পাহাড়ের রানী চিম্বুক
প্রকাশিত : ০১:৪৫ পিএম, ১০ জুন ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ১২:২৫ পিএম, ১৭ জুন ২০১৭ শনিবার
পাহাড় নাকি সাগর, এই দুটি প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মধ্যে কোনটা বেশি প্রিয় তা হয়তো নির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন না পর্যটন প্রেমীরা। তবে হয়তো অনেক প্রেমিক তার প্রিয়াকে পাহাড় কিনে দেওয়া রোমান্টিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে থাকেন।আর বাংলাদেশের পাহাড়ী সৌন্দর্যের মধ্যে পাহাড়ের রানী হিসেবে সর্বোধিক পরিচিত চিম্বুক পাহাড়।এটি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম পাহাড়।
বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের অবস্থান। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২৫০০ শত ফুট। চিম্বুক যাওয়ার রাস্তার দুই পাশের পাহাড়ী দৃশ্য খুবই মনোরম। চিম্বুকে যাওয়ার পথে সাঙ্গু নদী আপনার ভ্রমণকে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও নান্দনিক করে তুলেবে। পাহাড়ের মাঝে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সড়ক দিয়ে এঁকেবেঁকে যাওয়ার সময় মনে হবে গাড়িতে করে বুঝি চাঁদের বুকে পাড়ি জমাচ্ছেন। ২৫০০ ফুট উঁচুতে দাঁড়িয়ে এ অপরূপ বিচিত্র প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পাবেন চিম্বুকে। পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে দেখতে পাবেন নিচে ভেসে যাচ্ছে মেঘের ভেলা। পার্শ্ববর্তী জেলা কক্সবাজার আর চট্টগ্রাম এর বিভিন্ন উপজেলাগুলোকে দেখা যায় এখান থেকে। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘ দেখে মনে হয় মেঘের স্বর্গরাজ্য ভাসছে চিম্বুক।
থানছি সড়কের দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় চিম্বুক অবস্থিত হওয়ায় এখানে হোটেল বা রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠেনি। জেলা প্রশাসকের তত্ত্ববধানে একটি রেস্টহাউস আছে। জেলা প্রশাসকের অনুমোতিক্রমে রাত্রি যাপনের সুযোগ রয়েছে। চিম্বুকের পাশে সেনাবাহিনীর ক্যান্টিন রয়েছে। এখানে সকালের নাস্তা ও দুপুরে খাবার পাওয়া যায়। এছাড়া খাবারের জন্য বান্দরবান থেকে চিম্বুক যাওয়ার পথে মিলনছড়ি ও শাকুরা নামে ২টি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। তবে বান্দরবান থেকে হালকা খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে রওনা দেওয়াটাই সবচেয়ে ভাল।
যেভাবে যাবেন:
প্রথমে আপনাকে বান্দরবান শহরে যেতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির গাড়ি ছেড়ে যায়। যেমন শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন- এর যেকোনো একটি বাসে চড়ে আপনি বান্দরবানের যেতে পারেন। রাত ১০ টায় অথবা সাড়ে ১১টার দিকে কলাবাগান, সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে এসব বাস বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে পারেন। বদ্দারহাট থেকে বান্দারবানের উদ্দেশে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের বাস বান্দরবানের উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়।
এরপরে চিম্বুক যেতে হলে বান্দরবান শহরের রুমা বাস স্টেশন থেকে চাঁদের গাড়ি হিসেবে পরিচিত জীপ, ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড রোভার, পাজেরো এবং বান্দরবান-থানছি পথে যাতায়াত করা বাস ভাড়া নিতে হবে (স্পেশাল বাস যা দূর্গম পাহাড়ী পথে চলাচল করতে সক্ষম)। রাস্তা বেশ দূর্গম হওয়ায় বাসে যাতায়ত করা ঝুঁকিপূর্ণ। চিম্বুক-থানছি পথে বিকেল ৪ টার পরে কোনো গাড়ি চলাচল করে না। তাই পর্যটকদের ৪ টার মধ্যে ফিরে আসা উচিত।
থাকবেন কোথায়:
বান্দরবানে অসংখ্য রিসোর্ট, হোটেল, মোটল এবং রেস্টহাউজ রয়েছে। যেখানে ৬০০ থেকে তিন হাজার টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
হলিডে ইন রিসোর্ট : মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের বিপরীতে ছোট্ট পাহাড়ের চূড়ায় হলিডে ইন রিসোর্ট। এখানে ছোটছোট অনেকগুলো কটেজ রয়েছে। ফোন-০৩৬১-৬২৮৯৬।
হিলসাইড রিসোর্ট : বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের পাঁচ কিলোমিটার নামকস্থানে অবস্থিত মিলনছড়ি। এখানে রয়েছে উন্নত পরিবেশে রাত্রি যাপনের সু-ব্যাবস্থা। মোবাইল-১৫৫৬৫৩৯০২২।
হোটেল ফোর স্টার : বান্দরবান শহরে অবস্থিত হোটেল ফোরস্টার। এখানে এসি এবং নন এসি দু রকমের রুম রয়েছে। হোটেলের প্রতিটি কক্ষে রয়েছে টেলিভিশন। ফোন-০৩৬১-৬২৪৬৬।
হোটেল থ্রী স্টার: এটি বান্দরবান বাস স্টপের পাশে অবস্থিত। নীলগিরির গাড়ী এই হোটেলের সামনে থেকে ছাড়া হয়। এটি আট থেকে ১০ জন থাকতে পারে চার বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট। প্রতি নন এসি ফ্ল্যাট-২৫০০ টাকা, এসি-৩০০০ টাকা। বুকিং ফোন: থ্রী স্টার এবং ফোর ষ্টার হোটেল মালিক একজন, মানিক চৌধুরী-০১৫৫৩৪২১০৮৯ / ০১৮১৩২৭৮৭৩১।
হোটেল রিভার ভিউ: জেলা শহরের মধ্যে সাঙ্গু নদীর পাশ্ববর্তী প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে হোটেল রিভার ভিউ। এখানে নিজস্ব রেস্টুরেন্টও রয়েছে। ফোন-০৩৬১-৬২৭০৭।
আপনি চাইলে নীলাচল স্কেপ রিসোর্টে থাকতে পারেন। নীলাচল স্কেপ রিসোর্টে তিনটি কটেজে ছয়টি কক্ষ আছে। প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ৩ হাজার টাকা। এছাড়া রিসোর্টের অতিথিদের জন্য ভালো মানের খাবারের ব্যবস্থা করে থাকেন কর্তৃপক্ষ। যোগাযোগঃ ০১৭৭৭৭৬৫৭৮৯।