ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮০

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:০৪ এএম, ১৬ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:০৬ এএম, ১৬ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন পীড়ন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশটিতে চলমান এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০ জনে। আজ মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সিএনএ-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে রোববার (১৪ মার্চ) সকালে দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ৩৯ জন নিহত ও বহু সংখ্যক আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। পরে আহতদের মধ্য থেকে আরও ৩২ জনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ জনে।

এরইমধ্যে মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ও বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গনের হ্লাইংথায়া শিল্পাঞ্চলে নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

এর আগে হ্লাইংথায়া এলাকার একটি হাসপাতাল ৩৪টি মৃতদেহ গ্রহণ করে ও ৪০ জন আহতকে ভর্তি করে। এছাড়া ওই এলাকায় আরও ৫টি মৃতদেহ পাওয়া যায়। এসব ঘটনার পর ইয়াঙ্গনের হ্লাইংথায়া ও শোয়েপিথা শিল্পাঞ্চলে সামরিক আইন জারি করা হয়েছে।

এদিকে মিয়ানমারের চীনা দূতাবাস বলেছে, হ্লাইংথায়ায় অজ্ঞাত হামলাকারীরা চীনা গার্মেন্ট কারখানায় হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে, এতে অনেক চীনা কর্মী আহত ও অনেকে ভিতরে আটকা পড়েছেন; তারা চীনা সম্পত্তি ও নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

চীন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা রড, কুঠার এবং পেট্রোল নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে অন্তত দশটি কারখানার ক্ষতিসাধন করেছে। এগুলো মূলত তৈরি পোশাকের কারখানা কিংবা গুদাম। একটি চীনা হোটেলও হামলার লক্ষ্যে পরিণত হয়।

মিয়ানমারের চীন দূতাবাস তাদের ফেসবুক পাতায় লিখেছে, কারখানাগুলোতে লুঠপাট হয়েছে, ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। বহু চীনা কর্মী আহত হয়েছে এবং অনেকে আটকে পড়েছে।

ওই এলাকায় রোববার দিনভর গুলির শব্দ শোনা যায়। রাস্তায় সেনাবাহিনীর ট্রাক দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীর বালির বস্তা, টায়ার এবং কাঁটাতার দিয়ে অবরোধ তৈরি করে। কিছু বিক্ষোভকারীকে দেখা যায় অস্থায়ী ঢাল তৈরি করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আহতদের উদ্ধার করার জন্য।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে একজন স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, "আমার চোখের সামনেই তিনজন আহত ব্যক্তি মারা গেছে"। এদিকে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, পুলিশের একজন সদস্যও সেখানে নিহত হয়েছে।

মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীরা মনে করে চীন বার্মিজ সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে, যদিও রোববারের চীনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলার পেছনে কে বা কারা ছিল তা পরিষ্কার নয়। রোববারের রক্তপাতের পর আজ (সোমবার) ইয়াঙ্গন এবং মানদালে শহরের নতুন নতুন এলাকায় সামরিক আইন জারী করা হয়। অর্থাৎ এসব এলাকায় বিক্ষোভকারীদের এখন সামরিক আদালতে বিচার করা যাবে।

তবে সোমবারও মানদেলেহ শহরের কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে বলে জানা গেছে। মধ্যাঞ্চলীয় মিনগিয়ান এবং অংলান শহরেও বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালিয়েছে বলে জানা গেছে।

সাংবাদিক জনাথন হেড বলছেন রোববার সৈন্যদের ঠাণ্ডা মাথায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। তিনি বলছেন, “সৈন্যরা যেভাবে মৃতদেহ এবং আহতদের টেনে টেনে সরিয়েছে তাতে স্পষ্ট যে কোনো দয়ামায়া তারা দেখাতে রাজী নয়।’

“সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একাধিক ভিডিও ফুটেজ দেখেই বোঝা যায় বেসামরিক লোকজনকে তারা কতটা অগ্রাহ্য, অস্ত্র উঁচিয়ে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে...সেনাবাহিনী দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। বাইরের বিশ্বের উদ্বেগ-ক্ষোভ তারা পাত্তাই দিচ্ছেনা।’

বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, “যে সরকারকে তারা ক্ষমতাচ্যুত করেছে তাদের সাথে আপোষের কথা বিবেচনা করার বিন্দুমাত্র কোনো লক্ষণই সেনাবাহিনী এখনও দেখাচ্ছে না।’

এনএস/