ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

সাদা মনের মানুষ ছিলেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা.মাসুদ পারভেজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৫৬ পিএম, ৭ মে ২০২১ শুক্রবার | আপডেট: ০৮:৫৭ পিএম, ৭ মে ২০২১ শুক্রবার

ডা. মাসুদ পাভেজ

ডা. মাসুদ পাভেজ

গানের ভাষায় বলতে হয়,“হায়রে মানুষ রঙ্গিন ফানুস, দম ফুরালে ফুস।” আসলে কার দম কখন বন্ধ হয়ে যায়-বলা বড়ই কঠিন। প্রাণপাখি কখন যে উড়াল দেবে-তা বোঝার সাধ্য কার। একইভাবে হঠাৎ করে যার প্রাণপাখি উড়ে গেলো তিনি হলেন আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন চক্ষুবিজ্ঞানের চিকিৎসক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান ডা. মাসুদ পাভেজ (৫৮)। 

গতকাল(৬ মে) এশার নামাজ পড়ার সময় অসুস্থতা অনুভব করলে তাঁকে স্থানীয় ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সকল প্রয়াস ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর স্ত্রী সাফা সারওয়াতও একজন চিকিৎসক। তিনি চমেক হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান। মাসুদ পারভেজ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি, সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের দু’দশকেরও বেশি সময়ের সাধারণ সম্পাদক ডা. এখলাছ উদ্দিন।

চমেক হাসপাতাল মসজিদে অনুষ্ঠিত প্রথম জানাজার পর অ্যাম্বুলেন্সে রাখা মাসুদ ভাইয়ের মরদেহ দেখতে গিয়ে তাঁর সমুজ্জ্বল চেহারায় বিশ্বাস হচ্ছিল না তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। মাসুদভাই আমার চোখের চিকিৎসক ছিলেন। মৃত্যুর দুইদিন আগেও তাঁকে মুঠোফোনে আগের দেয়া আইড্রপ আরও চলবে কি না-জানতে কথা বলেছিলাম। তাঁর মৃত্যুর তিনদিন আগে সীতাকুণ্ডের বিশিষ্টজন ফছিউল আলম চৌধুরীর (ফটো চৌধুরী) মৃত্যুতে আমার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। সেখানে মাসুদ ভাই কমেন্ট করেছিলেন, “ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে ক্ষমা করুন, কবুল করুন, বেহেস্ত নসিব করুন, আমীন।জেঠাজেঠির কাছে অনেক স্নেহমমতা পেয়েছি। তাঁদের বাড়ির পিঠাপুলির স্বাদ সবসময়ই মনে পড়ে।”

মাসুদ ভাইয়ের এ অকালপ্রয়াণ বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো। আকস্মিক এ মৃত্যুর ধাক্কা সবচে বেশি আঘাত হেনেছে তাঁর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ৮৩বছর বয়সী অশীতিপর পিতা ডা. এখলাছ উদ্দিনের ওপর। সন্তানের এমন অকালমৃত্যু কোনো বাবার পক্ষে মেনে নেয়া অসম্ভব। কিছুদিন আগে হারিয়েছেন সহধর্মিনী রহিমা আক্তারকে।পুত্রহারার বেদনা সহ্য করার মতো শক্তি যেন তাঁর থাকে- স্রষ্টার কাছে সেই প্রার্থনা করছি।মুঠোফোনে ডা. এখলাছ কাকার সাথে প্রায় নিয়মিত কথা হয় আমার। গত ২০ এপ্রিল ছিল তাঁর ৮৩তম জন্মদিন। তাঁর জন্মদিনকে ঘিরে আমার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। সেজন্যে কাকা ফোনে আমাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। এ মুহুর্তে এখলাছ কাকাকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।

বাবার মতো ডা. মাসুদ পারভেজও একজন সহজ-সরল সাদামনের মানুষ। আগাগোড়াই একজন নিরেট ভদ্রলোক। আত্মগরিমা ও অহঙ্কার বলতে কিছুই নেই। এখলাছ কাকাকে কখনো চিকিৎসা ফি দিতে পারিনি। ঠিক তেমনি তাঁর চিকিৎসকপুত্র মাসুদ ভাইকেও দেওয়া সম্ভব হয়নি। সীতাকুণ্ড কলেজ রোডে মাসুদভাইকে মঙ্গবার ও শুক্রবারে আর দেখা যাবে না। চক্ষুরোগীরা পাবে না আর তাঁর চিকিৎসাসেবা। তাঁর মৃত্যূতে সীতাকুণ্ডবাসী হারালো তাদের এক কৃতিসন্তানকে, মেডিকেল শিক্ষার্থীরা হারালো তাদের প্রিয় মেধাবী শিক্ষককে আর চক্ষুরোগীরা হারালো তাদের একজন ভালো চিকিৎসককে।

আজ (৭ মে) চমেক হাসপাতাল মসজিদ, সীতাকুণ্ড সরকারি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠ ও সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বহরপুর গ্রামের নিজবাড়িতে তিনদফা জানাজাশেষে মাসুদ পারভেজকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যাসন্তানের জনক। ছেলে সদ্য বুয়েট থেকে পাশ করা আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার শেহরান পারভেজ সিয়ান.আর মেয়ে মাহফেরা লাজিম ইজমা চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।

পরিশেষে প্রয়াত ডা. মাসুদ পারভেজের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। সমবেদনা জানাচ্ছি তাঁর শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি।

লেখক-প্রধান সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী ও চাটগাঁরবাণী ডটকম।