মৌলভীবাজারের ফাগুয়া উৎসবে আনন্দে মাতোয়ারা চা শ্রমিকরা
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
প্রকাশিত : ০৬:১৭ পিএম, ৩১ মার্চ ২০২১ বুধবার
মৌলভীবাজারের ৯১টি চা বাগানে চলছে মহা ধুমধামে ফাগুয়া উৎসব। ফাগুয়া উৎসব উপলক্ষে বাগান কর্তৃপক্ষ একদিনের ছুটিও দিয়েছে। ফাগুয়ার ছুটির সাথে তারা পেয়েছে আরেকদিন সবেবরাতেরও ছুটি। কিন্তু ছুটি দুইদিন হলেও এটি চলে এক সাপ্তাহ ধরে। ইতিমধ্যে দুই দিনের ছুটি মঙ্গলবার শেষ হলেও বুধবারও বিভিন্ন বাগানে গিয়ে দেখা যায় চা বাগানের লাঠিনৃত্য, দন্ড নৃত্য ও বিভিন্ন গান গেয়ে শ্রমিকরা রং খেলছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক পরেশ কালিন্দি জানান, শারদীয় উৎসবের পর পরই চা শ্রমিকদের ২য় বৃহত্তম উৎসব ফাগুয়া। তিনি জানান, এ উৎসব আনন্দঘন করে তুলতে চা শ্রমিকরা আদিকাল থেকেই রং খেলার কাছাকাছি ধর্মীয় নানা আয়োজন করে থাকেন। বিশেষ করে দোলপূর্নীমা তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূর্জাচনা দিয়ে তাঁর চরণে আবির দিয়ে এ উৎসবের সূচনা হয়। এ বছরও তাই হয়েছে। তবে করোনার কারনে এ বছর বাহিরের অতিথিকে আমন্ত্রন করা হয়নি এবং বৃহত পরিসরের অনুষ্ঠানগুলো বর্জন করা হয়েছে।
তিনি জানান, শ্রমে ঘামে জীবন চলা চা শ্রমিকদের বিনোদনেরও অন্যতম মাধ্যম এটি। তাই চা বাগানের ঘরে-বাইরে শত অভাব অনটন থাকা সত্বেও এই ফাগুয়া উৎসবে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে সবাই উৎসবে মেতে ওঠেন।
এটিকে কেউ বলেন দোল উৎসব, কেউ বলেন রঙ খেলা, কেউ বলেন হোলি এরকম ভিন্ন ভিন্ন নামে এটি পরিচিত হলেও চা-বাগানে এটি “ফাগুয়া” উৎসব নামেই বেশি পরিচিত। এই ফাগুয়া উৎসবের রং খেলার পাশাপাশি চা বাগানের যুবক যুবতিরা লাঠি খেলা, পাহাড়ী নৃত বা চা নৃত্য এবং দন্ড নাচসহ তাদের ঐতিহ্যবাহী অনেক সংস্কৃতি এতে তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রান্স চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, এ উৎসবে চা শ্রমিকরা বেশ আনন্দ উপভোগ করে। তারা এ ফাগুয়া উৎসবকে সামনে রেখে তাদের চাহিদামতো একদিন ছুটি নেয়। এ জন্য প্রায় ২২৫৬ টাকার একটি উৎসব ভাতাও তাদের দেয়া হয়।
বুধবার শ্রীমঙ্গল রাজঘাট, সাতগাও ও খেজুরীছড়া চা বাগানে গিয়ে দেখা যায় চা বাগানের শিশু কিশোর ও যুবক যুবতিরা বিভিন্ন রঙ নিয়ে খেলা করছেন। একজন আরেকজনের গায়ে রঙ মেখে মেতে উঠেছেন আনন্দে। বড়দের পায়ে এবং সমবয়সী একে অন্যের মুখে বাঁ হাতে রং লাগিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে চলছে ফাগুয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়। লাল, নীল, হলুদ, গোলাপী,আবির রঙের ছড়াছড়িতে চা জনগোষ্ঠীর সবার চেহারায় এখন সাত রং।
অন্যদিকে ফাগুয়া উৎসবের এই রং খেলার সাথেখ সাথে চলছে লাঠিখেলা ও দন্ড নাচ। রাধাকৃষ্ণের সাজে সজ্জিত হয়ে লেবার লাইনে লাইনে লাঠি নৃত্য ও গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন যুবযুবতিরা। এ সময় কোন কোন দল মেকাপ, সজ্জা ও মিষ্টি খাওয়ার জন্য বাগানবাসীর কাছ থেকে সল্প সংখ্যক্ষ টাকাও নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, চা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে হোলি উৎস বা ফাগুয়া অন্যতম। ফাগুয়া শুরু হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই স্বামীর বাড়ি থেকে মেয়েরা বাপের বাড়ি নাইওরে আসেন। চা-বাগানের ঘরে ঘরে ভালো রান্নাবান্না হয়। এবছর করোনা ভাইরাসের কারনে উৎসবটি সীমিত হয়েছে। এদিকে চা বাগান ছাড়াও মৌলভীবাজারের সনাতন ধর্মালম্বীর অনান্য সম্প্রদায়ও নানা আয়োজনে এই উৎসবটি পালন করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম সংকীর্তন করে তারা আনন্দ শোভাযাত্রা বের করনে।
জানা যায়, দাপর যুগে বসন্তকালের এক পূর্নীমা তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমতি রাধা ও তাঁর সখীদের নিয়ে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই থেকেই বসন্তকালে দোলপূর্নীমা তিথিতে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
আরকে//