ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

সুপ্রিমকোর্টে আবদুল মতিন খসরুর জানাজা অনুষ্ঠিত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪১ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২১ বৃহস্পতিবার

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাবেক আইনমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি’র জানাজা সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সকাল সোয়া দশটার দিকে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জানাজায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সুপ্রিমকোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, এটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নুর তাপস, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিষ্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিপুল সংখ্যক আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ জানাজায় অংশ নেন।

জানাজা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি আবদুল মতিন খসরুর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। জানাজায় আবদুল মতিন খসরুর একমাত্র পুত্র আবদুল মোনেম ওয়াসিফ তার পিতার জন্য সকলের দোয়া কামনা করেন।

জানাজা শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন খসরুকে ‘রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, স্পিকার, আইন মন্ত্রণালয়, এটর্নি জেনারেল কার্যালয়, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে আবদুল মতিন খসরুর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

এর আগে রাজধানীর বকশী বাজার আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আবদুল মতিন খসরুর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এছাড়া বাদ যোহর কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা সদরে, বিকাল ৪টায় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদরে, এরপর ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুরে শেষ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৪ এপ্রিল ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আবদুল মতিন খসরু। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র, এক কন্যা, অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী শুভাকাক্সক্ষী রেখে গেছেন।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে আজ সর্বোচ্চ আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

তৃণমূল থেকে জাতীয় রাজনীতির শীর্ষে উঠে আসা রাজনীতিবিদ ছিলেন এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু।

একজন আইনজীবী হিসেবে শতভাগ পেশাদার ছিলেন তিনি। কুমিল্লা জজ কোর্ট থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টে প্র্যাকটিসে সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। সর্বশেষ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। এর আগে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।

তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। আবদুল মতিন খসরু কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচবার। আমৃত্যু ওই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।

১৯৭৮ সালে কুমিল্লা জজ কোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হন আবদুল মতিন খসরু। ১৯৮২ সাল থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে নিয়মিত প্র্যাকটিস করেছেন তিনি। সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে সর্বোচ্চ ভোটে সদস্য নির্বাচিত হওয়ার গৌরবও রয়েছে তার। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের একজন জেষ্ঠ্য আইনজীবী ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯১ সালে কুমিল্লা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে তিনিই একমাত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় বিচারের পথ বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিল পাসে আবদুল মতিন খসরুর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। এ বিল পাস করার প্রাক্কালে জাতীয় সংসদে আবদুল মতিন খসরুর বক্তব্য অগনিত মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। তার ওই বক্তব্য ছিল ঐতিহাসিক।

তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এর পর আমৃত্যু দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে করোনা নিয়ে ভর্তি হন তিনি। চিকিৎসায় করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও অন্যান্য রোগে গতকাল বুধবার বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

গত ১৫ মার্চ সংসদ সচিবালয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন আবদুল মতিন খসরু। ১৬ মার্চ সকালে তার করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ওইদিনই তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) ভর্তি করা হয়। অবস্থা ভালো না হওয়ায় ২৮ মার্চ রাত ১২টার দিকে আবদুল মতিন খসরুকে আইসিইউতে নেয়া হয়। ১ এপ্রিল করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। এরপর ৩ এপ্রিল আইসিইউ থেকে তাকে সাধারণ কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর পর অবস্থা খারাপ হলে সাবেক এই আইনমন্ত্রীকে মঙ্গলবার লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আবদুল মতিন খসরু ১৯৫০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো. আবদুল মালেক এবং মাতা জাহানারা বেগম। তারা চার ভাই এক বোন। আবদুল মতিন খসরু ব্যক্তিজীবনে এক ছেলে এক মেয়ের জনক।

তিনি ১৯৯২ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন।

আব্দুল মতিন খসরু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালে আব্দুল মতিন খসরু আইনমন্ত্রী থাকাকালে সংবিধান ও আইনের শাসন বিরোধী কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডের বিচারের ব্যবস্থা করেন তিনি। পরবর্তীকালে সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারবর্গের আত্মস্বীকৃত খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।

তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ শোক প্রকাশ করেছেন।
আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে তার নির্বাচনী এলাকা নিজ জেলা কুমিল্লা এবং সারাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থকদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েও দায়িত্ব পালন শুরুর পূর্বেই সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের অভিভাবক আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে শোকাহত আইনজীবীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
সূত্র : বাসস
এসএ/