ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকের মুখে হাসি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
প্রকাশিত : ১০:৫৩ এএম, ২০ মার্চ ২০২১ শনিবার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখী চাষ। ইতোমধ্যে সূর্যমুখী গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। ফলন ভালো দেখায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। প্রতিদিন সৌন্দর্য পিয়াসুরা সূর্যমুখী ফুল দেখতে পরিবার নিয়ে দলবেঁধে যাচ্ছেন সূর্যমুখী বাগানে। ফুলে বাগানে গিয়ে অনেকেই আবার তুলছে ছবি। তরুণ-তরুণীরা তুলছেন সেলফি।
গত বছর আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় এই বছর ৭গুণ বেশি জমিতে কৃষকরা সূর্যমুখী চাষ করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো সূর্যমুখী চাষ করা হচ্ছে। পৌর এলাকাসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৬শ কৃষক ৬৫ হেক্টর (৬শ বিঘা) জমিতে এসডিআর-২৭৫ ও হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। গত বছর মাত্র ৮০ জন তাদের জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছিলেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তাসহ কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পৌর এলাকার ভাদুঘর, সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের খেওয়াই, রামরাইল ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর, মজলিশপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর, বুধল ইউনিয়নের চান্দিয়ারা গ্রামে বিকালে সূর্যমুখী বাগানে দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সৌন্দর্য পিয়াসুরা। চারদিকে হলুদের সমাহার। সূর্যমুখী ফুলের মন মাতানো ঘ্রাণ, প্রতিটি বাগানেই গুন গুন করে উড়ছে মৌমাছির দল।
বুধল ইউনিয়নের চান্দিয়ারা গ্রামের চাষি নূর মিয়া বলেন, আগে তিনি ৫ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির চাষ করতেন। বছর প্রথমবারের মতো জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে তাকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের খেওয়াই গ্রামের সূর্যমুখী চাষি মো. আকবর হোসেন জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত বছর উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে ১৪ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছিলেন। ফলন ভালো হওয়ায় তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছিলেন। বছর তিনি ১৮ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। এই বছর সূর্যমুখীর ফলন ভালো হবে বলে তিনি আশা করছেন।
পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামের শাহানুর ভূইয়া বলেন, গত বছর ৭ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে গাছে ফুল ধরেছে। প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণ-তরুণীসহ সব ধরনের বয়সি লোকজন আসে তার বাগান দেখতে। দর্শনার্থীরা বাগানে ঢুকে ছবি তোলার সময় গাছ ভেঙ্গে ফেলে। অনেকে আবার গাছ থেকে ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যায়। এজন্য কিছু ক্ষতি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত বছর ফেনী জেলার সোনাগাজীর মিলে সূর্যমুখীর তেল করা হতো। এবার স্থানীয়ভাবে সরিষার তেলের মেশিনে সূর্যমুখী ফুলের বীজ ভাঙানো যাবে।
ভাদুঘর সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসা লাকি আক্তার জানান, ফেসবুকে সূর্যমুখীর বাগান দেখে স্বপরিবারে বাগান দেখতে এসেছেন। সূর্যমুখী বাগান দেখে আমরা মুগ্ধ। আগে এক দুইটা সূর্যমুখীর গাছ দেখলেও এই প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা বাগান দেখলাম। ব্যাপারে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুন্সী তোফায়েল হোসেন বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত বছর প্রথমবারের মতো সদর উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ৮০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছিল।
বাম্পার ফলন হওয়ায় চলতি বছর কৃষকরা নিজেরাই উদ্বুদ্ধ হয়ে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ প্রকাশ করে। এ বছর সদর উপজেলায় ৬৫ হেক্টর (৬০০ বিঘা) জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। তিনি বলেন, চাষের ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা সূর্যমুখী ফুল থেকে বীজ তুলতে পারেন। প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। বিঘা প্রতি কৃষকরা ৯ থেকে ১০ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারেন। কৃষকদের স্বাবলম্বী করতেই সূর্যমুখী চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে।
ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বছর দ্বিতীয় বারেরমতো সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চাষিদের সব ধরনের সহায়তা করেছি। সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। আশা করছি ফলন খুবই ভালো হবে।
আরকে//