ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

মহামারির এই দুঃসময়ে সবার আগে জীবন: প্রধান বিচারপতি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫০ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২১ রবিবার

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, জীবন জীবিকা দুইই প্রয়োজন এবং গুরুত্বপূর্ণ। তবে করোনা মহামারির এই দুঃসময়ে সবার আগে জীবন। আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে আজ রোববার আপিল বিভাগে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান বিচারপতি একথা বলেন।

বৈশ্বিক মহামারি করোনায় জীবন আগে নাকি জীবিকা আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে এমন প্রশ্নও তুলেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মানুষ যেভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে এ অবস্থায় আমরা সব কোর্ট খুলে দিতে পারি না। আমাদের মনে রাখতে হবে আগে জীবন পরে জীবিকা।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি পুরো আদালত বন্ধ করি নাই। এ অবস্থায় পুরো আদালত বন্ধ থাকা উচিত ছিল, তাও কোর্ট চলছে। ধন্যবাদ জানাবেন সরকারকে যে আইনটি (আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন) করে দিয়েছে।’

আপিল বিভাগে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল ভার্চ্যুয়ালি শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগে আরও বেঞ্চ দেয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তখন প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন।

ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতিকে বলেন, বর্তমানে চারটি ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ পরিচালিত হচ্ছে। তার মধ্যে আজ আছে কেবল দু’টি বেঞ্চ। রমজান চলছে, সামনে ঈদ। এই অবস্থায় আরও কিছু ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ বাড়ালে আইনজীবীরা উপকৃত হতো। আপিল বিভাগ ও চেম্বার জজ আদালত মিলে সপ্তাহে পাঁচদিনই সর্বোচ্চ আদালত চলছে। তাই আরও কয়েকটি হাইকোর্ট বেঞ্চ চালু করা যেতে পারে।

সুপ্রিমকোর্ট বার সম্পাদক বলেন, গত এক বছরে আইনজীবীরা ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। তাই প্রয়োজনে আরও ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ চালু করলে আইনজীবীরা উপকৃত হতো। প্রতিনিয়ত আইনজীবীরা কোর্ট বাড়ানোর বিষয়ে বলছে। অনেক আইনজীবী আর্থিক কষ্টে আছেন বলেও উল্লেখ করেন ব্যারিষ্টার কাজল।

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরাও বারের (আইনজীবী সমিতি) থেকে এসেছি। আইনজীবীদের সমস্যাগুলো বুঝি। জীবন ও জীবিকা দু’টিই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এক্ষেত্রে আগে জীবন, পরে জীবিকা।

প্রধান বিচারপতি বলেন, করোনায় মানুষ যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছে এ অবস্থায় তো আমরা সব কোর্ট খুলে দিতে পারি না। আমরা যদি এ অবস্থায় হাইকোর্টে ভার্চুয়াল বেঞ্চের সংখ্যা বাড়াতে যাই তাহলে অনেক স্টাফকে সশরীরে কোর্টে আসতে হবে। এতে জনবল বেড়ে যাবে এবং করোনা আক্রান্তের ঝুঁকিও বাড়বে।

তিনি বলেন, ‘আমি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আপিল বিভাগের সব বিচারপতির সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিই। বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী সবার কথা চিন্তা করে বেঞ্চ সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছি। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা হাইকোর্টে ভার্চুয়াল বেঞ্চ বাড়ানোর বিষয়টি দেখব।’

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় এখন মাত্র ৪০ জন স্টাফ নিয়ে আপিল বিভাগ চলছে। হাইকোর্টের চারটি ভার্চুয়াল বেঞ্চেই অনেক স্টাফ লাগছে। এই অবস্থায় আবার ১০টা হাইকোর্ট বেঞ্চ চালাতে গেলে হাজার স্টাফ লাগবে। তখন তাদের সংক্রমণ ঝুঁকি তৈরি হবে। আমরা সব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, প্রধান বিচারপতিতো সব কিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন কোর্টের সংখ্যা বাড়ালে অনেক স্টাফকে কোর্টে আসতে হবে। তাদেরও তো পরিবার আছে। তাদের তো আমরা ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না।

সমিতির সম্পাদকের উদ্দেশ্যে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, আমাদের যে স্টাফ আছে, তাদের প্রত্যেকের পরিবার আছে। সব স্টাফ যদি আমরা কোর্টে নিয়ে আসি, তারা যদি আক্রান্ত হয়, এর দায়িত্ব কে নেবে ?

আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘মিষ্টার রুহুল কুদ্দুস, আপনি আইনজীবী সমিতির সম্পাদক। তাই আপনি আইনজীবীদের কথা ভেবে একথা বলছেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতিসহ আমাদেরকে তো পুরো সুপ্রিমকোর্টের কথা ভাবতে হয়। এমনকি দেশের কথাও ভাবতে হয়। সেসব ভেবেই প্রধান বিচারপতি সিদ্ধান্ত দেন।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দশটি বেঞ্চের জন্য স্টাফ আনতে হবে এক হাজার। এখন এক হাজার স্টাফ আনতে আমি সাহস করি না।’ পরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘দেখেন আগামী বুধবার কি হয়। সবাই ভালো থাকেন এবং বাসায় থাকেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা বলছি-‘স্টে হোম, স্টে সেফ।’

এসি