ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বাবাদের ঈদ! 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪৫ এএম, ১৪ মে ২০২১ শুক্রবার | আপডেট: ১১:৪৯ এএম, ১৪ মে ২০২১ শুক্রবার

বাবা। ছোট্ট একটি শব্দ। সন্তান উদরে এসেছে এ খবরটি বাবাদের জন্য ঈদ আনন্দের মতই। ১০ মাস পর সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে- সেটা আরও বড় ঈদ। এরপর সন্তানের অঙ্গভঙ্গি, হাত পা নাড়াচাড়া, চোখ পিটপিট করা, ঠোঁট নাড়ানো মানেই কথা বলা, মুচকি হাসি, হামাগুড়ি, হাঁটি হাঁটি পা, খেতে শেখা, লম্বা কিংবা কিঞ্চিৎ ঘুম, গোসল করানো, পা ঝাপটানো এর প্রতিটি মুহুর্তই বাবা মাকে অন্তিম সুখ দেয়। যা আসলে ঈদ আনন্দের চেয়ে অনেক গুণ বেশি।

এরপর স্কুলে ভর্তি থেকে চাকরি, এমনকি বিবাহ সম্পন্ন প্রতিটি ধাপই ঈদের আনন্দ দিয়ে যায়। বুড়ো বয়সেও সন্তানকে কিছু দিতে পারাটা বাবাদের জন্য ঈদ আনন্দের মতোই।

সেই বাবা হঠাৎই একদিন নাই হয়ে যায়। যা পৃথিবীর রীতি। কিন্তু বহু পরিবার আছে, যেখানে বাবারা বেঁচে থেকেও মরে যান। সেখানে আপাত দৃষ্টিতে কোনও সুখ শান্তি পরিলক্ষিত হলেও প্রকৃতপক্ষে তা থাকে না। আবার কোথাও কোথাও বাবার স্মৃতিই চিরসুখী করে রাখে সন্তানকে।

এমনই এক নভেম্বর মাসে আমি বাবাকে হারিয়েছি। তাও প্রায় ২২ বছর আগে। এরপর শুধুই জীবনযুদ্ধ। বাবা নেই বলে কেউ বলে না- চিন্তা করো না আমি তো আছি। বাবার অভাববোধ করি প্রতি মুহুর্তে। মা আছেন। বছরের বেশিরভাগ সময়ই তিনি অসুস্থ। তাও শুকরিয়া যে, আল্লাহ রহমত দিয়ে মাকে এখনও রেখেছেন আমাদের মাঝে।

৯০ দশকের কোনও এক রোজার ঈদের কথা মনে পড়ে। সে বছর আমার বড় আপার বিয়ে হয়। আমি তখন মাধ্যমিকের ছাত্র। বাড়ি থেকে বেশ দূরে আপার শ্বশুর বাড়ি। মনে আছে, তখন শীতকাল। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে ঈদগাঁহ থেকে ফিরে এসে সেমাই নিয়ে আপাদের বাড়ি গেলাম। পায়ে হেঁটে। কিন্তু দেখলাম, কোনও এক কারণে যেন আপার মনটা খারাপ। আপার শ্বাশুড়িকে সালাম করলাম। কিন্তু সালামী পেলাম না। মনটা ভার ভার। আমি না বসেই আবার বাড়ি ফিরে এলাম। 

মা খুব জানতে চাইলেন কেন এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম। কিন্তু আমি মাকে কিছু না বলে বাবাকে বললাম, আপার তো মন খারাপ। বাবা তৎক্ষণাৎ একটা মোরগ ধরে জবাই করে দিলেন। রান্না হলো পোলাওসহ। আবার হাঁটা দিলাম পোলাও মাংস নিয়ে। প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা হেঁটে পৌঁছলাম। এবার আপার শাশুড়ি তো ব্যাপক খুশি! আপাও খুশি। পড়ন্ত বিকেলে যখন বাড়ি ফিরব তখন মাওই মা আমাকে ১০ টাকা সালামী দিলেন। আমিও খুশি। আহা! শৈশবের ঈদ। আহা! কী আনন্দ।

গত প্রায় ১০ বছর যাবৎ ঈদের সময় বাড়িতে যাওয়া হয় না। অন্য সময় যাই। রাস্তার জ্যাম, ভোগান্তি সবমিলিয়ে বাড়ি গেলে ঈদ আর ঈদ থাকে না। আবার দুদিন বাদেই ফেরার তাড়া কাজ করে। তাই আর যাই-ই না।

গত বছর থেকে তো করোনার ছোবল। গত রোজার ঈদে আমি করোনাক্রান্ত ছিলাম। এবার সুস্থ আছি। এখনও বেঁচে আছি। করোনায় মরিনি। আলহামদুলিল্লাহ। এটাই তো সবচেয়ে বড় ঈদ। 

আমি নিজে এখন বাবা। ছেলেদের নিয়ে সময় কেটে যায়। মাকে সময় দিই। মা-ই আমার দুনিয়া। যদিও মাকে ঢাকায় ধরে রাখতে বেশ কষ্ট হয়। বাবাকে মিস করি। বিশেষ করে ঈদের সময় বাবাকে খুব মিস করি। চারপাশে কত স্বজন, শ্বশুর-শাশুড়ি, মা, বন্ধু-বান্ধব কিন্তু বাবার অভাবটা কাটে না কিছুতেই। বাবা আজ জান্নাতের পাখি। বাবা তোমায় পেতে চাই, সেই জান্নাতে। নিশ্চয়ই আমার জন্য জায়গা রেখো তোমার বুকে। 

সব বাবারা সন্তানকে ভালোবাসুন। আর সন্তানরা বাবা-মাকে বুঝুন। এটাই হোক এবারের ঈদের ব্রত। ঈদ মুবারক। মঙ্গল হোক সবার। করোনামুক্ত থাকুন সবাই। আমীন।

এনএস/