বেনাপোল বন্দরে চুরি থামছে না
বেনাপোল প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২:৫০ পিএম, ৬ মে ২০২১ বৃহস্পতিবার
দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরের বিভিন্ন শেডে থেকে কোটি কোটি টাকার পণ্য চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। বন্দরের কিছু কর্মকর্তার নেতৃত্বে পণ্য চুরির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোন সমাধান পায়নি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।
প্রতিনিয়ত বন্দর থেকে আমদানিকৃত মালামাল চুরির ঘটনা নিয়ে বর্তমানে কাস্টমস ও বন্দরের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। বিশেষ করে কাস্টমসের নিলামকৃত পণ্য চুরি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তাতে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছেন, খুলনার আমদানিকারক সান ওয়ার্ল্ড ট্রেড ভারত থেকে ১৯ লাখ ৯১ হাজার ৩২০ কেজি ব্রোকেন স্টোন আমদানি করে। যা বন্দরের টিটিআইতে সংরক্ষণ করা হয়। পরে কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনারের নেতৃত্ব পণ্য চালানটি ইনভেন্ট্রি করে ১৭ লাখ ৯১ হাজার ৩২০ কেজি কম পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দর কর্তৃপক্ষকে পত্র দিয়েছে।
অন্যদিকে বন্দরের ১নং শেডে থেকে বেনাপোলের এইচবি ইন্টারন্যাশনালের ১১০২ টন উন্নতমানের শার্টিং ও প্যান্টিং কাপড় চুরি হয়। চালানটি মিথ্যা ঘোষণার অভিযোগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটক করে। পরে চালানটি নিলামে বিক্রি করা হয় ৬১ লাখ টাকায়। নিলামকারী বেনাপোলের নোভা এন্টারপ্রাইজ পণ্য চালানটি খালাস নিতে গিয়ে ১১০২ কেজি চুরি যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। নিলামকারী তাৎক্ষণিক বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদারকে জানালে তিনি নিলাম ক্রেতা মোহাম্মদ আলী খানকে হুমকি দিয়ে বন্দর থেকে বের করে দেন বলে তিনি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিলামকারী মোহাম্মদ আলী খান জানান, বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদারের নেতৃত্বে বন্দরে একটি শক্তিশালী চোর সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তিনি গত ২ বছর বেনাপোলে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বড় ধরনের পণ্য চুরির ঘটনা ঘটছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেও কোন সমাধান পাওয়া যায়নি।
সংশিষ্ট সূত্র জানায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে ২০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে। এসব পণ্য থেকে সরকার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে।
বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়। আর চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, বন্দরের প্রতিটি গেটে নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্বে থাকার পরও অবাধে প্রবেশ করছে বহিরাগত। বন্দর একটি বন্ডেড কেপিআইভুক্ত এলাকা সত্ত্বেও কীভাবে বন্দরে অবৈধ লোকজন প্রবেশ করছে, তা নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, বন্দর থেকে পণ্য চুরি হচ্ছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। চুরি যাওয়া মালামালের কোন ক্ষতিপূরণ দেন না বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বন্দরের বিকল ওজন স্কেলের ওজন নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি ওজন স্কেলের ওজন বেশি দেখিয়ে বন্দরের মাসুল বেশি আদায় করা হচ্ছে কয়েক বছর যাবত। ভারত থেকে সঠিক ওজন করে পণ্য এনে এখানে হয়রানিসহ অতিরিক্ত শুল্ক ও জরিমানার শিকার হতে হচ্ছে।
বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, চুরির বিষয়টি নিয়ে উত্তর দেবেন পরিচালক। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন পরিচালক। আমি উত্তর দিতে বাধ্য নই।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল জলিল বলেন, বন্দর থেকে পণ্য চুরির অভিযোগ পাওয়ার পর বন্দরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, বন্দরের অধিকাংশ সমস্যা আমরা বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের সাথে নিয়ে সমাধান করেছি। মামুন কবির তরফদারের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো নেই। টিটিআই থেকে ব্রোকেন স্টোন ও ১নং শেড থেকে উন্নতমানের মূল্যবান শাটিং সুটিং কাপড় চুরি গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।
এএইচ/এসএ/