প্রাণ রহস্য
মহাজাতক
প্রকাশিত : ১১:৫৭ এএম, ১৯ এপ্রিল ২০২১ সোমবার | আপডেট: ০৩:৪০ পিএম, ২০ জুলাই ২০২১ মঙ্গলবার
প্রাণকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন আপনি? বস্তু কীভাবে প্রাণে রূপান্তরিত হচ্ছে? প্রাণের বিকাশ সম্পর্কিত জটিল আলোচনায় না গিয়েও আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকেই একটা খুব সাধারণ বিষয় তুলে আনতে পারি। আর তা হচ্ছে দম। আপনি আপনার চারপাশের বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত অক্সিজেনের কথা ভাবুন। অক্সিজেন পরমাণু বাতাসে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাতাসের এই অক্সিজেন পরমাণু হচ্ছে বস্তু। আর এই অক্সিজেন পরমাণুই দম নেয়ার সময় সেকেন্ডের হাজার ভাগের কম সময়ের মধ্যে ফুসফুসের প্রায় স্বচ্ছ পর্দা অতিক্রম করে রক্তের হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হওয়ার সাথে সাথেই 'জীবন্ত' হয়ে ওঠে। হিমোগ্লোবিনের রঙ মুহূর্তে কালচে নীল থেকে উজ্জ্বল লাল রং-এ পরিবর্তিত হয়। বায়ুমণ্ডলের একটি বিক্ষিপ্ত অক্সিজেন পরমাণু রূপান্তরিত হয় 'আপনাতে', এই পরমাণু অতিক্রম করে প্রাণ ও নিষ্প্রাণ বস্তুর অদৃশ্য সীমানা।
একবার দম নেয়ার সাথে সাথে কী পরিমাণ অক্সিজেন পরমাণু শরীরে প্রবেশ করে? প্রতিবার দম নেয়ার সাথে সাথে শরীরের পাঁচ ট্রিলিয়ন লোহিত কণিকা বাতাসের মুখোমুখি হয়। প্রতিটি রক্ত কণিকায় রয়েছে ২৮০ মিলিয়ন হিমোগ্লোবিন অণু। প্রতিটি হিমোগ্লোবিন অণু ৮টি করে অক্সিজেন পরমাণুকে ধরতে ও পরিবহন করতে পারে। প্রতিবার দমের সাথে ১১x১০২১ (১১,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০, ০০০,০০০)টি অক্সিজেন পরমাণু শরীরে প্রবেশ করছে। এই অক্সিজেন পরমাণুকে শরীরের 'ইট' মনে করলে আমরা বলতে পারি যে, আমরা প্রতি দমের সাথে উপরিউক্ত সংখ্যক নতুন 'ইট' শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগাচ্ছি। পুরাতন 'ইটের' বদলে একেবারে খাপে খাপে বসে যাচ্ছে নতুন 'ইট'। পুরাতন নতুনের জন্যে জায়গা করে দিচ্ছে সহজে-ঠিক নদীর প্রবাহের মতো।
শরীরের ভেতরে কত বিচিত্র তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ছে মুহূর্ত আগের প্রাণহীন বস্তু অক্সিজেন। সাধারণত ৬০ সেকেন্ডে আর ব্যায়ামকালে ১৫ সেকেন্ডে অক্সিজেন পরমাণু পুরো শরীর ঘুরে আসে একবার। এ সময়ের মধ্যে শরীরে প্রবেশকারী নতুন অক্সিজেনের অর্ধেক রক্ত থেকে বেরিয়ে কিডনি সেল, নিউরোন, পেশি সেল বা ত্বক সেলের অংশ পরিণত হচ্ছে। অক্সিজেন এটম সেল ভেদে কয়েক মিনিট থেকে একবছর পর্যন্ত আপনার দেহে অবস্থান করতে এবং আপনি যা করতে সক্ষম তাতে সে পুরোপুরি অংশগ্রহণ করতে পারে। অক্সিজেন এটম একটি নিউরোট্রান্সমিটার-এর সাথে যুক্ত হয়ে আপনার একটি সুখকর চিন্তার অংশে পরিণত হতে পারে। আবার এড্রিনালিন অণুর অংশ হয়ে আপনার মধ্যে আতঙ্ক বিস্তার করতে পারে। গ্লুকোজের সাথে মিশে ব্রেন সেলের খাবারে পরিণত হতে পারে। আবার শ্বেত কণিকার অংশ হয়ে আক্রমণকারী ব্যাক্টেরিয়াকে প্রতিহত করতে গিয়ে আপনার জন্যে আত্মবিসর্জন দিতে পারে।
আর এসব কিছুই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ডিএনএ-তে সংরক্ষিত তথ্যভাণ্ডার দ্বারা। আমরা যদি আরো গভীরে যাই, আমরা দেখব এই ডিএনএ-ও প্রাথমিকভাবে কার্বন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এটমের এক সূক্ষ্ম সমন্বয়। এক সূক্ষ্ম স্পন্দনের সুতোয় গাঁথা। এই সূক্ষ্ম স্পন্দনের সুতোই ডিএনএকে শক্তিশালী করেছে-এর যে-কোনো ব্যতিক্রম-এক মিলিমিটারের ১০ লক্ষ ভাগের একভাগ এদিক ওদিক হলেই এই সুতো ছিঁড়ে যাবে। আর জীবনের সব সূক্ষ্ম স্পন্দনের মূলে রয়েছে এক অন্তর্চেতনা।
জীবন ও প্রাণের এই প্রেক্ষাপটে আপনি যদি উপলব্ধি করতে পারেন চেতনা ও তথ্যের শক্তি কতখানি, তাহলে শক্তির আসল উৎসের সন্ধান পাবেন। মানুষের শক্তির আসল উৎস তার দেহ নয়, চেতনা। দেহ হচ্ছে এই চেতনার বাসস্থান। তাই এই চেতনার সঙ্গে যদি আমরা একাত্ম হতে পারি, চেতনাকে যদি পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারি তাহলে দুটি ডিএনএ থেকে আমরা যেমন পরিপূর্ণ মানবদেহ লাভ করেছি তেমনি জীবনে পরিপূর্ণ সাফল্য লাভ করতে পারি। কারণ, মনের শক্তি এই চেতনারই একটা রূপ মাত্র। প্রতিভাবান আর সাধারণ মানুষের পার্থক্য এখানেই। প্রতিভাবানরা-সাধক, বিজ্ঞানী ও সফল মানুষেরা মনের এই শক্তিকে উপলব্ধি করেছেন, সৃজনশীলভাবে কাজে লাগিয়েছেন। ফলে তারা স্মরণীয়-বরণীয় হয়েছেন। আর সাধারণ মানুষ মনের এই শক্তিরহস্য সম্পর্কে সচেতন নয়; তাই তারা হতাশা নেতিচিন্তা ও রি-অ্যাকটিভ কাজকর্ম দ্বারা নিজেদের অনন্ত সম্ভাবনাকে নষ্ট করছে। এককথায় বলা যায়, প্রতিভাবানদের সাফল্যের মূল রহস্য নিহিত রয়েছে মনের শক্তি সম্পর্কে সচেতনতা, মনের শক্তির ওপর অবিচল বিশ্বাস ও আস্থা এবং একাগ্রচিত্তে ক্রমাগত এই শক্তির সৃজনশীল প্রয়োগের মধ্যে।
লেখাটি কোয়ান্টাম মেথডের প্রবক্তা মহাজাতক এর মেডিটেশন বই থেকে সংগ্রহ
এসইডি/এসএ/