উইঘুরদের গণহত্যায় চীনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাই যথেষ্ট নয়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৫৭ পিএম, ২১ মার্চ ২০২১ রবিবার
শিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘুদের উপর চীনের নিপীড়নের জের ধরে শিনজিয়াং থেকে তুলা আমদানি নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ পদক্ষেপে চীন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দেশটিকে থামানোর জন্য তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ এরইমধ্যে অনেকটা ঘোরালোভাবেই চীন বিশ্বকে জানান দিতে চাইছে যে উইঘুর এবং শিনজিয়াংয়ে অন্যান্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা পরিচালনা নিয়ে যেসব প্রচারণা চলছে তার প্রতিক্রিয়ায় তারা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারে।
গত সপ্তাহে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া এক ঘোষণায় বলা হয়, ‘শিনজিয়াংয়ে উৎপাদিত তুলা আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে এখানকার অনেক কোম্পানি ও ব্যাক্তি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন।’ আর এই মুহুর্তে চীন বিষয়টির জন্য জার্মানির গবেষক আদ্রিয়ান জেনজকে দোষারূপ করছেন। জার্মানির এই একরোখা গবেষক উইঘুরদের বিরুদ্ধে নানারকম নিপীড়নের খবর বিশ্বের সামনে প্রকাশ করেছেন।
চীনের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ি, শিনজিয়াংয়ের একাধিক কোম্পানি তাদের লোকসানের জন্য জার্মানির গবেষক জেনজকে অভিযুক্ত করে স্থানীয় আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। চীন কিভাবে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে চাইছে এটি তারই একটি উদাহারন। আদালতের রায় জেনজের বিপক্ষে যাওয়ার পর তা বাস্তবায়নের জন্য কোম্পানিগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্র অথবা ইউরোপিয় আদালতের দ্বারস্থ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধেও আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে এ গবেষকের বক্তব্য কিন্তু সত্য ছিলো। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘সর্বপ্রথম স্বীকারোক্তি দেবো যে তারা সত্যিকার অর্থেই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে একজন শিক্ষাবিদকে মামলায় জড়ানোর মধ্যে হতাশাজনক ব্যাপারও রয়েছে।’
জেন সম্ভবত সঠিক কথাই বলেছেন। গত বছর চীন থেকে ৯ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র; যা শিনজিয়াংয়ে উৎপাদিত তুলার ৮৭ শতাংশ। তবে উইঘুরদের বিরুদ্ধে চীনের বিশালাকার অপরাধের প্রতিক্রিয়া হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলো এখন পর্যন্ত যে পদক্ষেপ গ্রহন করেছে তা কোনভাবেই সমান নয়। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিউ লাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির গবেষণাতেই বিষয়টি পরিস্কার উঠে এসেছে। গবেষণাটি ১৯৪৮ সালে গণহত্যা কনভেনশন প্রসঙ্গে চীনের আচরণ পরীক্ষা করে দেখেছে। সেখানে দৃঢ়তার সঙ্গে বলা হয়েছে, ‘একটি গোষ্ঠি হিসেবে উইঘুরদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রেসিডেন্ট শি সমন্বিত রাষ্ট্রীয়নীতি এবং কার্যক্রম শুরু করেছেন।’
গণহত্যা কনভেনশন পাঁচটি কাজকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন; কোন একটি রাষ্ট্র যদি এরমধ্যে একটিও কোন গোষ্ঠিকে ‘ধ্বংস করার ইচ্ছা’ নিয়ে সম্পন্ন করে তাহলে সে দেশ দোষী সব্যস্ত হবে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে এমন হাজার হাজার পৃষ্ঠার প্রমান রয়েছে যেখানে চীনের মধ্যে এই পাঁচটি দোষই খোঁজে পাওয়া গিয়েছে- উইঘুরদের হত্যা করা, তাদের মারাত্মকভাবে শারীরিক অথবা মানসিক ক্ষতি করা, তাদের শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, জন্মহার নিয়ন্ত্রনে জোরপূর্বক বাধ্য করা এবং উইঘুরদের সন্তানদের অন্যের জিম্মায় দিতে বাধ্য করা।
জানুয়ারিতে সেসময়ে ক্ষমতায় থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ও চীনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় শিনজিয়াংয়ে উৎপাদিত তুলা এবং টমেটো আমদানি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি কয়েকজন কর্মকর্তার উপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জার্মানির গবেষক কংগ্রেসকে উ্ইঘুর ফোর্সড লেবর প্রিভেনশন অ্যাক্ট পাস করার আহ্বান জানিয়েছেন। আইনটি কার্যকর হলে শিনজিয়াংয়ে বাধ্যতামূলক শ্রম আদায় বন্ধের প্রমান না পাওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে সবধরনের পণ্য আমদানি বন্ধ থাকবে। এর বাইরে বাইডেন প্রশাসনসহ অন্যান্য দেশগুলোও বেইজিংয়ে অনুষ্ঠেয় ২০২২ অলিম্পিকে অংশগ্রহন করা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। কারণ শি প্রশাসন যখন এক কোটি ২০ লাখ জনগনের বিশাল এক গোষ্ঠীকে ধ্বংসে মত্ত হয়েছে তখন তাদের এ পদক্ষেপ বেশ ছোটখাট বলেই মনে হবে।
এসি