রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজ ভারতের
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:০২ এএম, ২৯ মার্চ ২০২১ সোমবার
টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে সিরিজও জিতে নিলো টিম ইন্ডিয়া। ১-১ সমতার পর তৃতীয় ম্যাচটি ছিল রোমাঞ্চে ভরপুর। প্রথম দিকের ব্যাটসম্যানরা না পারলেও আট নম্বরে নেমে স্যাম কারানের ব্যাট শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করে। কিন্তু হার এড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড। ম্যাচটি ৭ রানে জিতে নিয়েছে ভারত।
রোববার টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৮.২ ওভারে অলআউট হয় বিরাট কোহলিরা। এর আগে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩২৯ রান। জয়ের লক্ষ্যে নেমে ইংল্যান্ডের আগের দিনের মারকুটে ব্যাটিং লাইনআপ ধসে পড়ে ভুবনেশ্বর কুমার ও শার্দুল ঠাকুরের তোপে। একসময় অসহায় আত্মসমর্পণের শঙ্কায় পড়েছিল সফরকারীরা। যদিও স্যাম কারানের ব্যাট তা আর হতে দেয়নি কিন্তু দলকে জেতাতেও পারেনি।
৯৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় চলে যায় ইংল্যান্ড। এরপর কিছুটা হলেও সামাল দেন ডেভিড মালান। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, ৬ চারে ৫০ বলে ৫০ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। আর আট নম্বরে নেমে ৮৩ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৯৫ রানে অপরাজিত থাকেন কারান। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ২২ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
এর আগে তৃতীয় ওভারের শেষ বলে ২৮ রানের মধ্যে দুই ওপেনার জেসন রয় (১৪) ও জনি বেয়ারস্টোকে (১) হারায় ইংল্যান্ড। ডেভিড মালানের সঙ্গে ৪০ রানের জুটি গড়ে মাঠ ছাড়েন আগের ম্যাচের বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান বেন স্টোকস (৩৫)। দলীয় ৯৫ রানের মধ্যে জস বাটলারও (১৫) বিদায় নেন।
উইকেট হারালেও রান রেটের গতি ঠিক পথেই ছিল। লিয়াম লিভিংস্টোনের সঙ্গে ৬০ রানের জুটিতে দলকে পথে রেখেছিলেন ডেভিড মালান। শার্দুল ঠাকুরের পর পর দুই ওভারে লিভিংস্টোন (৩৬) ও মালান (৫০) বিদায় নিলে বিপদে পড়ে ইংল্যান্ড।
১৬৮ রানের মধ্যে নেই ৬ উইকেট। দলীয় স্কোর দুইশতে রেখে মঈন আলীকে (২৯) আউট করেন ভুবনেশ্বর কুমার। ২৫৭ রানে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫৭ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন আদিল রশিদও (১৯)। এরপর কারানের সঙ্গে মার্ক উডের দুর্দান্ত প্রতিরোধ। ৪৮তম ওভারে এই জুটি ভেঙেই ফেলেছিলেন ভুবনেশ্বর। এলবিডাব্লিউর আপিলে আম্পায়ার ভারতের পক্ষে রায় দেন। তবে ইংল্যান্ড রিভিউ নিলে জীবন পান উড।
শেষ দুই ওভারে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ১৯ রান। ৪৯তম ওভারে ফের জীবন পান উড, মিডউইকেটে ক্যাচ ফেলে দেন শার্দুল। ওই ওভারে আসে ৫ রান। ১৪ রানের লক্ষ্যে শেষ ওভারের প্রথম বলে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট হন উড (১৪)। ভাঙে ৬০ রানের জুটি। দ্বিতীয় বলে রিচি টপলি একটি রান নিয়ে কারানকে স্ট্রাইকে আনেন। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ বলে রান নিতে পারেননি কারান। ম্যাচ চলে যায় তাদের নাগালের বাইরে। পঞ্চম বলে তিনি মারেন বাউন্ডারি। শেষ বলে আসেনি কোনও রান। তাতে ৭ রানের জয় পায় ভারত।
ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন শার্দুল। তিন উইকেট পান ভুবনেশ্বর।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানের ১০৩ রানের জুটিকে আদিল রশিদ টানা দুই ওভারে দুজনকে ফিরিয়ে দেন। রোহিত ৩৭ রানে বোল্ড হন, ৬৭ রান করে ধাওয়ান ফেরেন ক্যাচ দিয়ে।
আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান বিরাট কোহলি এদিন (৭) ও সেঞ্চুরিয়ান লোকেশ রাহুল (৭) বিদায় নিলে বিপদে পড়ে ভারত। কিন্তু ঋষভ পান্ত পঞ্চম উইকেটে হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়ে দারুণ জুটি গড়ে আবার তাদের পথে ফেরান। ৯৯ রানের জুটি গড়ার পথে দুজনেই ফিফটির দেখা পান। ৬২ বলে ৫ চার ও ৪ ছয়ে ৭৮ রান করা পান্তকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন স্যাম কারান। ৪৪ বলে ৬৪ রান করার পর পান্ডিয়া থামেন বেন স্টোকসের কাছে বোল্ড হয়ে।
শেষ দিকে ক্রুনাল পান্ডিয়া ও শার্দুল ঠাকুরের ৪৫ রানের জুটিতে তিনশ’ ছাড়ায় স্বাগতিকরা। মার্ক উড টানা দুই ওভারে তিন উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের রানের লাগাম টেনে ধরেন। শার্দুলকে ৩০ রানে বাটলারের ক্যাচ বানান। ৪৮তম ওভারে উডের জোড়া শিকার হন ক্রুনাল (২৫) ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা (০)। পরের ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারকে ফিরিয়ে স্বাগতিকদের গুটিয়ে দেন রিচি টপলি। ৪৮.২ ওভারে ৩২৯ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা।
ইংল্যান্ডের পক্ষে উড সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন। দুটি পেয়েছেন আদিল রশিদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৪৮.২ ওভারে ৩২৯ (রোহিত ৩৭, ধাওয়ান ৬৭, কোহলি ৭, পান্ত ৭৮, রাহুল ৭, হার্দিক ৬৪, ক্রুনাল ২৫, শার্দুল ৩০, ভুবনেশ্বর ৩, প্রসিধ ০, নাটরাজন ০*; কারান ৫-০-৪৩-১, টপলি ৯.২-০-৬৬-১, উড ৭-১-৩৪-৩, স্টোকস ৭-০-৪৫-১, রশিদ ১০-০-৮১-২, মইন ৭-০-৩৯-১, লিভিংস্টোন ৩-০-২০-১)।
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩২২/৯ (রয় ১৪, বেয়ারস্টো ১, স্টোকস ৩৫, মালান ৫০, বাটলার ১৫, লিভিংস্টোন ৩৬, মইন ২৯, কারান ৯৫*, রশিদ ১৯, উড ১৪, টপলি ১*; ভুবনেশ্বর ১০-০-৪২-৩, নাটরাজন ১০-০-৭৩-১, প্রসিধ ৭-০-৬২-০, শার্দুল ১০-০-৬৭-৪, হার্দিক ৯-০-৪৮-০, ক্রুনাল ৪-০-২৯-০)।
এএইচ/