্রণয়নে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজ কর্তৃক পরামর্শসমূহ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় বলে মন্তব্য করে বলেন-একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই রাজস্ব আহরণ করা হয়। যাদের সক্ষমতা আছে তারাই কর প্রদান করেন এবং দেশের উন্নয়নে ও জনগোষ্ঠির কল্যাণে ব্যাপক অবদান রাখেন। তিনি আরও বলেন-শুধু কর আদায় করাই সরকারের একমাত্র কাজ নয় বরং স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ও রক্ষা, দেশীয় উৎপাদন, কৃষি, স্বনির্ভরতা অর্জন, পরিবেশ সুরক্ষার কথা চিন্তা করেই করারোপ করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর চেয়ারম্যান একটি ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি প্রণয়নে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছতার জায়গাটা নিশ্চিত করার আহবান জানান। তিনি কর ফাঁকি রোধে এনবিআর প্রবর্তিত অনলাইন ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিভিএস) এপ্লিকেশন চালুর প্রসংগ উল্লেখ করে দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) কর্তৃক ডিভিএস ছাড়া অডিট রিপোর্ট গ্রহণ করা হবে না বলে জানান। আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম সকলকে কমপ্ল্যায়েন্সের মধ্যে আসার আহবান জানিয়ে বলেন-এক্ষেত্রে রাজস্ব প্রক্রিয়া অধিকতর সহজ সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণসহ হয়রানিমুক্ত কর ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করেন।
সভায় স্বাগতঃ বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও রাজস্ব উপযোগী বাজেট চাই। তিনি করমুক্ত আয় সীমা বৃদ্ধি, পাবলিকলি ও নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানীর করহার কমানো, সারচার্জ এর ক্ষেত্রে নীট পরিসম্পদের পরিমাণ তিন কোটি টাকার পরিবর্তে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত শূণ্য করার প্রস্তাব করেন। আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক সংক্রান্ত মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের পৃথক বেঞ্চ স্থাপন, অর্থডক্স বা নিবিড় পরিদর্শন বাতিল করা, আয়কর অধ্যাদেশের ৫২ ধারায় স্থানীয় উৎপাদকদের অগ্রিম কর থেকে অব্যাহতি প্রদান করে সাধারণ নিয়মে কর নিরুপন বা পৃথক ধারা প্রণয়ন, কর নিষ্পত্তি আপিলের ক্ষেত্রে গড়ে ৫% কর জমাদান, লোকাল এলসি’র ক্ষেত্রে ২% করারোপ প্রত্যাহার, মোট প্রাপ্তি ৩ কোটি টাকা হলে ০.৫%, ন্যূনতম আয়করের বিধান রহিতকরণ, খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত অর্থ আইন ২০২০ সংশোধন, ইস্পাত শিল্পে অগ্রিম কর সমন্বয়, গাড়ীর ট্যাক্স টোকেন নবায়নে ২ বছরের পরিবর্তে পূর্বের ন্যায় ১ বছরের অগ্রিম কর আদায় করা, কোয়ার্টারলি ট্যাক্স পরিশোধে বিলম্ব হলে জরিমানা হতে অব্যাহতি প্রদান, কর অবকাশ খাত বর্ধিতকরণ, ভ্যাটের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা এবং সেক্টর অনুযায়ী বিভিন্ন হারে নির্ধারণ, এলপিজি খাতে খুচরা বিক্রয়ের উপর আরোপিত ৫% মূসক বাদ দিয়ে পুনরায় ট্যারিফ মূল্য চালুকরণ এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সিলিন্ডার বিক্রিতে ৫% মূসক প্রত্যাহার, জিপসাম বোর্ডের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার হ্রাস, কোটেড রডস, কোর্ড ওয়্যার, বেইজ মেটাল এর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করে স্থানীয় শিল্পে সহযোগিতা করার আহবান জানান চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
অন্যান্য বক্তারা চট্টগ্রাম কাস্টমস এর জনবল বৃদ্ধি, ল্যাবরেটরীর পরীক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি, সব শুল্ক স্টেশনে অভিন্ন শুল্কহার প্রচলন, বছরের বিভিন্ন সময় না করে নির্দিষ্ট সময় ও ডেস্কে অডিট করা, বন্দরে অপেক্ষমাণ ৭ হাজার কন্টেইনার দ্রুত নিলাম করা, রপ্তানি পণ্যের জন্য স্ক্যানার সংখ্যা বৃদ্ধি করা, ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম কর ৪% থেকে হ্রাস করে ১% করা, দেশীয় লবণ শিল্প রক্ষায় সোডিয়াম জাতীয় পণ্য আমদানিতে নজরদারী বৃদ্ধি করা, আয়োডিনের ট্যাক্স ৩০% থেকে কমিয়ে ১০% করা, শুটকি তৈরীর মেশিন আমদানি শুল্ক মুক্ত করা, গভীর সমুদ্র বন্দরে সিএন্ডএফ নিয়োগদানে স্থানীয়দের জন্য কোটা নির্ধারণ, ই-কমার্স আগামী ২/৩ কর মুক্ত রাখা, নারী উদ্যোক্তাদের কর ব্যবস্থা সহজ ও নমনীয় করা, ফ্ল্যাট পুনরায় বিক্রির ক্ষেত্রে করহার কমানো, মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করে ৫% সুদে আবাসনে ঋণ প্রদান, আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখা, প্রত্যেক কোম্পানীকে ফাইন্যান্সিয়াল রির্পোটিং কাউন্সিল এর আওতায় ফাইন্যান্সিয়াল ডিসক্লোজার প্রদানে বাধ্য করা, মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য সংকট নিয়ন্ত্রণে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ, নীতিমালা গ্রহণ ও করারোপের ক্ষেত্রে সাম্যতা নিশ্চিত করা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় ভ্যাট চালানের মাধ্যমে আসবাবপত্র বাজারজাতের সুযোগ প্রদান, প্রশাসনিক দূর্বলতা দূরীকরণ, উপজেলা পর্যায়ে সক্ষম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর করারোপ করা, আরএমজি রপ্তানিতে ১% প্রণোদনা প্রদানে দীর্ঘসূত্রিতা দূরীকরণ, মালবাহী পরিবহনের টায়ার আমদানিতে শুল্ক হ্রাস করা, শিপব্রেকিং এ বিভিন্ন পণ্যের উপরে পৃথক কর প্রত্যাহার এবং ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত লুব অয়েলের পৃথক শুল্ক ঘোষণা, আমদানির পূর্বে সব ধরণের প্রক্রিয়া সম্পন্নকরণ, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে জটিলতা দূরীকরণ ইত্যাদি প্রস্তাব তুলে ধরেন।
এ সময় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মোঃ আলমগীর হোসেন, সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া ও মোঃ মাসুদ সাদিক, চট্টগ্রামের বিভিন্ন কর অঞ্চলের কমিশনারবৃন্দ সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ, এম এম ফজলুল হক, গোলাম মোঃ মুনীর, মোঃ মাহবুবুজ্জামান, মোঃ হেলাল উদ্দিন সিকদার, এ কে এম হাসানুজ্জামান, মোহাম্মদ ফখরুল আলম, এ.কে.এম. মাহবুবুর রহমান, মোঃ আকবর হোসেন, চেম্বার পরিচালকবৃন্দ মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), ছৈয়দ ছগীর আহমদ, অঞ্জন শেখর দাশ, বেনাজির চৌধুরী নিশান, মোঃ আবদুল মান্নান সোহেল, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, সালমান হাবীব ও সাকিফ আহমেদ সালাম, বিকেএমইএ’র প্রাক্তন পরিচালক শওকত ওসমান, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, রিহ্যাব’র পরিচালক মাহবুব সোবহান জালাল তানভীর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অন্যান্য সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
আরকে//