করোনা পরবর্তী বাংলাদেশ কেমন হবে?
সৈয়দ নুরুল ইসলাম
প্রকাশিত : ০৭:২৭ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২১ বুধবার | আপডেট: ০৭:৩৪ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২১ বুধবার
করোনা পরবর্তী বাংলাদেশ নামক দেশটির চেহেরাটা কেমন হবে? প্রশ্নটা নিয়ে গত বছর এই দিনে ভেবেছিলাম। আজও একি ভাবনা। সারাদিন ভেবেছি। যেখানে ইউরোপ আমেরিকা করোনার কাছে হেরে গেছে, সেখানে আমাদের মত উঠতি অর্থনীতির একটি দেশ কিভাবে ঠিকে থাকবে! ফোন করে জানতে চাইলাম সদ্য বিশ্বব্যাংকের চাকুরি ছেড়ে দেশে ফেরা এক তরুণ অর্থনীতিবিদ বন্ধুর কাছে। ছোট একবাক্যে তার উত্তর, জীবন থাকলেইতো জীবিকা আর জীবিকার জন্যই অর্থনীতি।
আমি বুঝে নিলাম সে কি বলতে চেয়েছে। আমি অর্থনীতির ছাত্র না। বাণিজ্য নিয়ে পড়ালেখা করেছি। আর বাণিজ্যের পেছনেই কাটিয়েছি প্রায় ৩৫ বছর। আমি জীবন আর জীবিকা দু’টিকেই একই সুতায় বাঁধা দেখি। করোনার থাবায় পুরো ২০২০ ছিল থেমে থাকার বছর। ভেবেছিলাম ২০২১ সালে নতুন সূর্য্য উঠবে। জানুয়ারির প্রথম দিকে সূর্য্যটা উঁকিও দিয়েছিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সূর্য্যটা আবার ঢেকে দিল। আমাদের জীবন আবারো বিপন্ন। অর্থনীতিও দিক হারা। কিন্তু গত বছরের অভিজ্ঞতা বলে যে আমরা সবাই করোনার কাছে জীবন বিসর্জন দিয়ে হারিয়ে যাব না। করোনার সাথে যুদ্ধ করে জীবন আমরা ফিরে পাব। গত বছরের নববর্ষের মত এবারো না হয় গাইলামনা গান। আগামী নববর্ষে অবশ্যই অবশ্যই বাংগালী নতুন করে সাজবে, নতুন সুরে গাইবে।
জীবন নিয়ে আমি আমার অর্থনীতিবিদ বন্ধুর মত যতটানা উদ্বিগ্ন তারছেয়ে আরো অনেক বেশি উদ্বিগ্ন জীবিকা নিয়ে। করোনা পরবর্তী জীবিকার মূল চালিকা শক্তি অর্থনীতির কি হবে?
গত ১০-১২ বছরে আমাদের অর্থনীতিতে বসন্ত আসার আগেই ফুল ফোটা শুরু হয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুৎ ঘাটতি কাটিয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন, বৈদেশিক মূদ্রার রির্জাভ প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপর।করোনার আঘাতে আমাদের রপ্তানী আয় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কাছাকাছি নেমে এলেও বিদেশে কাজ করা আমাদের প্রায় ১ কোটি সোনার ছেলেদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপর নিয়ে গেছে। আমাদের অর্থনীতির মুল শক্তি কৃষি। করোনার কাছে আমাদের কৃষকরা এখনো মাথানত করেনি। সব মিলিয়ে করোনাকালীন মহাসংকট মোকাবেলা করে আমাদের মাথাপিছু আয়ও বেড়ে ২০০০ মার্কিন ডলারের উপর যার উপর ভিত্তি করে বিশ্ব ব্যাংকের স্বীকৃতি আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশ। নিজের অর্থে গড়া পদ্মা সেতুর স্প্যানগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। মেট্রোরেলের পিলারগুলোও দৃশ্যমান। অর্থনীতির মূল জায়গা আভ্যন্তরিণ চাহিদা, সেখানেও নড়াচড়া বন্ধ হয়নি। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার, গড় আয়ু সব মিলিয়ে আমাদের স্বপ্ন পূরণের স্বপ্নটা এখনো হারিয়ে যায়নি।
কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের অর্জনগুলোকে নতুন চ্যালেঞ্জ' র মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। রপ্তানি অনিশ্চিত। তার অর্থ উৎপাদন কমে যাওয়া। উৎপাদন কমে যাওয়া মানে চাকুরী হারা মানুষের সংখ্যা বড় হওয়া। আর চাকুরী হারা মানে পকেট খালি।
পকেটে টাকা না থাকলে মানুষের কেনা কাটা কমা যেটাকে বলে বাজারের চাহিদা কমা। বাজারের চাহিদা কমা মানেই আবার উৎপাদন কমা। আরো কর্ম সংস্থান কমা। এভাবে কমার চক্রে অর্থনীতির চাকার গতি কমা। আলোকিত ঢাকার আলো আস্তে আস্তে নিবে যাওয়া। বড় বড় কর্পোরেট হাউসগুলো দেউলিয়া হয়ে যাওয়া। খেলাপিদের কাছে হেরে গিয়ে ব্যাংকগুলোর সদর দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া। কাজ হারা মানুষগুলোর চেহেরাগুলো মলিন হওয়া। মধ্যবিত্তের ফুটানি ফিকে হয়ে আসা। উচ্চ বিত্তদের পালিয়ে যাওয়া।
তারপর? তারপর আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম! আর একটি যুদ্ধ। আর একটি ৭১। এবারের যুদ্ধ অস্ত্র হাতে না, কাস্তে হাতে। সেই যুদ্ধ ক্ষেত্রটা আমাদের সেই কৃষি। আবার সেই কৃষক যারা একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সড়া দিয়ে খালি গায়ে খালি হাতে যুদ্ধ করে পাক হানাদারদের হটিয়ে আমাদের একটি লাল সবুজে মোড়ানো স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়েছে। তারাই আবার সামনে থেকে লড়াই করে আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাবে।তারাই নতুন করে ফুল ফোটাবে। লাল সবুজের পতাকা হাতে ঢাকার রাস্তায় নতুন করে আলো জ্বালাবে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
লেখক: সৈয়দ নুরুল ইসলাম, চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী (ওয়েল গ্রুপ)
এসি