শিবুকান্তি দাশের গল্পের মা, ফুল পাখি নদী কিংবা তারার মতো
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৪৬ পিএম, ৯ মে ২০২১ রবিবার
শিশুসাহিত্যিক শিবুকান্তি দাশের সদ্য প্রকাশিত গল্পের বই 'নদীর মতো মা' গ্রন্থটি পড়ে জানালাম 'মা নদীর মতো, কখনো ফুল, পাখি কিংবা আকাশের তারার মতো'। মাকে নিয়ে সন্তানের মনে কত কি স্বপ্ন বোনা। মাকে যে সন্তান অন্তর দিয়ে ভালোবেসেছে, মায়ের আর্শিবাদ সে সন্তান পেয়েছে, তার উন্নতি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। মায়ের প্রতি ভক্তির শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। মায়ের ডাকে বর্ষায় উত্তাল দামোদর নদী সাঁতরিয়ে তিনি গভীর রাতে বাড়ি পৌঁছেছেন। ইসলামে মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত বা স্বর্গ নিহিত বলা হয়েছে। মায়ের কোন তুলনা হয় না। মাকে নিয়ে কিছু করা তাও শ্রেষ্ঠ কিছু।
বইটি প্রকাশক "সাতভাই চম্পা প্রকাশনী,বাংলাবাজার, ঢাকা। ৪০ পৃষ্ঠার অফসেট কাগজে ঝরঝরে ছাপা, বোর্ডবাইন্ডিং করা চমৎকার বইটির ম‚ল্য রাখা হয়েছে মাত্র দুইশত পঞ্চাশ টাকা। বইটি ঘরে বসে কেউ কিনতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন রকমারি ডট কমে।
শিবুকান্তি দাশের গদ্য রচনার হাত অপূর্ব। তাঁর অন্যান্য গল্প,প্রবন্ধ ,উপন্যাস গুলোতেও দক্ষতার ছাপ পাওয়া যায়। আলোচ্য বইটিতে মাকে নিয়ে ১০ টি কিশোর গল্প রয়েছে। গল্প গুলোতে সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা যেমন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তেমনি এক একটা গল্পে রয়েছে মায়ের নৈতিক শিক্ষা। ছোট ছোট শব্দ বাক্যে সুনিপু ভাবে গল্পগুলোকে এগিয়ে নিয়েছেন লেখক। শব্দ বা বাক্যে নেই কোনো বাড়াবাড়ি। ‘হারিয়ে যাওয়া মা'' গল্পটা অসাধারণ। ছোট বেলায় মায়ের সাথে মেলায় গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার অনেক ঘটনা আমাদের জানা। সৈকত মা পাগল এক ছেলে। মাকে ছাড়া তার চলে না। তার মা কিন্তু কালো। সৈকত যখন মেলায় হারিয়ে যায় সবাই তাকে জিজ্ঞেস করে তার মা দেখতে কেমন। সৈকত বলে খুব সুন্দর আমার মা। মেলা কমিটির লোকজন তাকে নিয়ে মেলায় ঘুরে ঘুরে অনেক মাকে দেখালেও তার সুন্দর মাকে পাওয়া যায়নি। মাইকে যখন ঘোষণা দেয়া হয় সৈকতের মা কাদঁতে কাদঁতে মেলা কমিটির অফিসে হাজির। সবাই অবাক হয়ে দেখেন কালো এক মহিলা আমার ছেলে কোথায়, আমার ছেলে কোথায় বলে আহাজারি করতেছে আর তখনই সৈকত মা মা করে জড়িয়ে ধরে। কালো হোক সুন্দরী হোক সন্তানের কাছে প্রতোক মা-ই রাজরানী,ফুলপরি, আকাশের জ্বলজ্বলে তারা।মায়ের কোন তুলনা হয় না।
‘মায়ের মত মা' গল্পটি এতটাই হৃদয়াস্পর্শ ভালোবাসার মুগ্ধতায় ভরা। পৃথিবীতে মায়ের মতও যে মা হয় বা হতে পারে লেখক তা ফুটিয়ে তুলেছেন। মা ছেলে দুইজন দুই দেশের। মায়ের মত মা থাকেন কলকাতায়। তবে সেই মায়ের জন্মভ‚মি বাংলাদেশে। দেশ ভাগের আগে চলে গিয়েছিলেন কলকাতায়। নিজের একমাত্র ছেলে অভিমানে আত্মহত্যা করে। অনেক দিন পর লেখক বন্ধুত্বের সূত্রে বেড়াতে যান ঐ বাড়িতে। প্রথম দেখাতে মা জড়িয়ে ধরে হারিয়ে যাওয়া ছেলে সম্ভোধনে। অনেক দিনের ফেসবুক যোগাযোগে মা মনে মনে ছেলের ছবি এঁকেছেন। এক সপ্তাহের অবস্থান কালে মা ছেলের সম্পর্কের গভীর বাঁধন বিদায়ে তার করুণ রাগীনি যে কেউ চোখের জল আটকাতে পারবে না। বইয়ের সব গল্প মিষ্টি মধুর, বেদনার, ভালোবাসার। অন্য গল্পগুলো হচ্ছে,রন্টু বড় হবে,মায়ের আদর, তুই কি বড় হবি না,নদীর মতো মা,মায়ের ভুবন, মায়ের ভালোবাসা, পরীর নাম ডিঝুম,মায়ের ঠাকুমা। আশা করি সবকটা গল্প পাঠকের মন ভরবেই। অনিন্দ্য সুন্দর বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলামকে।
কেআই//