আইসিসি বাংলাদেশের ত্রৈমাসিক বুলেটিন
আঞ্চলিক সহযোগিতা দক্ষিণ এশীয়ার সক্ষমতাকে জোরদার করতে পারে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:০৮ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২১ বুধবার
মাত্র এক বছর আগে, ২০২০ সালের ১১ মার্চ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড -১৯ কে বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসাবে ঘোষণা করেছিল। ডঐঙ-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৫.৬৫ মিলিয়নেরও বেশি এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২.৯৩ মিলিয়ন। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রগুলো লকডাউন দিয়েছে ফলশ্রতিতে মারাত্মকভাবে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মহামারীটিকে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্য সবক্ষেত্রেই বিশ্ব ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
কোভিড-১৯ এর কারনে দক্ষিন এশিয়া প্রতি মিলিয়নে মৃতের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে ভালো করেছে। ৩১ মার্চ প্রকাশিত বিশ্বব্যাংক দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক ফোকাস (ডড়ৎষফ ইধহশ ঝড়ঁঃয অংরধ ঊপড়হড়সরপ ঋড়পঁং) অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা বাড়ছে, কারণ ২০২১ এবং ২০২২ সালে দক্ষিন এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৭.২ শতাংশ এবং ৪.৪ শতাংশ যা ২০২০ সালের প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশী। এ অঞ্চল পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধি অসম এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখনও কোভিড-১৯ এর পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় অনেকটাই নিচে রয়েছে। এর কারন হিসাবে বিশ্বব্যাংক বলেছে অনেক ব্যবসায়ীকে উপার্জন হারাতে হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিক (মূলত অনানুষ্ঠানিক খাত) চাকরি হারানোর শংকায় রয়েছে, আয় হ্রাস পেয়েছে, অসমতার অবনতি ঘটেছে এবং মানুষের মূলধন ঘাটতি হয়েছে।
দক্ষিন এশিয়া অঞ্চলটি ২০২২ সালের মধ্যে এর ঐতিহাসিক প্রবৃদ্ধির হার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট রয়েছে। বিদ্যুৎ খরচ এবং গতিশীলতার ডাটা অর্থনৈতিক কার্যকলাপ পুনরুদ্ধারের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। এ অঞ্চলের অর্থনীতির বেশিরভাগ অংশ নিয়ে গঠিত ভারত ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে - ২০২১ সালের জানুয়ারীর পূর্বাভাস ৪.৭ শতাংশ থেকে যা উর্ধ্বতন সংশোধন। প্রত্যাশার চেয়ে বেশী রেমিট্যান্স প্রবাহের সহায়তায় বাংলাদেশ, নেপাল এবং পাকিস্তানের পূর্বাভাসও উর্ধ্বতন সংশোধন করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে।
জাতিসংঘের জানুয়ারীতে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক সিচুয়েশন প্রসপেক্টস (ডঊঝচ) ২০২১ অনুসারে মহামারী এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কট দক্ষিণ এশিয়ায় গভীর ক্ষত ফেলেছে এবং এই প্রবৃদ্ধি চ্যাম্পিয়ান অঞ্চলকে ২০২০ সালের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স অঞ্চলে পরিণত করেছে।
তবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে প্রথমে তাদের অর্থনীতিতে বৈচিত্র আনার প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে হবে, একইসাথে সংকট দ্বারা শুরু হওয়া বৈশ্বিক প্রবণতা যেমন গ্লোবাল ভ্যালু চেইনগুলি (এঠঈ) পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং পরষ্পর সংস্পর্শে আসা নিবিড় পরিসেবাগুলো কমাতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যারা বর্তমানে তাদের শিল্পনীতির বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করছেন তাদের সিদ্ধান্তের কাঠামোর মধ্যে বহিরাগত শকগুলিতে স্থিতিস্থাপকতা অর্জন করা সবচেয়ে গুরুত্ব¡পূর্ণ হওয়া উচিত, টঘডঊঝচ ২০২১ বলেছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে এই সঙ্কট দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। বর্ধিত আঞ্চলিক সহযোগিতা নিকটবর্তী সময়ে মহামারী এবং এর অর্থনৈতিক ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের সক্ষমতা জোরদার করতে পারে এবং একই সাথে বর্ধমান আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য, প্রবৃদ্ধি ভাগাভাগির গতিবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সুবিধাও বয়ে আনতে পারে। এক্ষেত্রে সরকার এবং ব্যবসায়ীদের একযোগে কাজ করতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য মোট বাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ যেখানে অঝঊঅঘ অঞ্চলের আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য ২৫ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য বর্তমানে মোট ২৩ বিলিয়ন ডলার - যা কমপক্ষে আনুমানিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় অনেক কম। তদুপরি, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ংবধসষবংং পরিবহণ সংযোগ স্থাপিত হলে বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের পরিমাণ ১৭ শতাংশ এবং ভারতের ৮ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশ্বব্যাংক বলেছে।
যাহোক কোভিড -১৯-এর দ্বিতীয় / তৃতীয় ঢেউ এবং ভাইরাসের নতুন ধরন ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। পুরো বিশ্ব আবার লকডাউন এবং অন্যান্য সামাজিক বিধিনিষেধের দিকে এগিয়ে চলেছে, যা এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে আরও প্রভাব ফেলবে। এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী অর্থনৈতিক ক্ষতির ভবিষদ্বানী করা সম্ভব নয়। তবে যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ সঙ্কট মোকাবেলায় দক্ষ, তাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এ অঞ্চলের সরকার এবং সমস্ত স্টেইকহেল্ডারদের অতীতের মতো একসাথে কাজ করা এবং তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে চ্যালেঞ্জগুলি সফলভাবে মোকাবেলা করা এবং ভবিষ্যতে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়া।
আরকে//