রিকশা চালকের দুই পায়ে আগুন দিয়ে ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৯:৫১ এএম, ২৬ এপ্রিল ২০২১ সোমবার
জয়পুরহাটে গরু চুরির স্বীকারোক্তি আদায় করতে এক রিক্সাচালককে গাছের সাথে বেঁধে দাহ্য পর্দাথ ঢেলে কোমর থেকে দুই পা আগুন দিয়ে ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (২৫ এপ্রিল) মধ্যরাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় রিক্সাচালক তোতা মিয়া (৩০)কে। তার দুই পায়ে আগুন দিয়ে ঝলসে দেয়া, একই সাথে সিগারেটের আগুন দিয়ে তার দুই হাতে ছেঁকা দেওয়া হয়েছে। মুমুর্ষবস্থায় তাকে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জয়পুরহাটের ধারকি পাথারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। তোতা মিয়া সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়রেন ধারকী গ্রামের মৃত তয়ের মিয়ার ছেলে।
এ ঘটনায় রোববার সকালে নির্যাতিত রিকশাচালকের স্ত্রী বাদী হয়ে জয়পুরহাট সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ মামলার প্রধান আসামী বম্বু ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ২৩ এপ্রিল দুপুর বারোটায় জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধারকি গ্রামের বাসিন্দা উপেন পাহান তার একটি গরু গ্রামের মাঠে বেঁধে রেখে আসেন। ওইদিন দুপুর দুইটার পর উপেন পাহান মাঠে গিয়ে তার গরুটি আর দেখতে পাননি। স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি ওই দিন বেলা বারোটার পর রিকশাচালক তোতা মিয়াকে মাঠে ঘুরাফেরা করতে দেখেছেন। তোতে গরুর চুরি জন্য তোতা মিয়াকে সন্দেহ করা হয়।
রিক্সাচালক তোতা মিয়াকে গরু চোর সন্দেহ করে শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে মধ্যরাতে তাকে ডেকে নিয়ে ইউপি সদস্যসহ একই গ্রামের জুয়েল, আবুল খয়ের ও নিজাম নামের তিন যুবক গরু চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে। তোতা মিয়া অস্বীকার করলে নির্জন মাঠের মধ্যে গাছের সাথে পিছমোরা করে বেঁধে হাতের তালুতে সিগারেটের আগুন দিয়ে ছেঁকা দিয়ে তারা নির্যাতন চালায়।
পরে তার কোমর থেকে দুই পা পর্যন্ত দাহ্য পর্দাথ ঢেলে আগুন দিলে আগুনে দগ্ধ হয়ে তোতা মিয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ সময় রাত ৩টা ২০ মিনিটে তারা তোতা মিয়াকে মুমুর্ষ অবস্থায় জেলা আধুনিক হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামকে ভোর রাতে তার বাড়ি থেকে আটক করে। এ ঘটনায় রোববার জয়পুরহাট সদর থানায় তোতা মিয়ার স্ত্রী ডলি বেগম ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম ও আরও ৫-৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
ভুক্তভোগী তোতা মিয়া বলেন, আমাকে তারা অন্যায়ভাবে মেরে পায়ে আগুন ও হাতে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছে। তাদের শাস্তি ও বিচার চান তিনি।
জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, এক আদিবাসী ব্যক্তির গরু চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্যে রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫-৬ জন ব্যক্তি রিকশাচালক তোতা মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে এনে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে তারা তোতা মিয়ার লুঙ্গিতে দাহ্য পর্দাথ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এঘটনায় জড়িত ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
এএইচ/