ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

করোনায় করণীয় : ডাক্তার দেবাশীষ বিশ্বাস

ডাঃ দেবাশীষ বিশ্বাস

প্রকাশিত : ০২:৪৮ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২১ বৃহস্পতিবার

্

করোনার এ সময়ে সবাই প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। সুরক্ষায় ঘরের বাইরে বের হন না অনেকেই। সবার মধ্যে কেমন যেনো একটা ভীতি কাজ করছে। কিন্তু এ এমন এক ভাইরাস যা যে কোন সময় আপনাকে আক্রান্ত করতে পারে। এমন কী ঘরের মধ্যে থাকলেও। শত প্রতিরোধ করেও এর থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কেউ কেউ। তাই আতঙ্কিত না হয়ে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। হয়তো আপনিও আক্রন্ত হয়ে যেতে পারেন যে কোন সময়। তাই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা জরুরী।

এ বিষয়ে অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবাশিস বিশ্বাস কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যা নিচে দেওয়া হলো-

- করোনা প্রতিরোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। লক ডাউন হোক, না হোক, ঘরে থাকুন বা যাই করুন, এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। শুধু ইমিউনিটি পাওয়ার আপনাকে কিছু রক্ষা করতে পারে। তাই এই রোগ আজ না হোক কাল হবেই এটি ধরে নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। 

- মন থেকে সবরকম আতঙ্ক দূর করার চেষ্টা করুন। এই রোগ নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি না করার ১০৮টি যুক্তি আছে। কিন্তু কোনোটাই আপনার কাজে আসবে না যদি না আপনি নিজে মন থেকে মানেন। বাইরের জগৎ থেকে আতঙ্ক সরবরাহ থাকবে বা বাড়বে, মিডিয়াগুলো আদা জল খেয়ে আপনাকে ভীত রাখবে তাদের স্বার্থে। তাই সম্ভব হলে টিভি দেখা বন্ধ করুন।

- নিজে থেকে লাইন দিয়ে পয়সা খরচ করে করোনা টেস্ট করাবেন না। কারণ যে টেস্টটি হচ্ছে র‌্যাপিড টেস্ট নামে, সারা বিশ্বেই তার গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কাছাকাছি। এটা খুবই সম্ভব যে আজ নেগেটিভ হল, দু’দিন পর তা পজেটিভ। তাই ডাক্তার বললে তবেই টেস্ট করান। নচেৎ নয়।

- সমাজে করোনা নিয়ে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তাই ডাক্তার টেস্ট করতে বললেও গোপন রাখুন। টেস্ট করিয়েও গোপন রাখুন। আপনার রোগ ধরা পড়লে আপনাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তার ঘরেই থাকতে বলবেন। কিন্তু রোগের কথা প্রচার হয়ে গেলে সামাজিক বয়কট হতে পারেন, তাই খুব সাবধান। রোগী ঘর থেকে না বেরোলেই হল।

- পাড়া পড়শীর বড় অংশ এখন বড় গোয়েন্দা হয়ে গেছেন, কে কখন বাইরে বেরহচ্ছেন নজরদারি চালাচ্ছেন। তাদের সাথে তাল মেলাবেন না। আপনার রোগ হলে এরাই সবচেয়ে বড় উদ্যোগ নেবেন আপনাকে বয়কট করার। তাই এদের সাথে দূরত্ব বজায় রাখুন। মাঝে মাঝেই বাইরে বের হন টুকটাক কাজে।

- ভিড়ের মধ্যে গেলে অবশ্যই মাস্ক পড়ুন। কিন্তু ফাঁকা জায়গায় বা নিজ পরিবারের সাথে বাইরে থাকলে মাস্ক কখনো নয়।

- মাস্ক পড়ার ক্ষতি অনেক। এতে জীবাণুও আটকায়, আবার প্রাণদায়ী অক্সিজেনও আটকে যায়। তাই রক্তে অক্সিজেন কমে যেতেই পারে। তাছাড়া আপনার নিঃশ্বাস বাইরে বের হতে বাধা পেয়ে অনেকটা আবার শরীরে ঢুকে যায়।

- দিনে একবার অন্ততঃ বাইরে ফাঁকা জায়গায় যান, ছাদে যেতে পারেন। বাসার ব্যালকনিতেও ঘন্টাখানেক সময় কাটিয়ে আসুন। মনে রাখবেন, বাইরের অক্সিজেন এর থেকে ঘরে অক্সিজেন অনেক অনেক কম থাকে। আর লক ডাউনের জন্য বহু মানুষ দীর্ঘ সময় ঘরে থাকার কারণে ঘরে কার্বনডাই অক্সাইড অনেক বেড়ে যায়। কার্বন ডাই অক্সাইড অনেক ভারী গ্যাস, যা বাড়ির মেঝের উপর জমা হতে থাকে। আমরা ঘুমিয়ে থাকার জন্য মাটির কাছাকাছি থাকি, তখন ওই গ্যাস বড় ক্ষতি করতে পারে। তাই ঘুম কমিয়ে দিন।

- এই রোগে ৯৫% ক্ষেত্রেই কোনো চিকিৎসা করতে হয় না। ঘরে থাকতে হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হবার দরকার পড়ে।

- করোনার ক্ষেত্রে অন্য উপসর্গ কোনো বড় সমস্যা নয়। দুটো জিনিস ছাড়া- এক. অক্সিজেন ঘাটতি, দুই পানিশূন্যতা বা পানির স্বল্পতা। অক্সিজেনের অবস্থা অক্সিমেটার দিয়ে জানতেই পারছেন। হাতে সময় পাবেন। আর পানিশূন্যতা বা পানির স্বল্পতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বারবার ওরস্যালাইন খাওয়ান। জ্বর খুব বেশী হলে চার ঘন্টা অন্তর প্যারাসিটামল দিন।

- শ্বাস কষ্ট হলে মুখ দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিন। যতটা পারেন বাতাস টেনে নিন, তারপর যতটা পারেন ওই বাতাস ধরে রাখুন, এরপর খুব ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। আবার একই রকম করুন।

- এরকম শ্বাস নেবার সাথে সাথে লেভ সালভিউটামল তীয় ইনহেলার নিন। এটিও সবাই ঘরে রাখুন। সব ওষুধের দোকানেই এটি পাবেন। অনেক নামেই পাওয়া যায়, তবে লেভলিন নামে বেশি দেখা যায়।

- যারা ভ্রমণে যান বা উঁচু স্থানে যান তারা শ্বাস কষ্ট হলে বা দম বন্ধ লাগলে একটা করে ছোট অক্সিজেন ক্যানিস্টার সঙ্গে রাখেন। দম বন্ধ লাগলে এটি দ্রুত কাজ করে। তিন-চারটি ক্যান ঘরে রাখতে পারেন। এটি ব্যবহার করা খুবই সহজ। দামও বেশি নয়। এটি ১৫ মিনিট অন্তর ছয় থেকে আট সেকেন্ড নিলে দ্রুত উপশম হবে। এসবই প্রাথমিক চিকিৎসা। যাতে হাসপাতাল খোঁজার মতন সময় পাওয়া যায়। প্রাথমিক হলেও এগুলোই জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে।

- ভয়মুক্ত হয়ে আনন্দে থাকুন। এই রোগে আপনার কোনো ক্ষতি হবে না।

সূত্র : ফেসবুক থেকে সংগ্রহ

এসএ/