ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

মানুষের জন্য কাজ করছেন আত্মপ্রত্যয়ী এক স্বেচ্ছাসেবী জান্নাত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:২৮ পিএম, ১৫ মে ২০২১ শনিবার

‘মানুষ মানুষের জন্য’- এই উক্তিটি যেনো আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেছে করোনার এই অন্ধকার সময়ে। দেশের অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এই মহামারির সংকটকালে। অনেকেই খাদ্যের অভাবে অসহায় জীবনযাপন করছেন। বিশেষ করে পথের মানুষরা। তবে মানবতার এই করুণ পরিস্থিতিতে বসে নেই মানবিক মানুষেরাও। অনেকেই যে যার মত করে সাহায্য করে যাচ্ছেন অসহায় মানুষদের। তবে চাহিদার তুলোনায় সেগুলো অনেক কম। সেই ধারাবাহিকতায় এসব অবহেলিত মানুষে পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজধানী মিরপুরের বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস।

করোনার এই ক্রান্তিকালে বিভিন্ন সময়ে নিজের চেষ্টায় যতটুকু সম্ভব অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এই ঈদেরও রান্নাকরা খাবার পৌঁছে দিয়েছেন পথের মানুষদের হাতে। করোনা মহামারিতে অসহায় মানুষের মুখে ঈদের খুশি ছড়িয়ে দিতে তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। কাছের বন্ধুদের সহায়তায় ঈদের দিন দুস্থদের মধ্যে ঘরে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন এই নারী।

এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এইবার ঈদে আমার সব থেকে বড় কাজ ছিলো- রাস্তায় ভাসমান মানুষের জন্য খাবার রান্না করা। তাও সাধারণ খাবার না। আমরা বাসায় ঈদে ভালো খাবার খাই। তাই চেষ্টা করেছি তাদের জন্যও ভালো এবং ভিন্ন ধরনের খাবার দিতে। এই মানুষগুলোর মুখে এক বেলা একটু তৃপ্তি দিয়ে খাবার খাওয়ানোই ছিলো আমার উদ্দেশ্য। আর এইভাবেই সবার সহযোগিতা নিয়ে আমি সামনে এগিয়ে যেতে চাই।’

জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘সমাজ সেবার সাথে জড়িত থাকার ইচ্ছাটা ছোটবেলা থেকেই ছিল। তবে মনের ইচ্ছা থেকে কর্মক্ষেত্রে আমার রাস্তাটা এতটা সহজ ছিল না। আর তা যদি হয় মেয়ে মানুষ, তবে পরিস্থিতি আরো বেশি কঠিন। তবুও সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সমাজসেবার সাথে জড়িত আছি পাঁচ বছর ধরে। প্রয়োজনের ভিত্তিতে কাজ করেছি। সব সময় ছুটে চলেছি অসহায় মানুষের পাশে। কাজ করেছি অনেক আগুনে পুড়ে যাওয়া বস্তিতে। কখনো বই, কখনো খাবার কিংবা কখনো বস্ত্র নিয়ে এগিয়ে গিয়েছি। অনেক আগে থেকেই কখনো নিজ উদ্যোগে আবার কখনো কোনো সংস্থার হয়ে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘করোনার শুরুটা আমাকে অনেক নাড়া দিয়েছিলো, যেমনটা হয়েছিলো রানা প্লাজা ধ্বংসের সময়। তাই করোনাকালীন সময়ে বিপদগ্রস্ত মানুষকে কিভাবে সাহায্য করা যায় সে চিন্তার শেষ ছিল না। ভাবলাম শুরুটা করা যাক একটি ছোট পদক্ষেপ নিয়ে। নিজের ইচ্ছায় এবং চেষ্টায় উদ্যোগ নিয়েছিলাম। উদ্যোগ নেওয়ার পরে এত বড় একটা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা সহজ ছিল না। তাই নিজে একটা টিম গঠন করে সিদ্ধান্ত নিলাম কিভাবে মাস্ক এবং সেনিটাইজার সংগ্রহ করা যায়। তখনই পরিচয় হয়ে যায় আলোকিত শিশু নামের একটি সংস্থার সাথে। যারা কিনা করোনার শুরু থেকেই মাস্ক এবং সেনিটাইজার নিয়ে কাজ করছিল। পরে ওই সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে মাস্ক এবং সেনিটাইজার নিয়ে এসে মিরপুরের বিভিন্ন আবাসিক এবং অনাবাসিক এরিয়ায় দেওয়া শুরু করি আমার টিমকে নিয়ে।’
 
‘তারপর আমি আগারগাঁও থেকে পরবর্তীতে মিরপুর এলাকায় দিনমজুরদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করি। প্রকল্পটির শুধু এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পরবর্তীতে এই কর্মসূচিটি পুরো ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তার করি। কাজ করি স্কুল শিক্ষক এবং প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য। কাজ করেছি শাকিল সাইদ ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট থেকেও। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েদের ক্ষেত্রে মাঠে নেমে স্বেচ্ছাসেবীর কাজে নিয়োজিত হওয়া কখনো সহজ না। পারিবারিক সম্মর্থন থাকলেও আশেপাশে ছিল অনেক বাঁধা। তবুও কাজ করে যাচ্ছি।’-এমনটাই বলেন এই তরুণ সেচ্ছাসেবী।

উল্লেখ্য, জীবনে মানুষের জন্য কিছু করাকে আনন্দের মনে করেন জান্নাত। ছোটবেলা থেকেই কারো কোনো বিপদ হলে কিংবা কোনো সমস্যা দেখলে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। তার পুরো নাম জান্নাতুল ফেরদৌস। ইডেন মহিলা কলেজে মাস্টার্স পড়ছেন। 
এসএ/