ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

পুলিশের সালাম-শুভেচ্ছায় অন্যরকম ‘ঈদ বাজার’ তাদের!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:০৮ পিএম, ১৪ মে ২০২১ শুক্রবার | আপডেট: ০১:০৯ পিএম, ১৪ মে ২০২১ শুক্রবার

নাম ‘বিনা পয়সার ঈদ বাজার’। শুনতে অবাক লাগলেও বৃহস্পতিবার (১৩ মে) দুপুরে ঠিক এমন এক বাজারই বসেছিল চট্টগ্রামের রাউজান থানা চত্বরে। রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের উদ্যোগে পরিচালিত এই বাজারে স্থানীয় অসহায় ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষেরা পুলিশের আন্তরিক অভ্যর্থনা ও বিনীত সালাম গ্রহণের পাশাপাশি বিনা খরচায় সেরেছেন ঈদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা।

কী-কী ছিল বাজারেঃ
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই বাজার থেকে এলাকার দুঃস্থ নারী পুরুষেরা বিনা পয়সায় শাড়ি, লুঙ্গি, সেমাই, চিনি ইত্যাদি ঈদ উদযাপনের সামগ্রী পেয়েছেন। বাচ্চাদের জন্য ছিল রকমারি খেলনার বন্দোবস্ত। খরচ করার জন্য বিভিন্ন অংকের নগদ টাকাও দেওয়া হয়েছে সবাইকে। 

পুলিশ জানিয়েছে, থানা চত্ত্বরের খালি জায়গায় বসেছিল এই বাজার। সেখানে মোট ৪টি কাউন্টারের মাধ্যমে নি-খরচার কেনাকাটা সম্পন্ন করেন আগত গরিব অসহায়রা। ‘কাউন্টার’গুলোর নাম ছিল যথাক্রমে- কাপড়-চোপড় কাউন্টার, খাদ্যসামগ্রী কাউন্টার, খেলনা কাউন্টার ও সর্বশেষ ধন্যবাদ কাউন্টার। 

শিরোনাম অনুযায়ী সামগ্রীগুলো কাউন্টারে সাজানো ছিল। এছাড়াও বাজারে ঢোকার মুখে অতিরিক্ত দু’টি কাউন্টারে ‘স্যানিটাইজার’ এবং ‘মাস্ক’ রাখা হয়েছিল। সেগুলো ব্যবহার করেন বাজারে অভ্যাগতরা। ব্যবস্থা রাখা হয় বাজারের ব্যাগেরও। ‘কাউন্টার’গুলোর দায়িত্বে ছিলেন পদস্থ বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সার্কেল এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ‘‘এই অসহায় মানুষগুলোও যেন ঈদ আনন্দের ভাগ পান, সেজন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। দুঃস্থ মানুষজনদের মুখে হাসি ফোটানোই আমাদের লক্ষ্য।

বাজারে এসেছিলেন ডাবুয়া এলাকার বৃদ্ধ রিকশা চালক মো. বদি আলম (৬০), মুন্সী ঘাটা এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ মো. জহির (৫৮)। বাজার শেষে বাড়ি ফেরার পথে তাঁরা বলেন, ‘‘খুবই অভাবের সংসার আমাদের। ঈদে কিছু কিনতেও পারিনি। এলাকার কয়েকজন গ্রাম পুলিশকে সে কথা জানিয়েছিলাম। শেষে তাঁরাই এই বাজারে আমাদের আসতে বলেন।’’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেবল প্রকৃত দুঃস্থ নাগরিকেরাই যাতে এই বাজারের সুবিধা পান, তা নিশ্চিত করতে নিজস্ব সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশই তালিকা তৈরি করেছিল। তার পরে এই বাজারে এসে ঈদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারার জন্য ওই দুঃস্থ অসহায়দের খবর পাঠানো হয়।

শুধু থানা চত্ত্বরেই সীমাবদ্ধ নয়ঃ
গরিব অসহায় মানুষের দুয়ারে ঈদের আনন্দের ভাগ পৌঁছে দিতে স্থাপিত এই বাজার শুধু থানা চত্ত্বরেই সীমাবদ্ধ থাকছে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। গত কয়েকদিন ধরেই রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় পরিচালিত হয়ে আসছে এর কার্যক্রম। ঈদের আগের রাত (চাঁদ রাত) এবং আজ ঈদের পুরো দিন পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় চলমান থাকবে পুলিশের বেতন-বোনাসের টাকায় গরিব মানুষদের মধ্যে ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার অনন্য এই উদ্যোগ। 

অভিনব সালাম ও ধন্যবাদঃ
বাজারে প্রবেশের মুখে একটি কাউন্টারে দাঁড়িয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা সালাম জানিয়ে ক্রেতাদের বিনয়ের সাথে বাজারে স্বাগত জানাচ্ছিলেন। অন্যদিকে বের হওয়ার পথে ছিল ধন্যবাদ কাউন্টার। এই বাজারের সেবা গ্রহণ করার জন্য, কষ্ট করে বাজারে আসার জন্য আগতদেরকে ধন্যবাদ ও বিদায় জানানো হচ্ছিল সেখানে। 

এ প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, দেখুন, আমাদের টাকায় তারা ঈদের বাজার করছেন, এটা নিয়ে তাদের মনে এক ধরনের গ্লানি তৈরি হতে পারে। তারা ভাবতে পারেন যে, আমরা তাদেরকে দয়া করছি। এই ভাবনা যেন তাদের মনে উদয় না হয় এবং তারা যেন ভাবতে পারেন যে, ভাই, বন্ধু, সহযাত্রী হিসেবে তাদের সম্মানেই আমাদের এই আয়োজন, এজন্য আমরা তাদেরকে সালাম ও ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি বাজারে ঢুকতে অনুরোধ করার ব্যবস্থা রেখেছি।

পুলিশ সদস্যদের বেতন বোনাসের টাকাতেই অর্থায়নঃ
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই বিনামূল্যের ইদ বাজারের জন্য কারও কাছ থেকে কোনও ধরনের আর্থিক সহায়তা নেওয়া হয়নি। সার্কেল এএসপিসহ রাউজান থানার অন্যান্য সকল পুলিশ সদস্যদের বেতন বোনাসের টাকা থেকে এর খরচের পুরোটা নির্বাহ করা হয়েছে। নিঃস্ব মানুষের পাশে পুলিশের এভাবে দাঁড়ানোকে অভূতপূর্ব বলছেন স্থানীয় জনসাধারণের অনেকেই।

শুধু বিনেপয়সাতে কেনাকাটাই নয়, বাজার এলাকায় স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা লেখা অনেক প্ল্যাকার্ডও টাঙানো ছিল। ‘লকডাউন’ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সেখানে লেখা ছিল— ‘বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন’, ‘লকডাউন মেনে চলুন’।

উপস্থিত থেকে পুরো বিষয়টির সরাসরি তদারক করেছেন এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম নিজেই। এছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন, সেকেন্ড অফিসার অজয় শীল এবং পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

এনএস/