তামাশা বন্ধ করুন!
মানিক মুনতাসির
প্রকাশিত : ১২:৫৯ পিএম, ২ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার
পরিবহণে ভাড়া বেড়েছে ৬০ ভাগ। যাত্রী উঠানোর কথা অর্ধেক। বাস্তবায়ন কতটা হচ্ছে- তা অজানা নেই কারোরই। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আংশিক লকডাউনের কথাও ভাবা হচ্ছে। অফিস কার্যক্রম, বইমেলা সবকিছুতে সীমিত পরিসর করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মানুষ বাসে উড়তে না পেরে রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। বিক্ষোভ করেছে রাইড শেয়ারিংয়ের লোকেরাও।
তবে এর মাঝেই ধুমধাম উৎসবের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষা কেন্দ্র ও রাস্তায় রীতিমত মিছিল হয়েছে। মহাসমারোহে বাংলাদেশ গেমসের উদ্বোধন করা হয়েছে। বাহ! অতি চমৎকার।
গত বছর এ সময় গার্মেন্টস নিয়ে বহু নাটক দেখেছি, সেটা আবার ভুলেও গেছি। ফলে এবার নতুন নাটক মেডিকেলে ভর্তি। একটা গল্প মনে পড়লো। গল্পটা এমন-
আমার এক বন্ধু তার গার্লফ্রেন্ডকে বললো- চল, আমরা লংড্রাইভে যাই। মেয়েটি বলল- হ্যাঁ, আমি একা একা গিয়ে তোমার সাথে রাত কাটাই, আর তুমি আমাকে প্রেগনেন্ট বানাও। ছেলেটি বলল- না, তেমন কিছু হবে না। আমি ভাল ছেলে। এক সাথেই ঘুমাবো। কিন্তু আমি কিছু করবো না। মেয়েটি বলল, কষ্ট হবে না? ছেলেটির সোজা জবাব- না, কষ্ট হবে না। আমি স্বাভাবিক থাকবো। এবার মেয়েটি রেগে গিয়ে বলল- রাত্রিবেলা এক ঘরে আমাকে একা পেয়েও কিছু না করে তুমি স্বাভাবিক থাকবা? তাহলে তো তুমি অকেজো। তোমাকে দিয়ে আমি কি করবো! তোমাকে আমার লাগবে না। আমি লংড্রাইভেই যাবো না।
সুতরাং যা হবার তাই হচ্ছে। একদিকে তরুণী প্রেগনেন্ট হচ্ছে। অন্যদিকে করোনার চাষও সমানতালে হচ্ছে। শিক্ষাটা হলো- মেলামেশা হবে। সশরীরে পরীক্ষা হবে। রাস্তায় গাদাগাদি হবে। অফিসগামীরা বিক্ষোভ করবেন। হাট-বাজারে সমাগম হবে। শপিংমলে হৈ-হুল্লোড় চলবে। নির্বাচন হবে। শেষ মুহূর্তে গিয়ে স্থগিতও হবে। খাবারের দোকানে আড্ডা হবে, ভিড় হবে। রাস্তার মোড়ে রাতভর আড্ডা চলবে। আর পরিবহণ ভাড়া বাড়িয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
আসল কথা হলো- জনসাধারণকে শায়েস্তা করা হবে। কেন? তোমার ব্যক্তিগত গাড়ি নেই। মোটরবাইক কেন নেই? কেন তোমার আয় কম? কেন তুমি অড জব কর? কেন তুমি গীরব, মধ্যবিত্ত? কেন তুমি নিম্নবিত্ত? ফলে শাস্তি তো তোমারই প্রাপ্য। বেশি ভাড়া দাও, বাসে ওঠ। বাস না পেলে দাঁড়িয়ে থাকো। অফিস টাইম মিস কর। বেতন কাটা যাক। জিনিসপত্রের দাম বাড়ুক। তুমি না খেয়ে থাকো। কম খাও। স্কুলে বাচ্চার বেতন বকেয়া পড়ুক। বিনা চিকিৎসায় মারা যাও। নিজের ঋণ বাড়ুক। অবশেষে ঢাকা ছেড়ে পালাও। পালিয়েও বাঁচতে না পেরে, তুমি তিলে তিলে মরো। এটাই তোমার প্রাপ্য।
অন্যদিকে, তোমার করের টাকায় ধান্দাবাজরা চুরি করে আয়েশী জীবন কাটাক। ধনীরা উৎসব করুক। আরামে চলুক। সেটা তাদেরই প্রাপ্য। তাদেরই অধিকার। বেঁচে আছো সেটাই তো বেশি। আবার অধিকার কিসের? তুমি আমজনতা। কর দেয়া তোমার দায়িত্ব। ভোট দিলে দিও, না দিলে নাই। কষ্টে, নীরবে, নিভৃতে সব অসহ্যকে সহ্য করাটাও তোমার কর্তব্য।
এনএস/