ভারসাম্যহীন এক নারীর পুত্র সন্তান প্রসব, দত্তক নিতে চান অনেকে
হিলি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪:৪৮ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০২১ সোমবার
দিনাজপুরের হিলিতে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী ফুটফুটে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেছেন। প্রসবের পর থেকেই সন্তানকে হাসপাতালে ফেলে রেখে বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তার মানসিক প্রতিবন্ধি মা। বর্তমানে শিশুটি হাসপাতালের নার্স, চিকিৎসক ও এক মায়ের পরিচর্যায় রয়েছে। এদিকে শিশুকে দত্তক নিতে ইতোমধ্যেই অনেক দম্পত্তি আবেদন করেছেন।
গত শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টার দিকে সড়কের পাশে সন্তান প্রসব করা অবস্থায় ওই নারীকে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এরপর থেকেই বাচ্চাটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। তবে পরের দিনই থেকেই শিশুর ভারসাম্যহীন মা হাসপাতালের বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয় নুরন্নবী বলেন, গত শুক্রবার রাতে হিলি স্থলবন্দরের চারমাথা মোড়ে কাজের সুবাধে আমরা কয়েকজন অবস্থান করছিলাম। এসময় আমরা দেখতে পাই এক পাগল নারী সন্তান প্রসব করে সেই বাচ্চা নিয়ে চারমাথার দিকে যাচ্ছে। আমরা সাথে সাথে বাচ্চা ও তার মাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে শিশুটির চিকিৎসা করেন চিকিৎসকেরা।
বাচ্চাটি দত্তক নিতে চাওয়া শাহীদা বেগম বলেন, বাচ্চাটি ও তার মাকে যখন আমার ভাইয়েরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন তখন বাচ্চাটির গায়ে কাঁদা মাটিসহ অনেক ময়লা লেগে ছিল। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর আমরা সব পরিষ্কার করি, আমি বাচ্চাটিকে নিতে চাই তাই তাকে বুকে টেনে নিয়েছি। বাচ্চাটিকে দুধ খাওয়ার জন্য তার মাকে বলা হলেও বাচ্চাটিকে কাছেই নিচ্ছে না সে। বাচ্চাটির খাওয়া-দাওয়া করানোসহ প্রসাব-পায়খানা সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আমি করছি।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গাদ্দাফি শিকদার বলেন, হাসপাতালে আসার আগেই ওই নারী সন্তান প্রসব করেন। তবে এর পরবর্তী ধাপগুলো হাসপাতালে আসার পর সম্পূর্ণ করা হয়। বর্তমানে বাচ্চাটি সুস্থ্য রয়েছে, কিন্তু বাচ্চার মা মানসিক প্রতিবন্ধি এজন্য বাচ্চার কাছে তাকে রাখা যাচ্ছেনা। সে বাহিরে বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাসপাতালের এক সিস্টার ও বাহিরের এক মহিলা বাচ্চাটির দেখাশোনা করছেন। হসপিটাল থেকে বাচ্চাটির জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে বাচ্চাটিকে নেওয়ার জন্য অনেকেই হাসপাতালে আসছেন, তবে কেউ চাইলেই তো তাকে দেওয়া যাবেনা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করলে সমাজসেবা অধিদপ্তরকে নিয়ে একটি কমিটি রয়েছে সেই কমিটি যে সিদ্ধান্ত দিবে সে অনুযায়ী বাচ্চাটির পরবর্তী ভবিষ্যৎ ঠিক হবে বলে জানান চিকিৎসক গাদ্দাফি শিকদার।
হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশীদ বলেন, হাসপাতালে যে শিশুটি রয়েছে সেটি এক মানসিক প্রতিবন্ধি মায়ের। মানসিক প্রতিবন্ধি হওয়ার কারণে শিশুটির লালন-পালন ও ভরণ পোষনে সমস্যা হবে যার ফলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাচ্চাটিকে দত্তক দেয়া হবে। তারই আলোকে ইতোমধ্যে ৫ দম্পত্তি শিশুটিকে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে যাচাই বাছাইপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএইচ/