ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

এক ভীষণ ‘মানবিক’ খুনির গল্প!

আনোয়ার হোসেন শামীম

প্রকাশিত : ০৯:১৬ এএম, ২৬ এপ্রিল ২০২১ সোমবার | আপডেট: ০৩:৫৯ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০২১ সোমবার

ডোবা থেকে লাশ উদ্ধার কালিন

ডোবা থেকে লাশ উদ্ধার কালিন

গাড়ি চালনারত বন্ধু আজিজুলের মাথায় লোহার রেঞ্জ দিয়ে আঘাতের পর পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় নেজাম। অনেকদিন ধরে তার সন্দেহ- তার স্ত্রীর সাথে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত আজিজুল। সেই অপরাধেরই উপযুক্ত বিহিতব্যবস্থা আজ নেওয়া হলো! 

মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর নেজাম হাঁটু গেড়ে বসে লাশের দুই হাত ধরে তাকে খুন করার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেয়। এমনও তো হতে পারে, তার সন্দেহটি ছিল মিথ্যে!

যাই হোক, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। এবার মৃতদেহ সৎকারের পালা। যত কিছুই হোক, তারা দুইজন বন্ধুই তো! নিজে মেরেছে বলে তো আর বন্ধুর লাশ যেন তেন প্রকারে মাটিতে পুঁতে ফেলতে পারে না নেজাম! ধর্মীয় বিধিবিধান বলেও তো একটা কথা আছে! লাশটা ডোবার পাড়ে এনে সে একাই জানাযা নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। সে-ই ইমাম, সে-ই মুসল্লি।

জানাযা শেষে 'বিসমিল্লাহি আলা মিল্লাতে রসুলিল্লাহ' দোয়া পড়তে পড়তে ডোবার কাদামাটির নিচে কবর দেওয়ার মতো করে লাশটা গুম করে নেজাম। যাক, স্বস্তির নিশ্বাস! ধর্ম রক্ষা! পাশাপাশি হত্যার দায় থেকেও চিরমুক্তি। 

সবাই এখন জানবে, শুধু আজিজুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর এই জানাটাই হয়তো চিরদিনের একমাত্র 'জানা' হয়ে থাকতো, যদি আমরা টিম রাঙ্গুনিয়া এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করার জন্য আদাজল খেয়ে না লাগতাম। বলতে গেলে কোনও ক্লু-ই পেছনে রেখে যায়নি ধূর্ত স্বভাবের নেজাম। 
আমরা খাবি খেতে খেতে দিনের পর দিন পার করি, কোনও কূল কিনারা পাওয়া যায় না। প্লান এ, বি, সি, ডি... সবই কোথাও না কোথাও গিয়ে ঠেকে যায়।

অবশেষে ১ মাসের মাথায় এসে ধৈর্যের মিঠা ফল প্রাপ্তি। প্রযুক্তিনির্ভর ও নিরবিচ্ছিন্ন তদন্তে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, আজিজুল আসলে অপহৃত হননি বা নিখোঁজ যাননি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এটাও জানতে পারি যে, আজিজুলের বন্ধু নেজামই এই হত্যাকাণ্ডের মেইন মাস্টারমাইন্ড। অত:পর প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে শনিবার নেজামকে গ্রেফতার এবং তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গভীর রাতে ওই ডোবা থেকে আজিজুলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার!

অভিযান শেষে বাসায় ফেরার পর থেকে এখনও পর্যন্ত তিন-চার বার গোসল করা হয়ে গেলেও ডোবার পঁচা পানির কারণে গা এখনও চুলকাচ্ছে। আমি জীবনেও এমন ভয়ানক ডোবায় আর দ্বিতীয়বার নামতে চাই না।

যাই হোক, গা চুলকাতে চুলকাতে বলছি, আজ আমার ভীষণ মন ভাল। লকডাউন না থাকলে সেলিব্রেশন করতে রাতে বাইক রেসেই বের হতাম শিওর!

লেখক- সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), রাঙ্গুনিয়া সার্কেল, চট্টগ্রাম।

এনএস/