ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর হাতেই রচিত হয়েছে আধুনিক বাংলাদেশের ভিত: অর্থমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:০৬ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২১ বুধবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি বলেছেন, বর্তমান প্রজন্মের কিংবদন্তী ও আধুনিক দেশের রূপকার বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করেছে। এ ঐতিহাসিক অর্জন তথা আধুনিক বাংলাদেশের ভিত বঙ্গবন্ধুর হাতেই রচিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ, যিনি বাঙালি জাতিকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন। মুক্তির সংগ্রামে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং সুদীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে প্রকৃত স্বাধীন সত্তা উপহার দিয়েছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বাধীন বাংলাদেশ। দীর্ঘ সাধনায় বাঙালির মানসলোকে তিনি সঞ্চার করেছেন স্বাধীনতার বাসনা। উপনিবেশ-শৃঙ্খলিত একটি ঘুমন্ত জাতিকে তিনি জাগ্রত করেছেন, তাদের করে তুলেছেন মুক্তিমুখী। একটি জাতির মানস প্রকল্পকে জাগিয়ে তোলাই বঙ্গবন্ধুর অক্ষয় অবদান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস ২০২১ উপলক্ষ্যে আজ কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, লালমাই ও সদর দক্ষিণ উপজেলা আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালী সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। অন্যদের মধ্যে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশীষ ঘোষ, নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ইউছুফ ভূইয়া, নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লামইয়া সাইফুল, লালমাই উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেক, লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এবং কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার বক্তৃতা করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, কৈশোরকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। বাঙালির প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রধান শক্তি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে তিনি ছিলেন সর্বদা বজ্রকণ্ঠ। কেবল রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মুক্তিই নয়, বাংলাদেশের ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতির মুক্তি-সংগ্রামেও অন্যতম নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বস্তুুত, তার সাধনার মধ্য দিয়েই ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এবং বাঙালির জাতীয়তাবাদের পূর্ণাঙ্গ রূপ সৃষ্টি হয়েছে। তার সৃষ্ট জাতীয়তাবাদের মহামোহনায় মিশেছে সমগ্র বাঙালি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের অত্যন্ত পছন্দ করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রয়াস নতুন প্রজন্মই এগিয়ে নেবে। বঙ্গবন্ধুর জীবনী আগামী প্রজন্মের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল, বাংলাদেশের মানুষ আজ সারা বিশ্বে গর্বের সাথে নিজেদেরকে প্রতিয়মান করতে পারেছে।

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পরিবহন ব্যবস্থার কারণে অর্থনীতি প্রায় অচল হয়ে পড়ে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, এ দুটি বিষয় যদি ঠিক না থাকে তাহলে একদিকে যেমন খাদ্য উৎপাদন করলেও সরবরাহের কারণে তা মানুষের কাছে পৌঁছাবে না, অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঠিকভাবে বিতরণ করা না গেলে শিল্প-কারখানা, শিক্ষা কোনোটাই হবে না। তাই এই দুটি বিষয়ের প্রতি তিনি অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু খাদ্য উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দিয়েছিলেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উন্নয়নের অন্তরায় বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু তখনই পরিবার পরিকল্পনার ওপর জোর দিয়ে দেশের ১২ থানায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। এ জনসংখ্যাকে শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার পরিকল্পনায় জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন, স্কুল ও কলেজগুলোকে জাতীয়করণ, উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন করেন। কারিগরি শিক্ষা, মেডিকেল কলেজ এবং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার দিকে জোর দেন বঙ্গবন্ধু।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন তার দেশের একজন মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে। তাই তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য গৃহনির্মাণ, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনে মনোযোগ দেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে এদেশের প্রত্যেক মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে বিদ্যুৎ, কৃষি ও সমবায়, শিল্প ও বিজ্ঞান, গৃহনির্মাণ, অর্থনীতি ও বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা, শিল্প ব্যবস্থাপনা জাতীয়করণ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, ভূমি ব্যবস্থাপনাসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছিলেন। তিনি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের সব ক্ষেত্রে একটি শক্ত নীতিমালা, পরিকল্পনা, অবকাঠামো রেখে গেছেন। আজও এ দেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোনো কাজ করতে গেলে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি জাতির পিতা নির্মাণ করে দিয়ে গেছেন, না হয় প্রতিষ্ঠানটির যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায়জাত করা হয়েছে তার শুরুটা জাতির পিতা করে দিয়ে গেছেন। তিনি অসংখ্য নীতি, পরিকল্পনা ও আইনের উদ্যোক্তা।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিশুদের জন্য একটি সুন্দর বাসযোগ্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, শিশুদের মাধ্যমেই তা পূরণ হবে। তিনি আছেন, থাকবেন বাঙ্গালীর মননে, চেতনায়, ভালোবাসায় অমর অক্ষয় এবং অব্যয় হয়ে। বাঙ্গালী জাতির অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে তিনি থাকবেন সারাজীবন। তিনি চিরঞ্জীব হয়ে আমাদের মাঝে থাকবেন সূর্যের মত দেদীপ্যমান’।

এসি