খরায় ফলন কম ও ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কিত লিচু চাষীরা
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১০:৩২ এএম, ৭ মে ২০২১ শুক্রবার
লিচুগ্রাম খ্যাত নাজিরপুরে উৎপাদিত লিচু
এবার খরা ও বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও নাটোরের লিচু গ্রাম খ্যাত নাজিরপুরের বাগানগুলোর গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা লাল লিচু। টসটসে লিচুর ভারে নুয়ে পড়েছে ডালগুলো। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে রসে ভরা লিচু। তবে গত মৌসুমের তুলানায় লিচুর ফলন অনেক কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষীরা।
একই কারণে হয়েছে লিচুর আকার ও স্বাদের পরিবর্তন। কোনও কোনও বাগানে লিচু পাকা ও হলুদ রং ধারনের আগেই ফেটে যাচ্ছে। ফলে লিচুর বাজারজাতকরণ ও ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন লিচু চাষী ও ব্যবসায়ীরা। তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবি, খরার কারণে তাদের দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকরা বাগানে সেচ এবং পানি ছিটিয়ে দেওয়ায় এবারও লিচুর ফলন ভালো হবে।
আর মাত্র ৪ দিন পর শেষ হচ্ছে জেলা প্রশাসনের বেধে দেয়া লিচু আহরণের সময়। ইতোমধ্যে দরজায় কড়া নাড়ছে মধু মাস জ্যৈষ্ঠ। নাটোরের বাগানগুলোতে এরই মধ্যে রং বদলাতে শুরু করেছে। বিশেষ করে জেলার ৫৭০টি লিচু বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে রসালো লিচু। কিন্তু প্রতিবছর দেশের অভ্যন্তরীণ জেলা থেকে মহাজন, ব্যাপারী ও ফড়িয়ারা লিচুর বাগান দেখতে আসলেও করোনা মহামারির কারণে এবার তারা আসতে পারছেন না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে লিচুর ফলনও কম হয়েছে।
ক’দিন আগেও গুরুদাসপুর উপজেলার লিচু বাগানগুলোতে শোভা পাচ্ছিল স্বর্ণালী মুকুল। এখন তা দানা বেঁধে সবুজ গুটি থেকে হলুদ রং ধারণ করতে শুরু করেছে। মালিকদের পরিশ্রমে লিচু পর্যায়ক্রমে পরিপূর্ণ আকার ধারণ করছে। মধুমাসের ফল হিসেবে পরিচিত এখানকার মোজাফ্ফর ও বোম্বাই জাতের লিচু দেশ সেরা। এছাড়া চায়না থ্রি জাতের স্বল্প সংখ্যক লিচু বাগানও রয়েছে।
গুরুদাসপুর উপজেলার লিচুগ্রাম খ্যাত নাজিরপুরে উৎপাদিত লিচুর হাঁট বসে উপজেলার বেড়গঙ্গারামপুর ও মামুদপুর এলাকায়। এখান থেকেই প্রতিবছর এসব লিচু ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু অনাবৃষ্টি ও অতি খরার কারণে রোদের তাপে পুড়ে ঝরে পড়ছে লিচু। এ কারণে এ বছর লিচুর সরবরাহ কম হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন লিচুর বাগান মালিকরা।
বেড়গঙ্গারামপুর লিচু আড়তদার মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিবছর লিচুর ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক করে লিচু দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। কিন্তু এ বছর করোনা ও লকডাউনের কারণে ক্রেতারা আসতে পারছেন না। এছাড়া প্রখর রোদে পুড়ে লিচু ঝরে পড়ায় সরবরাহ অনেক কম হবে বলেও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।
আগে প্রতি ট্রাকে গড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার লিচু থাকতো। এবার ট্রাকপ্রতি সর্বোচ্চ দেড়লাখ টাকার লিচু থাকতে পারে। সেই হিসেবে তিন সপ্তাহের এই মৌসুমী লিচুর বাজারে ২৫ কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রি হবেনা বলেও জানান তিনি।
তবে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও লাভবান হওয়ার আশায় বুক বেঁধে লিচুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষীরা। বেড়গঙ্গারামপুরের লিচু চাষী সেলিম মোল্লা বলেন, আমার বাগানে ৭০টি লিচু গাছ আছে। লিচু ঝরে পড়া রোধে পানির সেচ দিচ্ছি। কাঠবিড়ালী ও বাদুড় তাড়াতে লিচুর গাছে জাল টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার ফলন কম হওয়ার পাশাপাশি লিচুর আকারও ছোট হয়েছে। তাছাড়া শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও পশ্চিমা বদ বাতাসের কারণে গত মৌসুমের তুলানায় লিচুর ফলন অনেক কম হয়েছে। একই কারণে লিচুর আকার ও স্বাদের পরিবর্তন হয়েছে। লিচু পাকা ও হলুদ রং ধারনের আগেই ফেটে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর এলাকায় মোজাফফর জাতের আগাম লিচুর আবাদ হয়। ১০ মে থেকে এই লিচু সংগ্রহ শুরু হবে। জেলায় বোম্বাই, দেশি, মোজাফফর ও চায়না-থ্রি জাতের লিচুর চাষ হয়েছে বেশি। এরইমধ্যে পাকতে শুরু করেছে দেশিগুলো। সবুজ লিচু লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। এ বছর ৫৭০টি ছোটবড় বাগান মিলে লিচু চাষীরা ৪১০ হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদন করছেন। বর্তমানে লিচুর অবস্থা ভালো আছে। কিছুকিছু জায়গায় খরার কারণে সমস্যা হয়েছে। আমরা কৃষকদেরকে সেচ এবং পানি ছিটিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি, কৃষকরা লিচুর ভাল ফলন পাবেন এবং ভাল বাজারমূল্যও পাবেন।
এনএস/