ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫৮ পিএম, ১০ মে ২০২১ সোমবার
সরকারের পাশাপাশি কৃষি বিভাগের নানামূখী উদ্যোগের ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকল আবহাওয়া, কৃষক উদ্ধুদ্ধকরণ, সার-বীজ বিতরণ, সরকারি প্রণোদনা প্রদানসহ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় চলতি মওসুমে এই জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি বোরো ধানের আবাদ হয়। করোনাকালীন সময়ে নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে ধানের বাম্পার ফলন এবং সঠিক সময়ে ধান কেটে বাড়িতে নিতে পাড়ায় কৃষকদের মাঝে এখন আনন্দের আমেজ বইছে। ইতিমধ্যে জেলায় ৯২ শতাংশ জমির শষ্য কর্তন করা হয়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৮৮৫ হেক্টর কিন্তু আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৯৬ হেক্টরঅ যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১১ হেক্টর বেশি। কৃষি বিভাগের মতে কৃষককে বোরো আবাদের জন্য উদ্ধুদ্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এবছর বোরো আবাদের এলাকার বৃদ্ধি হয়েছে। উদ্যোগগুলোর মধ্যে ছিল বোরো আবাদ মৌসুমে বীজ, সার ও পানি ইত্যাদি উপকরণ নিশ্চত করা, সরকারী পূনর্বাসন ও প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৩ হাজার ৮শ কৃষককে ১ বিঘা করে বোরো আবাদের উপকরণ সার ও বীজের সহায়তা প্রদান, ফোরলেন কাজের জন্য সবুজ প্রকল্পের পানি প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়লেও সকল পক্ষের সহায়তায় বিএডিসি সেচ প্রকল্পের পানি সরবরাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে বোরো আবাদ এলাকা ঠিক রাখা হয়েছিল।
এছাড়াও ৩৫ হাজার কৃষককে ২ কেজি করে ৭০ হাজার কেজি বীজ বিনামূল্যে সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন বীজ কোম্পানী যেমন সুপ্রীম সীড, বায়ার ১ কেজি করে দেড় হাজার কৃষককে বিনামূলৌ হাইব্রীড বীজ বিতরণ। এদিকে জেলার কসবা উপজেলায় ৫০ একর জমিতে সমালয়ে প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়। যেখানে কৃষক যন্ত্রের ব্যবহার ও হাইব্রিড আবাদের মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধির কৌশল হাতেকলমে করতে পেরেছে।
এবার বোরো আবাদ এলাকার বৃদ্ধির পাশাপাশি ফলন বৃদ্ধিতেও বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। এতে করে বোরো বাম্পার ফলন হয়। ফলন বৃদ্ধির জন্য নেয়া বিশেষ পদক্ষেপগুলো ছিল সময়মত সেচ যন্ত্র সমূহ চালুর ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি আবাদ মৌসুমে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চত করা হয়েছে।
এতে করে সেচ কার্যক্রম কোনভাবেই ব্যাহত হয়নি। এছাড়াও আবাদ মৌসুমে রোগ ও পোকার আক্রমণ কমাতে লাইন, লগো পার্চিং নিশ্চিত করা হয়েছে সে সাথে কৃষক যাতে সুষম সার ব্যবহার করে সেজন্য কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় চলমান করোনা সংকটে লকডাউন চলাকালেও কৃষি বিভাগের সকল অফিস নিয়মিত খোলা রেখে কৃষকদের সেবা প্রদান করা হয়েছে এবং কৃষি উপপকরণ ব্যবসায়ীদের দোকান খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে বিগত বছরের চেয়ে এ বছর ৬ হাজার হেক্টর বিভিন্ন প্রকার হাইব্রড জাতের আবাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে নতুন উফশী জাতের (ব্রি ধান ৮১, ব্রি ধান ৮৪, ব্রি ধান ৮৬, ব্রি ধান ৮৮, ব্রি ধান ৮৯ ও ব্রি ধান ৯২ ইত্যাদি) আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। চলতি মৌসুমে ধানের লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ ৭৪ হাজার মেঃ টন যা চালে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৬০৮ মেঃ টন। কৃষি বিভাগের আশা গড় ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়াও আবাদ ও ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি হাওড়ের ধান সময়মত কাটার চ্যালেঞ্জও খুব ভালভাবেই সামলে নিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।
এজন্য প্রশাসন ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তায় লকডাউনের মাঝেও দেশের বিভিন্ন স্থান যেমন ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, রংপুর ও হবিগঞ্জ থেকে ৭ হাজার কৃষি শ্রমিক ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে এসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবস্থান করে ধান কেটেছে। এদিকে ধান পাকা অবস্থায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় ধান ৫-৭ দিন আগে পেকেছে। এছাড়াও জেলায় এ বছর ইউনিয়ন পর্যায়ের হাওড়ে ৭০ শতাংশ এবং ননহাওড়ে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মুল্যে ইতিমধ্যে ৬৫টি কম্বাইন হারভেস্টর বিতরণ করা হয়েছে। এবার ধান কাটায় নতুন ৬৫টি কম্বাইন হারভেস্টর মেশিনের পাশাপাশি পূর্বের ৪৫টি এবং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আরো ৪৬টি সহ মোট ১৫৬ টি কম্বাইন হারভেস্টর মেশিন ও ২৮টি রিপার মেশিন একযোগে জেলায় দান কেটেছে। ফলে ধান কর্তনও দ্রুত হয়েছে। তাই নয় এবার ধান কাটায় নিয়মিত শ্রমিকের পাশাপাশি লকডাউনের কারণে বেকার হয়ে যাওয়া অকৃষি শ্রমিকরাও ধান কাটায় অংশ নিয়েছে। এতে করে দ্রুত সময়ে ধান ঘরে তোলা সহজ হয়েছে। বর্তমানে ধানেরবাজার মূল্য নিয়েও কৃষকরা বেশ খুশি। প্রতিমণ কাঁচা ধান ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা এবং শুকনা ধান ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
ইতিমধ্যে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের জন্যও লক্ষমাত্রা স্থির করা হয়েছে। এ বছর জেলায় ১৪ হাজার ৭১৬ মেঃ টন ধান সরকারিভাবে ক্রয় করা হবে। গত ১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলার নবীনগরে ধান ক্রয়ের কার্যক্রমরে উদ্বোধন করা হয়েছে প্রতি মণ ধান ১০৮০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। এতে করে কৃষক পর্যায়ে এবার ধানের সঠিক মূল্যও নিশ্চিত হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার বলেন, কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি বিভাগ সর্বতভাবে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারিভাবে কৃষকদের জন্য যখন যে সুবিধা আসছে আমরা তা নিশ্চত করছি। সার, বীজ বিতরণ থেকে শুল করে ধানের ফলন বৃদ্ধি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত আমরা কৃষকদের সাথে যোগযোগ রেখে তাদেরকে সকল প্রকার সহযোগিতা করছি। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ ও ফলন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা আনন্দিত।
কেআই//