হেফাজতে ইসলাম: অরাজনৈতিক সংগঠনের রাজনৈতিক অভিলাষ
আমিনুল ইসলাম আমিন
প্রকাশিত : ০৫:৩১ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২১ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:১৪ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২১ মঙ্গলবার
২০০৯ সালের দিকে সরকার ঘোষিত নারীনীতিকে ইসলাম বিরোধী হিসেবে অভিহিত করে হেফাজতে ইসলামের জন্ম হয়। যদিওবা সরকার ঘোষিত নারীনীতির মধ্যে ইসলামবিরোধী কিছুই ছিলনা, বরং নারী নীতি ছিল এ দেশের পশ্চাদপদ, অবহেলিত নারী সমাজের অধিকার নিশ্চিত করার একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা মাত্র। শুরুতে হেফাজতে ইসলাম নিজেদেরকে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে ‘অরাজনৈতিক সংগঠন’ নামের আড়ালে তাদের রাজনৈতিক অভিলাষ দিনের পর দিন প্রকট থেকে প্রকটতর হয়েছে।
তাছাড়া যে সংগঠনের নেতৃত্বে ৮০ শতাংশই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা সেই সংগঠন অরাজনৈতিক কিভাবে হয় তাও বুঝে আসে না। তাদের রাজনৈতিক অভিলাষের কদর্য রূপটি প্রথম আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় ২০১৩ সালের ৫ মে। সে সময়ে তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ঢাকায় একটা সমাবেশের ডাক দেয় এবং সমাবেশ শেষে শাপলা চত্বরে গিয়ে একটি শোকরানা মোনাজাতের মাধ্যমে সমাবেশের সমাপ্তির কথা বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন।
কিন্তু সেদিন হেফাজত নেতারা শাপলা চত্বরে নিজেদের সমাবেশ দেখে ক্ষমতাকে হাতের মুঠোয় ভেবে মুহূর্তের মধ্যেই পল্টি মারলেন। সমাবেশে তারা সরকার পতনের ডাক দিয়ে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এ বছরে ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ তিনদিনের অব্যাহত অগ্নি-সন্ত্রাস, ভাংচুর, মানুষ খুনের মতো বেশ কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তারকৃত নারী কেলেঙ্কারীর জন্য ব্যাপক নিন্দিত মামুনুল হক ২০১৩ সালের ৫ মে দম্ভ করে ঘোষণা করেছিলেন- “সৈয়দ আশরাফ সাহেব ও অন্যান্য মন্ত্রীরা রাতের মধ্যে কে কোন দিকে পালাবেন তা ঠিক করে রাখেন, না হলে পালানোর পথ পাবেন না”। তাদের এ ধরনের অসংখ্য দাম্ভিক, অশালীন, অশিষ্ট বক্তব্যই তাদের রাজনৈতিক অভিলাষকে প্রশ্নাতীত ভাবে প্রমাণ করে। তারা মূলত সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতায় যাবার দিবাস্বপ্নে ধর্মীয় নেতার মুখোসে ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামের অরাজনৈতিক ব্যানারে সমবেত হয়েছে, যা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
এখনো বাবুনগরী সাহেব ও মামুনুলের হেফাজতে ইসলামের অনেকেই কথায় কথায় আরেকটি ‘শাপলা চত্বর’ ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে বুড়িগঙ্গায় ফেলার হুংকার দেন, সরকার পতনের হুমকিও দেন। ‘শাপলা চত্বর’ কথাটি এমনভাবে বলেন যেন এটি তাদের জন্য বড় কোন গৌরবের বা অর্জনের বিষয়। অথচ বাস্তবতা হলো- ‘শাপলা চত্বর’ তাদের লেজ গুটিয়ে পালানোর ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মতো একজন ধর্মভীরু মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে ‘মোনাজাতের মাধ্যমে সমাবেশ সমাপ্তি’র কথা বলে মোনাজাতের অনুমতি নিয়ে সেটাকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে প্রতারণা করার ইতিহাস।
সে প্রতারণা করতে গিয়ে তারা লেজ গুটিয়ে পালালেন। অবশ্য এটি তাদের প্রথম বা শেষ পরাজয় নয়, মূলত পরাজয়ই তাদের অনিবার্য পরিণতি। ১৯৫২, ১৯৬৯ এবং ১৯৭১- বারবারই তারা পরাজিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও করুণ পরাজয়ই তাদের জন্য অবিকল্প নিয়তি। মুখে অরাজনৈতিক সংগঠনের দাবী করলেও এ ধর্ম ব্যবসায়ীরা ক্ষমতার লোভে পারে না এমন কোন কাজ এই জগতে আছে কিনা সন্দেহ। সেটা প্রতারণা, শঠতা, নিচুতা, হীনতা, ভণ্ডামি এমনকি কোরান-হাদিস টেনে এনে মিথ্যাকে বৈধতার ফতোয়া দেওয়া থেকে শুরু করে যেকোনও কাজই হোক না কেন।
সম্প্রতি আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে তারা ‘আইয়ামে জাহেলিয়াতে’র অন্ধকারে ঠেলে দিতে উদ্যত হল। মোদীর আগমন ঠেকাতে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়ে সরকারকে ক্ষমতা থেকে থেকে টেনে নামানোর হুঙ্কার দিল। তাদের কথা শুনে মনে হয় মোদী বাংলাদেশে আসলেই যেন এ দেশে আর ইসলাম থাকবে না, ধর্ম থাকবে না। অথচ এমন নয় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এবারই প্রথম মোদী বাংলাদেশে এসেছেন। ২০১৫ সালেও বাংলাদেশে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন কিন্তু বিএনপি-জামায়াতসহ অনেকেই ফুলের শুভেচ্ছা বিনিময়ের প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। অবস্থা এমন হয়েছিল যে আজকে যারা হেফাজতের জন্য অঝোর ধারায় কাঁদছেন সে বিএনপির নেতারা মোদীর ক্ষমতায়নে খুশি হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ২০১৫ সালের সে শুক্রবার সকাল ৮ টায় অফিস খোলার আগেই ( যাতে সবার আগে শুভেচ্ছা জানানোর ক্রেডিট নিতে পারে) ঢাকাস্থ ভারতের হাইকমিশনে মিষ্টি ও ফুল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
মোদী সরকারের করুণা নিয়ে ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর বিএনপি নেতারা শুক্রবার যে সরকারি ছুটিরদিন- সেটাই ভুলে গিয়েছিল। যা একটি স্বাধীন দেশের একটি রাজনৈতিক দলের জন্য চরম লজ্জা ও অপমানের!
হেফাজতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত হেফাজত নেতাদের বাঁচানোর জন্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি বিবৃতি দিলেন, যেখানে তিনি চরম অসত্যের আশ্রয় নিয়ে বলেছেন- সরকার দেখে দেখে ধর্মীয় আলেমদের গ্রেপ্তার শুরু করেছে। অথচ তা সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত, অসাড় ও নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। সরকার যদি ধর্মীয় আলেমদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করতোই তাহলেও তো সবার আগে গ্রেপ্তার হতেন বায়তুল মোকাররমের খতিব, গ্রেপ্তার হতেন আলীয়া মাদ্রাসাগুলোর প্রিন্সিপাল স্যারেরা । কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি, হবেও না। কারণ এ সরকার কখনোই ইসলামের বিরুদ্ধে নয়, বরং এ সরকারের আমলে ইসলামের যে কাজ হয়েছে তা অতীতের কোনও সরকারের আমলেই হয়নি। প্রকৃত পক্ষে এখন যারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে খুন, জ্বালাপোড়াও, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
মির্জা ফখরুল আবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, “হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির নয় সরকারের সখ্যতা।” মির্জা ফখরুল সাহেবের কাছে প্রশ্ন, সরকারের সাথে যদি হেফজতের সখ্যতা থাকে তাহলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়ে গ্রেপ্তারকৃত হেফাজত নেতাদের জন্য আপনাদের এত মায়াকান্না কেন?
আসলে হেফাজতের উপর ভর করে ক্ষমতায় যেতে মরীয়া বিএনপি-জামাত তাদের গভীর ষড়যন্ত্র নস্যাত হয়ে যাওয়ায় খেই হারিয়ে পাগলের প্রলাপ বকছেন। বিএনপি-জামাতের ছোটবড় সব নেতা দেশে ও দেশের বাইরে হেফাজতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে অপপ্রচারে লিপ্ত তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে জামাত- বিএনপি।
এ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি চেয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতার মাধ্যমে চট্টগ্রাম ব্রাহ্মনবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকে কলুষিত করতে, ম্লান করতে। তাই তারা রক্তের হোলিকেলায় মেতে উঠলো, দেশকে রক্তাক্ত কসাইখানা বানিয়ে চারিদিকে আগুনের লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। সাধারণ জ্ঞান দিয়ে এ বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করলে দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে যাবে। বাংলাদেশের হেফাজতীদের মাদার অর্গানাইজেশন কিন্তু ভারতের দেওবন্দে অবস্থিত, যা দেওবন্দ মাদ্রাসা নামে বিখ্যাত। কই তারা তো সেখানে মোদীর রক্ত চেয়ে বা মোদীকে টেনে-হিচড়ে ক্ষমতা থেকে নামানোর ব্রত নিয়ে শাহাদাতের কাফেলায় শরীক হতে কাউকে আহ্বান করেননি!
এমনকি মোদীর বিরুদ্ধে কখনও কোন মিছিল মিটিং করেছে এমন কোনও খবরও তো দেখি না। মোদী তো বাংলাদেশে আসার আগে সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ সফর করেছেন, কই সেখানেও তো ইসলাম গেল, ধর্ম গেল বলে- রব ওঠেনি কিংবা জেহাদের ডাকও কেউ দেয়নি। তাহলে কি কেবল মোদির বাংলাদেশ সফর ঠেকানোই ইসলাম রক্ষা, ধর্ম রক্ষা, ও ঈমান আকিদা রক্ষার একমাত্র পথ? মোদী নিজ থেকে বাংলাদেশে আসেননি। আমাদের সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে তাকে আমরা অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করে এনেছি। হেফাজতীরা তো ইসলামের আদাব,আখলাক ও রাসুল (স.) সম্পর্কে আমাদের চেয়ে অনেক বেশিই জানেন এবং বোঝেন। তারা কি জানেন না আল্লাহর নবী (স.) মেহমানদের সাথে কি আচরণ করতে বলেছেন! কিভাবে আপ্যায়িত করতে বলেছেন? সবই জানেন এবং বোঝেন, তবু কেবল ক্ষমতার লোভে পাগল হয়ে ধর্মের নামে এসব অধর্ম করছেন, ইসলামের নামে অনৈস্লামিক কার্যকলাপ করছেন । তারপরও তারা যদি রাজনৈতিক প্রয়োজনে মোদী আগমনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল করতে চাইতেন সেটা তারা করতেই পারতেন। মূলত তারা শান্তিপূর্ণ মিছিলের কথা বলে রাস্তায় নেমে সংঘাতের পথে গেল, রক্তপাতের পথে গেল।
এ ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ ধ্বংসযজ্ঞের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তারের পর জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর জন্য জুনাইদ বাবুনগরী সাহেব বললেন, “অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর ইসলামে হারাম, হেফাজত ইসলাম হারাম কাজ করতে পারেনা।” অথচ ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চের জাতীয় দৈনিক ও টিভি ও সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবি, ভিডিও দেখলেই কারো মনে সন্দেহ থাকার কথা নয় যে হেফাজতিরাই সব অপকর্মের হোতা। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, সব দেখে, বুঝে জেনেও তিনি এসব হারাম কাজে জড়িতদের পরিত্যাগ করবেন না। যেহেতু তার বক্তব্য লোক দেখানো ভণ্ডামি, মানুষকে ধোঁকা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। এরপরে বাবুনগরী সাহেব আরেকটি বিবৃতিতে বলেছেন, “তালিকা দিন, সবাইকে নিয়ে আমি জেলে যাব তবু লকডাউন তুলে দিন, মসজিদ, মাদ্রাসা খুলে দিন, মানুষকে ইবাদত বন্দেগী করতে দিন।”
তার কথা শুনে মনে হয় এ দেশে যেন কওমী মাদ্রাসা ছাড়া আর কেউ ইবাদাত বন্দেগী করে না! যেন ধর্ম, মসজিদ মাদ্রাসাগুলো বাবুনগরী সাহেবের বাপ-দাদার সম্পত্তি। তাদের ফতোয়ার বা স্বীকৃতি যারা পাবে কেবল তারাই মুসলমান, বাকি সবাই কাফের, মুশরিক, নাস্তিক-মুরতাদ। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়ার পর ফতোয়া দিলেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সবাই কাফের, নাস্তিক। তাদের জানাজা পড়ানো যাবে না। অথচ দেখুন এ ভণ্ড ও প্রতারকরা দুদিন যেতে না যেতেই তাদের ঘোষিত ‘কাফেরদের নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’র বাড়ির গেইটে সাক্ষাতের অপেক্ষায় দণ্ডায়মান। যে কাফেরের জানাজা না পড়ানোর ফতোয়া দিলেন- সে কাফেরের বাড়িতে গিয়ে আবার খাওয়া-দাওয়া করলেন কোন মুখে? এসব দেখার পর আম জনতার প্রশ্ন, “হুজুর আপনাদের কথার মধ্যে সত্য মিথ্যা আমরা বুঝব কিভাবে?”
বাবুনগরীর কথা শুনে মনে হতে পারে লকডাউন যেন বাবুনগরী, মামুনুলদের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা দেখছি দেশে প্রতিদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। আরেকটি অতি প্রাসঙ্গিক বিষয় এখানে উল্লেখ করতেই হয়, বর্তমানে সৌদি আরবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম, তবু সেখানের সরকার জনগণের নিরাপত্তার কথা ভেবে গ্র্যান্ড মুফতি সর্বসম্মত ফতোয়ায় তারাবির নামাজ ২০ রাকাতের পরিবর্তে ১০ রাকাত করেছেন। কই সেখানে তো হেফাজতে ইসলামের বাপ-দাদারা ইসলাম গেল, ধর্ম গেল- বলে মাতম তুলছেন না? বা আমাদের দেশের হেফাজতীরাও ‘ইসলাম বা ধর্ম বিপন্ন হলো’ শ্লোগান তুলে কোন মিছিল মিটিং করছেন না! তাহলে আমাদের দেশে করোনার ভয়াবহ ছোবল থেকে বাঁচতে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত ঠিক রেখে শুধু সোস্যাল ডিসট্যান্স মেনে চলে নামাজ পড়তে বললে ইসলাম বিপন্ন হয় কিভাবে? করোনাকালে দেশে সরকারি মাদ্রাসা, বাংলা বা ইংলিশ মিডিয়াম সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরও কওমী মাদ্রাসা খুলে দেয়ার দাবী তুলছেন কেন ? নিরীহ পথশিশুদের বলি বানিয়ে ক্ষমতায় যাবার তর সইছে না বলেই তো! আসলে এসবই তাদের নিম্নমানের ভণ্ডামি-প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। তাদের ভণ্ডামির কোনও শেষ নেই বলেই তাদের নেতার ‘জেনা’র মত অবৈধ কর্মকাণ্ডকে ব্যক্তিগত বিষয় বলে ঘোষণা দেয় এবং সেই অনৈতিক, অনৈস্লামিক জেনাকে সীমিত পরিসরে জায়েজের ফতোয়ার দেওয়ার জন্য পবিত্র কুরআন হাদিসকে টেনে এনে ইসলামের সুমহান আদর্শকে কলুষিত করতে তাদের বুক কাঁপে না। অথচ ধর্মের প্রতি তাদের ন্যুনতম শ্রদ্ধা থাকলে, বিশ্বাস থাকলে তাদের নেতা সবার আগে তার কৃত অপকর্মের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তারপর তার দলের নেতাকর্মী এবং দেশের আলেম সমাজের কাছে ক্ষমা চাইতেন। তা না করে জেনার মত জঘন্য পাপকে শরীয়তের অপব্যাখ্যা দিয়ে বৈধতা দেয়ার স্পর্ধা দেখিয়ে ইসলামকে কলঙ্কিত করছেন। যাদের কারণে আজ ইসলামের সুমহান আদর্শ বিতর্কিত, কলুষিত তাদের হাতে আর যাই হোক ইসলাম কখনো নিরাপদ নয়। তাছাড়া ইসলাম ও কোরান রক্ষার জন্য হেফাজতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম, জামায়াতে ইসলাম বা কোন রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক কোন দলের প্রয়োজন নেই। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সুরা হিজরের ৯ নং আয়াত সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। যেখানে মহান রাব্বুল আলামিন সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, “নিশ্চয়ই আমি কোরান অবতীর্ণ করেছি, এবং নিশ্চয়ই আমিই তার হেফাজতকারী।”
তাই ক্ষমতালোভী, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী, অনৈতিক কাজে নিজেদের স্বার্থে ইসলাম ব্যবহারকারীরা মূলত ইসলাম হেফাজতের নামে নিজেদের স্বার্থেই হেফাজত করছে তা বুঝতে বিবেকবান মানুষের দ্বিধা আছে বলে মনে হয় না।
লেখক-উপ- প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।