ধরলা নদীতে পানি-মাছ নেই, জেলেদের দুর্দিন
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:৩২ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২১ শনিবার
‘ধরলা নদীত পানিও নাই মাছও নাই, এ্যালা শুধু ধুধু করে বালা আর বালা। হামরাগুলা এ্যালা কন্টে যাই বা। আগত এইদন দিনে পানি দিয়া ভরি আছিল হেই নদী। এ্যালা শুকি ঠনঠনা হইচে। আইজ প্রায় ৪০ বছর থাকি এই নদীত মাছ মারং। আগে অনেক পানি আছিল এখন পানিও নাই, মাছও নাই।’
কুড়িগ্রাম ধরলা নদী পাড়ের জেলে ষাটোর্ধ মোকছেদ আলী এ কথা বলেন। তার মত আরও অর্ধশতাধিক জেলে যারা এভাবেই নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের এখন সকলের একই অবস্থা। এক সময় ধরলা নদীতে চৈত্র-বৈশাখেও থাকতো পানি। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই নদী উপচে গিয়ে প্রবল বন্যার সৃষ্টি করে।
গত বছর পরপর ৬ বার বন্যার কবলে পড়ে এসব মানুষ। আর শুকনো মৌসুম এলে তা দ্রুত শুকিয়ে যায়। বর্তমানে এখন ধরলা নদী শুকিয়ে গেছে। নদীতে তেমন পানিও নেই; আবার পর্যাপ্ত মাছও নেই। অন্যদিকে, নদীতে জেগে উঠা চরে কৃষকরা লাগিয়েছেন বোরো ধান। তাতে চরগুলো সবুজময় হয়ে উঠেছে।
ধরলার শাখা নদী দুধ কুমার পাড়ের বাসিন্দারা দিনভর মাছ ধরে তা বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতো। কিন্তু এখন তা আর তেমন নেই। ফলে অনেকেই বেকার জীবন যাপন করছেন।
জেলায় ছোটবড় মিলিয়ে মোট ১৬টি নদনদী। এর মধ্যে সবচেয়ে রাক্ষসী ধরলা নদী, সেটিও আজ শুকিয়ে গেছে। বিগত ২০১৭ ও ২০২০ সালের প্রবল বন্যায় নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হলেও এখন ধরলা শুকনো। নদীর মাঝে পড়েছে বড় বড় চর। নদীর অনেক জায়গায় এক হাঁটু পানি দিয়ে পার হন পথচারিরা।
ধরলার ৯ কি.মি. দূরে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও শংকোস পাড়ে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। বর্তমানে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ঘাট আছে কিন্তু নৌকা চলেনা। ঘাটে বাধা রয়েছে ডিঙিও বড়বড় নৌকাগুলো। ঘাটের মাঝি আব্দুস ছামাদ ও আনোয়ার হোসেন বলেন, অনেক জায়গায় পড়েছে চর। এখন আর নৌকা চালান যায়না। তাই বেঁধে রেখেছি।
কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ ও স্থানীয় সরকারের তথ্য মতে, জেলার ১৬টি নদ-নদীতে মোট ১৭২টি নৌ-ঘাটের মধ্যে জেলা পরিষদের ৫৭টি এবং ইউনিয়ন পরিষদের ১১৫টি ঘাট রয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি ঘাটে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ২০টি বন্ধ হওয়ার পথে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর উজান থেকে বন্যার পানির সাথে বালু এসে সব নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে জেলার নদ-নদীগুলোর খনন জরুরি হয়ে পড়েছে।
এএইচ/এসএ/