ভারত ফেরত যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৫৭ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:৫৮ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার
দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে আবারও ভারত ফেরত যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) এই-সংক্রান্ত নির্দেশনার একটি প্রজ্ঞাপন বেনাপোল ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছেছে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস এর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সেই সাথে বিদেশ থেকে যে সব পাসপোর্টযাত্রী দেশে ফিরবে সে সব যাত্রী দেশে নিজ খরচে ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
ভারত থেকে যে সব পাসপোর্টযাত্রীরা বাংলাদেশে ফিরবেন বা আসবেন তাদের ভারতীয় সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ এর পিসিআর থেকে নির্ভূল করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট সাথে নিয়ে আসার পর চেকপোস্টে নিয়োজিত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা তাদের করোনা টেস্ট করে চেকপোস্ট থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর ১৪ দিন নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। যাত্রীদের যে এলাকায় বাড়ি সেখানকার স্বাস্থ্য ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হবে। আর টেস্টে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গেলে তাদের অবশ্যই কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। আর যারা নরমাল সার্টিফিকেট সাথে করে আনবেন তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশ মতে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে নিজ খরচে। এতে দুশ্চিন্তা ও হতাশায় পড়েছেন যাত্রীরা। সরকারি তত্ত্বাবধায়নে কোয়ারেন্টাইন চালুর দাবি জানিয়েছেন পাসপোর্টযাত্রীরা। তবে আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের অবশ্যই ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে বলে জানান ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব।
এদিকে পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় এই মুহূর্তে ভারত ফেরত যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলছেন ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগ। বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার আশরাফুজ্জামান জানান, যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার পরিবেশ তৈরি করতে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ যৌথভাবে কাজ করছেন। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠক রয়েছে। পরিবেশ তৈরি করে আগামী দুই একদিনের মধ্যে কোয়ারেন্টাইন কার্যক্রম তারা শুরু করবেন।
দেশের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট বেনাপোল। প্রতিদিন এ পথে ভারত যাওয়া আসা করে দেশী বিদেশী পর্যটক। এছাড়া এদেশের সিংহ ভাগ মানুষ ভারতে চিকিৎসা, আত্মীয়-স্বজন বাড়ি বেড়ানো, ব্যবসায়িক কাজ ও ভ্রমণের জন্য ভারত যাতায়াত করে থাকেন। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে শর্তসাপেক্ষে শুধু বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রীদের ভারত প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১৫শ‘ যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করছে। এসব যাত্রীদের ৯৫ শতাংশ রয়েছে মেডিকেল ভিসার যাত্রী। অন্যান্য ৫ শতাংশ যাত্রীরা যাচ্ছেন বিজনেস ও কূটনৈতিক ভিসায়। টুরিস্ট ভিসা গত বছরের ১৩ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে।
বেনাপোল চেকপোষ্টে যশোর থেকে ভারত যাওয়ার সময় ক্যান্সার রোগী মাসুদ চৌধুরী বলেন, আমি খুবই অসুস্থ। এমনিতে হুইল চেয়ারে বসে যেতে হচ্ছে। তারপর চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে যদি হোটেলে ১৪ দিন থাকতে হয় তাহলেতো মহাসমস্যায় পড়তে হবে। একদিকে আর্থিক সমস্যা অন্যদিকে বাড়ির পরিবারের প্রয়োজনীয় সেবা থেকেও বঞ্চিত হতে হবে।
ভারত ফেরত যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম জানান, চিকিৎসা করাতে তিনি ভারতে গিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় ১৫শ’ টাকা করোনা পরীক্ষা করাতে লেগেছে। আবার ফেরার সময় ভারতীয় ১৫শ’ রুপি লাগছে করোনা রিপোর্টে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তিনিও চান কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা। তবে ফেরার পথে বাস ভাড়া ছাড়া আরা টাকা থাকে না। কিভাবে ১৪ দিন ব্যক্তিগত খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন? সরকারিভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেবার দাবি জানান তিনি।
কেআই//